আজকের শিরোনাম :

শামীম আরা লুসি

নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ১২:৩৮

প্রতিবারই জাতিসংঘ এক একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে। এ দিবসের পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। মানুষ হিসেবে একজন নারী পরিপূর্ণ অধিকারের দাবিতে সুদীর্ঘকাল আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন ধারায় দেখা যায়, নারী কোন অংশেই পুরুষের পেছনে ছিল না। একটা সময় ছিলো নারী গৃহে অন্তরীণ ছিল। নানা কুসংস্কার ধর্মীয় গোঁড়ামির যাঁতাকলে নারী পিষ্ট হতো পারিবারিক ও সামাজিকভাবে। বর্তমানে দেশের নারীরা ক্ষমতায়ন ও সামাজিক সূচকে নিজেদের অবস্থানকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। তারা একদিকে যেমন অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, তেমনি সমাজের বিদ্যমান ধারণাকে বদলে দিয়ে নিজেদেরকে স্বনির্ভর হিসেবে প্রমাণ করেছে।

আমরা দেখছি কি গ্রাম, কি শহর সবখানে একেবারে ক্ষেত খামার থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী আজ বিচরণ করছে বীরদর্পে। শ্রম, নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর মেধা দিয়ে নারীরা পরিবারে সমাজে তথা রাষ্ট্রে অবদান রাখছে। নারীরা তাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে তুচ্ছ প্রমাণ করে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। তবে যখন সংসার জীবনে প্রবেশ করে সে ক্ষেত্রে সংসার ও চাকরি জীবন দুটির সঠিক সমন্বয় করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়। এর মাঝে সন্তান জন্ম দিয়ে দেখভাল করা, শ্বশুর বাড়ির নিয়মকানুন মেনে চলা একটা নারীকে কি পরিমাণ ভোগান্তি পেতে হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধৈর্য্য, নিষ্ঠা ও মানসিক শক্তি নিয়ে চাকরিজীবী নারীদের এ কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়।

নারী নির্যাতন একটি বহুজাতিক প্রত্যয়। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয় নারীরা। সারা বিশ্বে নারী সমাজ ঘরে বাইরে সবখানে নির্যাতিত। ধর্ষণ, পাচার, যৌন হয়রানি শব্দগুলো যেন নারীর জন্য তৈরি হয়েছে। পাচার হওয়া নারীদের দুর্ভোগ ও অবিশ্বাস্য কাহিনী শুনলে নারী হিসেবে নিজের সংকোচবোধ বেড়ে যায়। পাচারের পর নারীরা বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রি হয়ে যায়। আমাদের আর্থসামাজিক কাঠামো পুরুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় উত্তরাধিকার, আইন, পর্দাপ্রথা, সামাজিক মূল্যবোধ, যৌতুক প্রথা, বহুবিবাহ, কুসংস্কার প্রভৃতি নারী নির্যাতনের মূল কারণ। এছাড়া আরো একটি ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট কারণ হচ্ছে বর্তমানে পরকীয়া প্রেম। প্রতি মুহূর্তে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তার নেপথ্যের কারণ হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। এ প্রযুক্তির কারণেই ভাঙছে নারীর স্বপ্নের গড়া ২০/২৫ বছরের সংসার। গবেষকরা মনে করেন নারীর প্রতি সহিংসতা হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বিরাজ অসম ক্ষমতা সম্পর্কের বহি:প্রকাশ। যুগ যুগ ধরে নারী নিশ্চিতকারীর ভূমিকায় পুরুষ ছাড়াও কখনো কখনো নারীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। সংস্কৃতি আর ধর্মের সীমানা ডিঙিয়ে এই সহিংসতা নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণের অধিকার হরণ করেছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অশিক্ষিত, নিরক্ষর, এমনকি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীরা অবহেলিত, অত্যাচারিত এবং ঘোরতর অন্যায় অবিচারের নিগড়ে বন্দী। কিন্তু এটা সব ক্ষেত্রেই নয়। অনেক স্বামীর সহযোগিতায় অনেক নারীরা উন্নতির চরম শিখরে ও পৌঁছে গেছে। খুব কম ভাগ্যবান নারীরা হয়ত এ সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা বেশীর ভাগই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। তা হলো, অশিক্ষা, কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ ও ফতোয়ার মতো তুচ্ছ কারণে।

নারী নির্যাতন বন্ধে প্রথমেই সকলের উচিত নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা। আইনের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত করা। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন।

আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবার কারণে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কি করা প্রয়োজন, প্রচলিত আইনে তাদের কতটুকু অধিকার আছে সে সম্পর্কে তারা সচেতন নয়। এদের বিশাল একটা নারী গোষ্ঠী বঞ্চিত শিক্ষার আলো থেকে।

তবুও দেরীতে হলেও নিম্নবিত্ত নারী সমাজও বেরিয়ে এসেছে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে। দৈহিক শ্রম, দিন মজুরি, গার্মেন্টস ও কলকারখানায় চাকরি থেকে শুরু করে সকল কর্মক্ষেত্রে নারীরা নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বাসনায় নিরন্তন সাধনা করে যাচ্ছে। (দৈনিক আজাদী থেকে সংগৃহীত)

লেখক : সহ-সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

এই বিভাগের আরো সংবাদ