আজকের শিরোনাম :

তরুণ বন্ধুরা- তোমরা দেশ গড়ার রাজনীতি কর

  ফজলুল হক

০৪ মার্চ ২০১৯, ১৩:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

এক.
ভারতের একটি এয়ারপোর্টে কানেকটিং ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ফ্লাইট ঢিলে ছিল। এটা কয়েকদিন আগের কথা। লাউঞ্জের এক পাশে তাকালে খোলা আকাশ। বিশাল এরিয়া নিয়ে রানওয়ে। নানা জাতের এয়ারক্রাফ্ট উঠানামা করছে। আসলে এসব কিছু দেখার মতো। লাউঞ্জের অন্য পাশে চোখে পড়ার মতো একটি বুক স্টল। পাশে কফিশপ। ফার্স্ট ফুডের দোকান। যাত্রীরা চকোলেট, আইসক্রীম খাচ্ছে। আমি বুক স্টলের দিকে তাকাই, খুব সুন্দর করে থরে থরে বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কম বয়সী ও তরুণ যাত্রীরা ভিড় করছে বুক স্টলে। তারা বই বেছে নিচ্ছে। এক স্মার্ট ছেলে, আর এক সুন্দরী মেয়ে ঝটপট তাদেরকে বই প্যাক্ করে দিচ্ছে। আমার মন বিক্ষিপ্ত হলো। এই প্রথম দেখলাম, কফিশপ, ললিপপ, চকোলেট, আইসক্রিমের দোকানের তুলনায় বই এর দোকানে সেল্ বেশি হচ্ছে। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। আমার ছেলে আমাকে চোখে চোখে রেখেছে। বল্ল, কোথায় যাবে? আমি হাত তুলে বুক স্টলের দিকে ইংগিত করলাম, বল্লাম, এখানে নয়- ওখানে বসব। সে বল্ল, ওখানে বসতে দিবে? আমি বলি, চেষ্ঠা করে দেখি। দিন বদলেছে। মানুষ বই পড়ে। তবে যদি সে ভাল বই পায়।
আচ্ছা, আপনারা আমাকে বলুন, কেউ একজন যদি এসে বলে, এখানে “বঙ্গবন্ধু” এসেছেন, আমি নিজে উনাকে দেখেছি, তাহলে আমরা যারা এখানে বাঙালি আছি, আমরা কি করব? নন-বাঙালি যারা, তারা কি করবে? আমার তো মনে হয় সবাই ছুটবে- কোথায় সে গ্রেট লিডার? যদি কেউ একজন এসে বলে, টেগোর এখানে এসেছেন, আমি নিজে তাকে দেখে এসেছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- এখানে? সব ছুটবে, কোথায় গ্রেট পোয়েট? হায় আফসোস, প্রিয় পাঠক সবাই ছুটবে- হোক সে মারাঠী, রাজপুত, বিহারী, বা স্প্যানিশ। বাঙালিতো ছুটে যাবে বটেই। প্রিয় পাঠক পাঠিকা, এয়ারপোর্টের যে লাউঞ্জে আমি দাঁড়িয়ে আছি তার থেকে তিনগজ দূরে বুকস্টল, তার ভেতরে জওয়াহেরলাল নেহেরু আছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আছেন, জীবনানন্দ আছেন, শরৎ বাবু আছেন, নজরুল আছেন, আর্নেস্ট হেমিং ওয়ে আছেন, চার্চিল আছেন, জাঁ পল সার্ত্রে আছেন, মপাঁসা আছেন, চেখফ আছেন, সিমন দ্যা বুভেয়ার আছেন- কে নেই? আমি কি তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ না করে চলে যাব? যখন আমি “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” পাঠ করি, যখন “কারাগারের রোজ নামচা” পড়ি তখন আমি আত্মমগ্ন হয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলি। উনিও আমার সাথে কথা বলেন। বই- জীবিত-মৃতের মধ্যে কম্যুনিকেশন ঘটাতে পারে।
আমি এগিয়ে যাই। বই দেখতে শুরু করি। মেয়েটি এসে বলে, আমি তোমাকে কোন হেল্প করতে পারি? আমি বলি, আমি ম্যানেজমেন্ট ও লিডারশীপের উপর বই দেখতে চাই। তো, গাদা গাদা বই- স্টিভ জবস, বিল গেটস্, হ্যারল্ড কুঞ্জ, সিও ডোনেল, হেইঞ্জ ওয়েরিখ- বের হয়ে এলো। আমার ছেলে নর্থ সাউথ থেকে পাস করেছে, সে বের করল ইতিহাসের বই। The puffin history of India vol-১, vol-২ ইত্যাদি। এধরনের অনেক লেখকের বই এলো। Roshen Dalal ইতিহাসের বই এর লেখিকা। “রিলিজিয়ানস অফ ইন্ডিয়া” “The puffin History of India, “হিন্দুইজম এন এলফাব্যাটিক্যাল গাইড” “দ্যা ইলাষ্ট্রেটেড টাইম লাইন হিস্টোরী অফ দ্যা ওয়ালর্ড” “এ কনসাইজ গাইড টু নাইন মেজর ফেইথস্” “The puffin history of India, এত সব বই নেড়েচেড়ে দেখি। জড়ংযবহ এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্টোরী নিয়ে পিএইচডি করেছেন জওয়াহের লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার বাবার নাম জামসেদ দাল্লাল। এই লেখকদের একটা জিনিষ ভাল লেগেছে। তারা তাদের দেশকে ভালবাসে। তাদের জাতির জনক মহাত্মাজীকে ভালবাসে। তারা কথায় কথায় বলেন, ইন্ডিয়া- এনসিয়েন্ট, ইটারনেল এবং এভারনিউ। তাদের দেশ ভারত, প্রাচীন সভ্যতার দেশ, তারা চিরজীবী, তারা চির সুন্দর। আমাদের লেখক কবিগন আমাদের বাংলাদেশকে ব্রান্ডিং করেন। আমরা লিখব- বাংলাদেশ চিরজীবী, চির সুন্দর এবং হাজার বছরের ঐতিহ্যের দেশ। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি। শ্রেষ্ট নেতা। আমি ২০০৬ সালে একটা বই লিখেছিলাম, “মিরাকল বাংলাদেশ।” বাংলাদেশ চমক দেখাতে পারে। চমক দেখাচ্ছে।

দুই
The puffin history of India-২ পৃষ্ঠা ৫০ এ “বিল্ডিং এ নিউ কান্ট্রি” নামে একটা অধ্যায় আছে। কিভাবে একটা দেশের জন্ম হয়েছে এবং কি ভাবে একটা দেশকে গড়ে তোলা হয়? এ বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের হার্ডকোর কর্মীদের শেখাতে পারেন। প্রশিক্ষন ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারেন।একজন রাজনৈতিক নেতা যত ইতিহাস ও মানবিক বোধ নিয়ে লেখাপড়া করবেন ওয়ার্কপ্লেস- ইফিসিয়েন্সির কথা কর্মীদের বলবেন, রাজনীতির গুনগত মান তত বাড়বে। দু গ্রুপের মারামারির নাম রাজনীতি নয়। জনগণকে জিম্মি করা রাজনীতি নয়।
ইতিহাস থেকে- ১৯৪৭ সালে ভারতীয় রাজনীতি ও পাকিস্তানের জনক জিন্নাহর (মুসলিম লীগের) রাজনীতির বিষয়ে দু-একটা কথা বলি।
ইন্ডিয়া তখন স্বাধীন হয়েছে। পাকিস্তান ও স্বাধীন হয়েছে। নতুন দেশ দুটিকে কে দেখবে? কে সদ্য জন্ম নেয়া দেশের সমস্যার সমাধান করবে? কে দেশ দুটির আইন বানাবে? সংগত ভাবেই এসব প্রশ্ন দেখা দিল। ইতিহাস সাক্ষী- নেহেরু, প্যাটেল, বলদেব সিং কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন আর জিন্নাহ, লিয়াকত আলী কি কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সেটা এখন মুল্যায়িত হচ্ছে। ইতিহাস- মানুষকে চালায়।
১৯৪৭ সালেই ভারতের নেতারা ভাবলেন সদ্য স্বাধীন ভারতে একটি শাসনতন্ত্র দরকার। যে শাসনতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে ভারতের ভবিষ্যত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠবে। তো, দরকার একটা কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলি। যারা নতুন শাসনতন্ত্র বানাবে। তো তারা সেটা গঠন করে। ভারতের প্রথম কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলির প্রথম বৈঠক বসেছিল ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬ সাল (তখন স্বাধীনতার কথাবার্তা চূড়ান্ত হচ্ছে।) সদস্যরা লেজিসলেসিব এসেম্বলি দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন কমিউনিটির প্রতিনিধিও এতে ছিল। ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ২টা এসেম্বলি করা হয়েছিল দুই দেশের জন্য। ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্টের পর কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলি আইন প্রণয়নকারী লেজিসলেচার হিসেবে কাজ করতে থাকে- এবং আইন প্রণয়ন করতে থাকে। একই সাথে তারা শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ ও করতে থাকে।
তখন পাকিস্তানের ও ভারতীয় রাজনৈতিক নেতারা ভাবলেন, কিছু সময়ের জন্য লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনকে ভারত ও পাকিস্তানের সরকারে গভর্নর জেনারেল পদে রেখে দিলে রাষ্ট্র পরিচালনার ধারাবাহিকতা ও ব্রিটিশদের কাছ থেকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজ হবে। দুই দেশ স্বাধীন হল- কিছুদিন মাউন্ট ব্যাটেন ভারত ও পাক সরকারে সিম্বলিক গভর্নর হিসাবে থাকবেন। উনাদের ধারণা, এতে অতীত ও বর্তমানের সাথে গ্যাপ তৈরী হবেনা। সব চাইতে বড় যুক্তি ছিল, ভারত ও পাকিস্তান আলাদা হবে, ভাগ বাটোয়ারার কাজ সুন্দর ভাবে একত্র থেকে সুসম্পন্ন করা যাবে। তাই প্রস্তাব ছিল কিছুদিন মাউন্ট ব্যাটেন দুই দেশের গভর্ণর জেনারেল থাকুক। ভারতের কংগ্রেস নেতারা এই ধারণাকে সমর্থন দিলেন। মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথমে এই ধারনার প্রতি সমর্থন দেন। পরে মত পরিবর্তন করেন। ভারত মাউন্ট ব্যাটেনকে অনুরোধ করে ১৫ আগস্টের পর আপনি কিছু সময় ভারতের গভর্ণর জেনারেলের দায়িত্ব নেন। ১৯৪৭ এর ১৪ আগস্ট লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন করাচী শহরে যান- সদ্য স্বাধীন পাকিস্তান সরকার এর কাজ শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। জিন্নাহ নিজে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের পদে বসেন। লিয়াকত আলী খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট করাচীতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার কাজ শুরু করে। মাউন্ট ব্যাটন দিল্লীতে ফিরে আসেন। বৃটিশের ২০০ বছরের শাসন সমাপ্ত হয়।
১৫ আগস্ট ১৯৪৭ রাত ১২-২০ মিনিটে ভারতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য দলের নেতারা আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ জানালেন, আপনি আরো কিছুদিন ভারতের গভর্নর জেনারেল থেকে যান। নতুন স্বাধীন ভারতের গভর্নর জেনারেল হলেন মাউন্ট ব্যাঠেন।

তখন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ছিলেন ভারতের কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলির প্রেসিডেন্ট। প্রস্তাবটি তিনি করেছিলেন সকলের পক্ষ থেকে। জওয়াহের লাল নেহেরু ও এর প্রস্তাবক ছিলেন। পরের দিন এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে লর্ড মাউন্ট ব্যাঠেন বলেছিলেন, “আজ থেকে আমি আপনাদের শাসনতান্ত্রিক গভর্নর জেনারেল। আমি আপনাদেরকে বলব, আপনারা আমাকে আপনাদের একজন ভাববেন। বাইরের লোক ভাববেন না। আমি ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেকে পুরোপুরি ভাবে নিয়োজিত করব।” অবাক কাণ্ড, ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের ম্যাচুরিটি দেখুন- গতকাল সে (মাউন্ট ব্যাটেন) ভারত পাকিস্তনের দখলদার শাসক ছিল। আজ সে বলছে, আমি ভারতের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করব। আমি তোমাদেরই লোক।
জওয়াহেরলাল নেহেরু হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি মন্ত্রিসভা বানালেন। সর্দার প্যাটেল হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সর্দার বলদেব সিং হলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। ১৮৮৯ সালে নেহেরু জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মতিলাল নেহেরু। তিনি ভারতের স্বাধীনতা যোদ্ধা ছিলেন। তিনি বিলাতে আইন অধ্যয়ন করে আইনজীবী হন। আইন পেশায় ঢোকেন। ১৯১২ সালে এলাহাবাদে তিনি প্র্যাকটিস শুরু করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর সাথে দেখা করেন। গান্ধীর প্রভাবে আইন পেশা ছেড়ে ভারতীয় রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি গান্ধীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের এক প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন তিনি। তখন স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল। এ সময় নেহেরুর পিতা মাতা ও স্ত্রী মারা যান। উনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি সে সময় ৯ বছর বৃটিশদের জেলে ছিলেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর মহাত্মাগান্ধী ভেবেছিলেন, নেহেরু ভারতকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যোগ্যতম নেতা।
বল্লভ ভাই প্যাটেল ছিলেন গুজরাটের মানুষ। ১৮৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর তার জন্ম। বিলাতে আইন পড়ার পর আহমেদাবাদে প্র্যাকটিস শুরু করেন। সময়টা ছিল ১৯১৩ সাল। ১৯১৬ সালে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সাথে দেখা করেন। আইন পেশা ছেড়ে তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন।১৯২৮ সালে তিনি কৃষকদের সংগঠিত করে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। মহাত্মাজী তাকে সর্দার (নেতা) উপাধি দেন। প্যাটেল বহুবার কারা বরণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতের অন্তর্র্বতী সরকারে সদস্য হন।
৪৭ সালে ভারতে নতুন সরকার গঠিত হলেও সব কিছু নতুন ছিল না। অনেক প্রশাসনিক কাঠামো ঔপনিবেশিক আমল থেকে এসেছিল। নেহেরু স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ইন্টিরিম সরকারে ছিলেন। এটা ৪৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য করা হয়েছিল। ১৯৪৬ এর গণভোটের পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস, ইন্ডিয়ান পুলিশ, ইন্ডিয়ান আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স- এসব সংস্থা আগে থেকেই ছিল। তবে ভারত পাকিস্তান ভাগের কারণে এখানে প্রভাব পড়েছিল। কিছু ব্রিটিশ অফিসার এসবে উচ্চপদে ছিলে। কিছুদিন এভাবে চলেছে। রাজ্য সিভিল সার্ভিসে সব পদে ভারতীয়রা ছিলেন। জুডিসিয়ারী আগে থেকেই ছিল। কিছু আইন আগে থেকেই ছিল। সরকারের কাঠামো হঠাৎ করে উলট পালট হয়নি। নতুন ভারতীয় শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক গতিতে এগোয়। অতীতকে রাতারাতি উল্টে দেয়া হয়নি। কিন্তু পাকিস্তানে একটি শাসনতন্ত্র পেতে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতারা মুসলিম লীগের সাথে থাকতে পারেননি। মুসলিম লীগ জন-বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে।
নেহেরুর নেতৃত্বে নতুন ভারত সরকার নতুন কিছু করতে শুরু করে। তখন ভারত শাসিত হচ্ছে ভারতীয় দ্বারা। এটাই বড় পরিবর্তন। ভারতের ভবিষ্যত নীতি ভারতীয়রা নির্ধারণ করছে। মাউন্ট ব্যাটেন গভর্নর জেনারেল হলেও তার আগের সে ক্ষমতা ছিল না। সিংহ ছিল। কিন্তু তার দাঁত ছিল না। নেহেরু লিখেছেন, “ঞযবৎব ধিং হড় ৎধংঃরহম ভড়ৎ ধহু ড়হব ড়ভ ঁং,” ভারত ও পাকিস্তানের সামনে একটাই পথ ছিল, বিচক্ষণতার সাথে সামনে এগুনো।
তিন
পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। বৃটিশ থেকে বেরিয়ে আসার পর জিন্নাহ ও লিয়াকত আলীর রাজনীতি গতিশীল ছিল না। বিল্ডিং এ নিউ কান্ট্রি- নতুন এক দেশ গড়ার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানী অনুচররা কেবল বাধা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে বলার আছে- আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তোমরা বুঝতে শেখ- এবাউট বিল্ডিং এ নিউ কান্ট্রি। রাজনীতি করা মানে, মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করার কৌশল বের করা- তোমরা তা করছ? বন্ধুরা, তোমরা দেশ গড়ার রাজনীতি কর। (দৈনিক আজাদী থেকে নেয়া)

লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

এই বিভাগের আরো সংবাদ