আজকের শিরোনাম :

ইতিহাস বিকৃতি!

  ডা. মুহাম্মদ আলী মানিক

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

চ্যানেল আইয়ে ‘বই মেলা থেকে সরাসরি’ অনুষ্ঠানটি দেখছিলাম । চেম্বার থেকে বাসায় এসে ভাষার মাসে এই অনুষ্ঠানটি দেখা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । সে দিনের অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন খ্যাতিমান শিশু সাহিত্যিক, টিভি প্রযোজক, পরিচালক আলী ইমাম। তার সাবলীল উপাস্থপনা অন্য সবার মত আমার ও ভালো লাগে। অমর একুশের তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি স্বাধীনতার ইতিহাস টেনে আনলেন। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি স্বাধীনতার ইতিহাস টানলে ভাষা আন্দোলন আসবেই। কেননা বায়ান্নোর রক্তমাখা পথ বেয়েই তো একাত্তরে মুক্তি এসেছিল বাংলার।

সে দিন আলী ইমাম ভাষা আন্দোলনের সাথে আরো কিছু আন্দোলনের কথা বললেন যা আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িত। তিনি ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কথা, ১৯৫৭ এ কাগমারি সম্মেলন, ১৯৬২-এ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৯-এর ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন, ’৭০-এর নির্বাচন এর পর ’৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা বললেন, বাদ দিলেন বাঙালির বাঁচার দাবি, স্বায়ত্তশাসনের দাবি ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলনের কথা! অথচ এই ৬ দফা ছিল স্বাধিকার আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ।

ভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হওয়ার পর বাঙালিদের ওপর পাঞ্জাবিদের শোষণ কিন্তু থেমে যায়নি , বরং শোষণ নির্যাতন আরো বেড়ে গিয়েছিল। বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হলেও জাতীয় সংগীত ছিল উর্দুতে, সম্মামনা পুরস্কার যেমন নিশানে পাকিস্তান  হিলালে জুড়াত সবই ছিল উর্দুতে। এই শোষণ নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাঞ্জাবিদের নাকের ডোগায় লাহোরে সাংবাদিক সম্মেলন করে ৬ দফার ঘোষণা দিয়েছিলেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সারা বাংলায় ৬ দফা অতি অল্প সময়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে বাঙালির বাঁচার দাবিতে পরিণত হলে স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহী দিশেহারা হয়ে পরে! বঙ্গবন্ধুকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার জন্য তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দাঁড় করিয়েছিলো । কিন্তু ছাত্র জনতার দুর্বার আন্দোলনে ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতন হয় আর বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে বীরের বেশে ফিরে আসেন মুক্তিকামী জনতার মাঝে। আর তার পরের ইতিহাসতো সবারই জানা। অর্থাৎ ৬ দফার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, সেই মামলার জন্য ’৬৯-এর গণআন্দোলন, গণআন্দোলনের জন্য ’৭০-এর নির্বাচন আর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য বাঙালির ’৭১-এ স্বাধীনতা অর্জন ।

যেহেতু ৬ দফা আন্দোলন ছিল বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগের নিজস্ব ফ্রাঞ্চাইজ আন্দোলন তাই আলী ইমামদের মত ‘চৈনিক বামপন্থীরা’ ঈর্ষান্বিত হয়ে ইচ্ছে করেই এই আন্দোলনের কথা চেপে যাচ্ছে । ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর থেকেই ’৬৬-এর ৬ দফাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে  যারা করছে সেই সুশীলরাই স্বাধীনতার পুরস্কার পাচ্ছে! এই লজ্জা রাখি কোথায় ?

লেখক : সহসভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

এই বিভাগের আরো সংবাদ