আজকের শিরোনাম :

লক্ষ্য ২০৩০ প্রস্তুতি এখনি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০১৮, ১৬:৩২

শামসুদ্দীন শিশির, ২৯ মে, এবিনিউজ : কারিগরি শিক্ষা আন্দোলন দিন দিন বেগবান হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে নীতি নির্ধারকদের বোধোদয় হয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ, দিবে অর্থ, দিবে মান। কারিগরি শিক্ষা নিলে, চাকরি অর্থ দুই–ই মিলে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় জন গোষ্ঠীকে জন সম্পদে রূপান্তরিত করার একমাত্র উপায় মান ঠিক রেখে বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো। সরকার কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের দেশে সরকারি পর্যায়ে একটি টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ০৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ০১টি ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ৪১৩টি, বেসরকারি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ৫৭৩টি, এস.এস.সি ভোকেশনাল ২২৩০টি দাখিল ভোকেশনাল ২৮৫ টি, এইচ এস সি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ১৮১৫টি ন্যাশনাল স্কিল স্যান্টার্ড, ১৮৯৪টি, ছয় মাস মেয়াদী এক এবং দুই বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা স্তরের প্রতিষ্ঠান ২৬টি সার্টিফিকেট লেভেল ইনস্টিটিউশন ১৮৯টি মোট ৭,৪২৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, সারাদেশে মেয়েদের জন্য ০৫টি পলিটেকনিক রয়েছে। ২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরের ১২০৩টি ডিপ্লোমা স্তরের ৩,০১,৯৬৪টি, এস এস সি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল স্তরের ২,৯৫,৩৪৯টি। এইচ এস সি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এবং এইচ এস সি ভোকেশনাল ২,৬৬,১০৫টি বেসিক ট্রেড ১,৯২,৪৮৯।

বর্তমানে সরকার কারিগরি শিক্ষা ১৪ শতাংশের বেশি ভর্তির হার নিশ্চিত করেছে। ২০২০ সাল নাগাদ এ হার ২০ শতাংশ ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার প্রত্যাশা নিয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রয়োজন জন সচেতনতা জনগণ যখনই বুঝবে আত্ম নির্ভরশীল হওয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। তখনই ছেলে মেয়েদেরকে প্রযুক্তির শিক্ষা ও হাতে কলমে শিক্ষার দিকে ধাবিত করবে। তবে আমার মনে হয় সেদিন চলে এসেছে। পেছনে ফেরার সময় আর নেই। আজই সিদ্ধান্ত নিন কী করবেন। তাত্ত্বিক শিক্ষা এক ঝাঁক তারুণ্যকে শুধু বেকার সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে শেখায়। হতাশায় নিমজ্জিত হতে শেখায় আত্ম–হননের পথ বেছে নিতে শেখায়। আমরা কী চাই ? আমাদের ফুটন্ত ফুল গুলো মুকুলেই ঝরে যাক! ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের আমাদের এই ছোট্ট সুন্দর দেশটি। ১৬ কোটিরও বেশি জন সংখ্যার এদেশে জন সংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৬ ভাগ।

গড় বয়স একাত্তর বছর। ইউনেস্কোর হিসেব মতে শিক্ষিতের হার ৬১.৫% ভাগ। দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে শতকরা ২০ ভাগ মানুষ। বার্ষিক উন্নয়ন হার ৭.২%। প্রতি জনে পার ক্যাপটিকা ইনকাম ১৬০০ ডলার ২০১৭ সমীক্ষা মতে। আমাদের দেশ সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। এ অর্জন একা কারো নয়। আমার, আপনার সকলের। আমার দেশের খেটে খাওয়া মানুষটি থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত এ অর্জনের জন্য শ্রম ঘাম ব্যয় করেছেন। তাই ঐ অর্জন আমাদের এটা ধরে রাখার উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টাও আমাদেরই রাখতে হবে। কিন্তু কীভাবে? আমাদের দেশে ২০১৫ সালে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ছিল ৬৬% ২০৩০ সালে হবে ৭০% ভাগ কর্মক্ষম যুবজন শক্তিকে কর্মীর হাতে পরিণত করা। এত অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক খুব জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম জন সম্পদে রূপান্তরিত করার একমাত্র এবং অন্যতম পথ হলো কারিগরি ও প্রযুক্তির শিক্ষা। আমরা ঘুরে না দাঁড়ালে আগামী এক’শ বছর পিছিয়ে যাবো। ২০৫০ সালে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো না। এর দায়ভার আমাদেরকেই বহন করতে হবে।

১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত অনুন্নত দেশটির মাত্র ১.৮% জন গোষ্ঠী কারিগরি শিক্ষা লাভ করার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল ২০১৭ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হতে ১৪% শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড তালিকাভুক্ত করে। এই হার ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০% উন্নীত করার প্রত্যাশা কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ।

পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ গুলোর মধ্যে জার্মানী প্রথম তারপর চীন, সাউথ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া তারপর বাংলাদেশ। যে দেশে কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়। যে দেশে স্রষ্টার উপহার মানুষের সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। সে দেশের মানুষের সন্তানরা যুব জনগোষ্ঠী, কর্মক্ষম, স্বাপ্নিক, লক্ষ্য অর্জনে অবিচল। সে দেশ কেন সবার নিচে থাকবে?

উদ্যোগ নিতে হবে সচেতনতা সৃষ্টির সমাজের সকল স্তরের ছেলে মেয়েদের মধ্যে এ বার্তা পৌঁছাতে হবে তোমরা পরিবার সমাজ ও দেশের বোঝা হবে না। বরং বোঝা লাঘব করবে তোমাদের কর্মশক্তি দিয়ে। সে জন্য তোমরা প্রস্তুত হও। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছো সরকার ও বিশ্বব্যাংক এ খাতে প্রচুর সাহায্য করছে। ছেলে মেয়ে উভয়ের হাতে কলমে শিক্ষা লাভের প্রযোজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করছে। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করছে। অতএব তোমরা যারা এস.এস.সি উত্তীর্ণ হয়েছো নি:সংকোচিত্তে কারিগরি ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যাও। চার বছরের মধ্যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বেরিয়ে যাও। মা–বাবা সমাজ ও দেশের সুনাম বাড়িয়ে দাও। দেশ– বিদেশে কর্মে নিয়োজিত হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠো মনে রেখো তোমার ভার কেউ বইবে না, তোমাকেই বইতে হবে। এখানে উল্লেখ্য এইচ.এস.সি পাস করে যায় পলিটেকনিক–এ ভর্তি হতে যাও তাদের দুটো সেমিষ্টার পড়তে হবে না। তোমরা সরাসরি তৃতীয় সেমিষ্টারে ভর্তি হতে পারবে। তোমাদের জন্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন। শ্রদ্ধেয় মা–বাবা প্রিয় শিক্ষক সচেতন সমাজ কারিগরি শিক্ষার ভবিষৎ সম্পর্কে নিজে জানুন, অপর কে জানান। সময় এখনই।  

লেখক : প্রাবন্ধিক; শিক্ষক, বি এড কলেজ, চট্টগ্রাম।
(সংগৃহীত)

এই বিভাগের আরো সংবাদ