আজকের শিরোনাম :

অবৈধ ইট ভাটাগুলো ধ্বংস করছে পরিবেশ, এখনই লাগাম টেনে ধরা উচিত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪১

হৃদয় দেবনাথ : বেশি মুনাফার আশায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠছে একের পর এক ভাট, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ধ্বংস হচ্ছে,ইট ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে বন উজাড় করে আনা মূল্যবান বৃক্ষ তোয়াক্কা করছেন না সরকারি নিয়মনীতির।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুরে ফসলি জমি ধ্বংস করে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা। পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে এসব ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি বনাঞ্চল ও মূল্যবান গাছ।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করছে কর্তৃপক্ষ। পাহাড় এবং ফসলি জমি কাটার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কর্ণপাত করছেন না কোনও ইট ভাটার মালিক। মিরপুর বাজার সংলগ্ন এবং পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের গ্রামের ফসলি জমিতে নতুন করে একের পর এক গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। স্থানীয় প্রশাসনও এসব ব্যাপারে চুপ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনকে বারবার এই বিষয়ে অবগত করলে ও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিভিন্ন পাহাড়-ফসলি জমি কেটে প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া বেশিরভাগ ইটের ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কম উচ্চতার টিনের ছিমনি। ইট ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

কয়লা দিয়ে এসব ইটভাটা গুলোতে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও খরচ সাশ্রয়ের জন্য সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্ভয়ে প্রকাশ্যেই এসব ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বন থেকে পাচার করে নিয়ে আসা মূল্যবান হচ্ছে শিশু বৃক্ষ। অনেকে গোপনে অবৈধভাবে শিশু কাঠ মজুদ করে চালিয়ে যাচ্ছে এ সমস্ত কার্যক্রম। এভাবে চলতে থাকলে দ্রুতই পার্শ্ববর্তী বনভূমি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম।

তিনি বলেন, ফসলি জমি এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের মাটি এমনকি বন উজাড় করে শিশু গাছ পাচার করে নিয়ে লুকিয়ে এনে সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইট ভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে। অনেকেরই নেই কোনো বৈধ লাইসেন্স। ইট ভাটার কাছাকাছি বাচ্চাদের কয়েকটি স্কুল এবং হাই স্কুল এবং কলেজ রয়েছে। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীরা এই ইটের ভাটার ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ইটের ভাটার কারণে পার্শ্ববর্তী অনেক জমিতেই এখন আর ফসল হয়না। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ইটভাটার বেআইনি কাজ বন্ধে প্রশাসন সবসময় তৎপর। যে কয়টি পুরনো আছে সেগুলোকে আগামী এক মাসের মধ্যে বিধি মেনে চলতে বলা হবে। আর নতুনদের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবে এর ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিশু গাছ পোড়ানো, ফসলি জমির মাটি ব্যবহার এবং সরকারী জায়গায় ইট ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান,ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে ইট ভাটার অনিয়ম রোধে কাজ করার নির্দেশনা এসেছে। আগামী ত্রিশ দিনের মধ্যে ওই এলাকার প্রতিটি ইটভাটায় আমরা এ কার্যক্রম চালাবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহির বিন আলম জানান,সরকারি আইনে স্পষ্ট বলা আছে কোনো রেসিডেন্সিয়াল (আবাসিক) এলাকায় ইট ভাটা থাকতে পারবেনা আর শিশুদের বিদ্যালয়ের পাশে তো প্রশ্নই ওঠেনা। ইটভাটার ডিজাইন করতে হলে একশো বিশ ফিট চুল্লি হতে হবে।

আর এই চুল্লি যদি একশো বিশ ফিট উচ্চতায় না হয় তবে কার্বনডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড (এসপিম) মানে ধূলিকণা বাচ্চাদের স্নায়ু তন্ত্রে প্রবেশ করে শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রচণ্ড ক্ষতি করবে। যদি ঐ এলাকায় গাছ-গাছালি থাকে তবে তা নষ্ট হয়ে যাবে। আর ইটভাটার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তা গাছপালার গ্রোথ একেবারেই নষ্ট করে দেয়। পাশাপাশি জমির উর্বরতা একেবারেই নষ্ট করে দেয় ফলে আশেপাশের জমিতে ফসলাদি হবেনা। এই ইটভাটার ধোঁয়া শর্ট টাইম অথবা লংটাইম যতটুকু সময়ই থাকবে তা বাচ্চাদের নিঃশ্বাসে প্রবেশ তাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর ইমপ্যাক্ট ফেলবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর টিএইচও ডাক্তার জয়নাল আবেদীন টিটু জানান, ইট ভাটায় যদি ধোঁয়ার পরিমাণ বেশি হয় তবে শ্বাসপ্রশ্বাস এ সমস্যা দেখা দেবে। সেই ধোঁয়ার পরিমাণটা আবার যদি দীর্ঘদিনের জন্য চলতে থাকে আর ধোঁয়াটা যদি কালো ধোঁয়া হয় তবে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধোঁয়ার পরিমাণ কম হলেও শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পরিবেশকে রক্ষা করতে এখনই এসব ইটভাটাকে নিয়ম নীতির মধ্যে নিয়ে আসা জরুরি!

লেখক : সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

এবিএন/হৃদয় দেবনাথ/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ