আজকের শিরোনাম :

আমি চির উন্নত শির

  আবদুল মান্নান

১০ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪০ | আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ

আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন, দিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। ঠিক এমন একটি দেশের জন্য তিনি পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ বছর পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দুইবার। একবার ১৯৬৮ সালে, যখন তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত করা হয় তখন আর দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণে। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন বাঙালি নিধনের প্রথম পর্ব শুরু করে, শুরুতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এর এক দিন পর একটি বিশেষ বিমানে করে তাঁকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক বেতার ও টিভি ভাষণে একাত্তরের মার্চ মাসের ৩ তারিখ অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলার শাসনভার কিভাবে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আওতায় চলে আসে, তা তাঁর মতো করে বর্ণনা করেন এবং বলেন, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের নামে শুধু অরাজকতাই সৃষ্টি করেনি, তারা পাকিস্তানের জাতির জনক জিন্নাহর ছবিকেই অপমান করেছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। ইয়াহিয়া আরো ঘোষণা করেন, এসব অপরাধ ক্ষমা করা হবে না (This crime shall not go unpunished)| নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।

পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় করাচি বিমানবন্দরে সোফায় বসা অবস্থার একটি ছবি ছাড়া বঙ্গবন্ধুর আর কোনো ছবি দীর্ঘ ৯ মাস প্রকাশিত হয়নি। দীর্ঘদিন বিশ্বের কাছে পরিষ্কার ছিল না বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন, নাকি তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। আগস্ট মাসে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে, তারা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে বঙ্গবন্ধুর বিচার করার প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালি কারাগারে, শহরের কিছু দূরে। বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে লায়লাপুর কারাগারে রাখা হয়। এরপর তাঁকে মিয়ানওয়ালি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ভারতের গুপ্তচর মোহনলাল ভাস্কর পাকিস্তানি পুলিশের হাতে বন্দি হয়ে একসময় মিয়ানওয়ালি কারাগারে আটক ছিলেন। দীর্ঘ কারাভোগের পর মোহনলাল ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পান। মুক্তিলাভের পর তিনি ভারতে ফিরে তাঁর কারাজীবন নিয়ে ‘An Indian Spy In Pakistan’ শিরোনামে ২০০৩ সালে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘একরাতে আমাদের কারাগারের ভেতর একটি হেলিকপ্টার অবতরণের শব্দ শুনতে পাই। যেহেতু তখন আমরা সেলের ভেতর আটক ছিলাম, হেলিকপ্টারটি দেখার সুযোগ ছিল না। সকালবেলায় শুনি, আমাদের কারাগারে শেখ মুজিবকে লায়লাপুর কারাগার থেকে আনা হয়েছে। আমরা আরো শুনেছি, লায়লাপুর কারাগারে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু বন্দি সৈনিক শেখ মুজিবকে মুক্ত করার জন্য একটি সুড়ঙ্গ কেটেছিল; কিন্তু তারা ধরা পড়ে যায়। সে কারণেই শেখ মুজিবকে এই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। শেখ মুজিবকে রাখা হয় মহিলা ওয়ার্ডে। মহিলা ওয়ার্ড আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল। জেল সুপার ছিলেন চৌধুরী নিসার।

 তিনি এসে জানান, শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে।’ মোহনলাল আরো লিখেছেন, ‘এটা জেনে ভালো লাগল যে আমাদের কারাগারে একজন নায়ক এসেছেন, যিনি বাংলার সিংহ নামে পরিচিত। গুজব ছিল যে তাঁর পরিবারের সবাইকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। একমাত্র বেঁচে আছেন তাঁর বড় কন্যা শেখ হাসিনা। একদিন ডেপুটি সুপার ফাজালদাদ আমিসহ আটজন ভারতীয় বন্দিকে শেখ মুজিবের সেলের সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা শেখ মুজিবকে দেখতে পাইনি। কারণ তাঁর সেলের সামনের অংশ কাঠের দরজা দিয়ে বন্ধ করা ছিল। আমাদের বলা হলো, আট ফুট লম্বা আর চার ফুট চওড়া একটি গর্ত খুঁড়তে। সেই রাতে শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেওয়া হবে। এরপর তাঁকে এই গর্তে কবর দেওয়া হবে। সকাল ৯টা নাগাদ কবর খোঁড়া হয়ে গেল। আমরা রাতে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম শেখ মুজিবের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, তা শোনার জন্য। কিন্তু সকালে খবর পেলাম, সেই রাতে মুজিবকে ফাঁসি দেওয়া হয়নি। পরে এক গুজবে শুনেছি, ফাঁসির প্রস্তুতি যখন চলছিল, ভুট্টো ইয়াহিয়ার সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁকে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সৈনিক কর্মরত আছে। মুজিবের ফাঁসির খবর সেখানে পৌঁছলে বাঙালিরা তাদের একজনকেও জীবিত রাখবে না।’ মোহনলাল ভাস্কর আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘এখন পর্যন্ত মিয়ানওয়ালি কারাগারের ভেতরে শেখ মুজিবের সেসব স্মৃতি আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। তবে যেটা আক্ষেপের বিষয়, তা হচ্ছে—তাঁকে তাঁর শত্রুরা হত্যা করেনি। তিনি নিহত হয়েছেন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের হাতে, নিহত হয়েছেন তাদের হাতে, যাদের তিনি নিজের সন্তানের মতো দেখতেন। (Mujib was assassinated along with his entire family at the hand of Ziaur Rahman, the chief of the Bangladesh army. Even now the days that Sheikh Mujib spent in the Mianwali Jail keep haunting me. Time and again they would prepare the noose for his neck and dig a grave to receive his lifeless body. But he did not die at the hands of his enemies. He died at the hands of his own people whom he called his children.) কারাগারে যখন বঙ্গবন্ধুর বিচার চলছিল তখন তাঁকে অনেকবার মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়। প্রলোভন দেখানো হয় অনেক। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কখনো তাঁর আদর্শ আর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। সব সময় মাথা উঁচু করে বলেছেন, তিনি আদর্শ আর সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সঙ্গে বেইমানি করতে পারবেন না। এর কিছুদিন পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ২৬শে মার্চ শুরু হওয়া যুদ্ধ পূর্ব বাংলায় ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তখনো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ জানে না তাদের প্রিয় নেতা বেঁচে আছেন কি না। ২২ ডিসেম্বর পরাজিত ইয়াহিয়া পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কয়েক দিন পর ভুট্টোর নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে সিহালার একটি অতিথি ভবনে স্থানান্তর করা হয়। এরপর কয়েক দিন ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর কাছে পাকিস্তানকে এক রাখার জন্য অনেক অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে পরিষ্কার বলে দেন, তিনি তাঁর দেশের মানুষের সঙ্গে কথা না বলে কোনো অঙ্গীকার করবেন না। বঙ্গবন্ধু ঠিক জানতেন না, গত ৯ মাসে বাংলাদেশে কী ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পিআইএর একটি বিশেষ বিমান লন্ডনের উদ্দেশে রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়। ক্লান্ত বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছেন পরদিন সকালে। ব্রিটিশ সরকার বিমান অবতরণের ঠিক আগমুহূর্তে জানতে পারে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পিআইএর একটি বিমান হিথরোতে অবতরণ করবে। ব্রিটিশ ফরেন অফিসের সিনিয়র অফিসার ইয়ান সাদারল্যান্ড ব্রিটেনে অবস্থানরত সিনিয়র বাঙালি কূটনীতিক এম এম রেজাউল করিমকে বঙ্গবন্ধুর আগমনের সংবাদটি দেন। রেজাউল করিম আরো দুজন বাঙালি কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ ও মহিউদ্দিন জোয়ারদারকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হিথরো বিমানবন্দরে রিসিভ করে লন্ডনের বিখ্যাত ক্লেরিজেস হোটেলে নিয়ে আসেন। ইয়ান সাদারল্যান্ডও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। আসতে আসতে তিনি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শুনে বিচলিত হয়ে পড়েন। সেদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে তাঁর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। একই দিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতা হ্যারল্ড উইলসনের সঙ্গে কথা বলেন। হোটেল থেকে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। ইন্দিরা গান্ধীকে তিনি বাঙালির দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর কৃতজ্ঞতা জানান। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। তিনি তাঁদের মাধ্যমে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

৯ তারিখ রাতে রয়াল ব্রিটিশ এয়ারফোর্সের একটি বিশেষ বিমানে তিনি লন্ডন ত্যাগ করেন। পরদিন কনকনে শীতে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে জ্বালানি নিতে অবতরণ করে। বঙ্গবন্ধু তখনো রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, এমনকি সংসদ সদস্য হিসেবেও শপথ নেননি। আভিধানিক অর্থে তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। তবে তিনি তো তত দিনে বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে। তিনি বাংলার বন্ধু। বঙ্গবন্ধু। তাঁকে রিসিভ করতে সব প্রটোকল ভেঙে সেই সকালে বিমানবন্দরে ছুটে আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি আর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাঁরা বাংলার মহানায়ক, রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। দেওয়া হলো গার্ড অব অনার। বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীর কাছে জানতে চাইলেন, তিনি কখন ফিরিয়ে আনছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত তাঁর দেশের সেনাবাহিনীকে। ইন্দিরা গান্ধীর স্পষ্ট উত্তর, ‘যখন আপনি চাইবেন।’ একজন বঙ্গবন্ধুর সামনে এমন উত্তর ছাড়া আর কী হতে পারে। হাজার হলেও একজন জীবন্ত কিংবদন্তির সামনে দাঁড়িয়ে ভিন্ন কিছু বলা তখন সম্ভব ছিল না।

১০ জানুয়ারি পড়ন্ত বিকেলে রাজকীয় এয়ারফোর্সের বিমানটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করল। তখন বিমানবন্দরজুড়ে লাখো মানুষের ভিড়। একনজর তারা তাদের মহানায়ককে দেখতে চায়। দেশের সব মানুষ রেডিওতে কান লাগিয়ে মহানায়কের আগমনীবার্তা শুনছে। তাঁকে সোজা নিয়ে আসা হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে তিনি ৭ই মার্চ ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তখন বেলা ডুবুডুবু। বঙ্গবন্ধু অপেক্ষমাণ লাখো মানুষকে শোনালেন তাঁর বন্দিজীবনের কথা। কৃতজ্ঞতা জানালেন বন্ধুদেশের সরকার ও তাদের জনগণকে, যারা বাঙালির দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। স্মরণ করলেন সেসব শহীদকে, যাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাংলাদেশে নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারত। সরকারের চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ত। যুদ্ধের প্রথম দিকে যুদ্ধ পরিচালনা কার অধীনে হবে, তা নিয়ে কিছুটা মতভিন্নতা ছিল। সেনাবাহিনীর একটি অংশ চাইছিল, যুদ্ধ পরিচালনা করবে সেনাবাহিনীর একটি কমান্ড কাউন্সিল। কারো মত ছিল একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হোক। কারো কারো মত ছিল, একটি বিপ্লবী কাউন্সিল গঠন করা হোক। বাধ সাধলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তাঁদের মত, একটি প্রবাসী সরকার গঠন করা হবে এবং এতে থাকবেন শুধু ১৯৭০-এর নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তাঁরা হবেন প্রজাতন্ত্রের কাণ্ডারি। অন্যরা যুদ্ধ করবে প্রজাতন্ত্রের অধীনে। অন্যথা হলে তা মুক্তিযুদ্ধ হবে না। তা হবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু ফিরে না এলে তেমন সংকট আবারও দেখা দেওয়াটা বিচিত্র কিছু ছিল না। হাজার হাজার তরুণ তখন অস্ত্রের মালিক। তাদের নিরস্ত্র করা কঠিন হয়ে পড়ত। তারা আন্তর্দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে দেশে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারত। এর ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করতে পারত। এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করতে পারত। এসব সংকট বাংলাদেশে সৃষ্টি করতে পারত ভয়াবহ খাদ্যসংকট। মারা যেতে পারত কয়েক লাখ মানুষ। বঙ্গবন্ধু ফিরে না এলে একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ২০১৯ সালে এসে বলতে পারতা না, ‘আমরাই উন্নয়নের রোল মডেল।’ আমরা একটি খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে একটি খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হতে পারতাম না। বিশ্বব্যাংককে মুখের ওপর বলতে পারতাম না, ‘চাই না তোমাদের অর্থ। আমরা নিজের অর্থেই বানাতে পারি পদ্মা সেতুর মতো বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সেতু।’ আমাদের নতুন প্রজন্ম বলতে পারত না, ‘আমিই বাংলাদেশ।’ এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের একজন শেখ মুজিব ছিলেন বলে। তিনি হাজারো প্রতিকূল অবস্থায় বলতে পারতেন, ‘আমি চির উন্নত শির।’ তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, ‘উন্নত মম শির।’

আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

এই বিভাগের আরো সংবাদ