আজকের শিরোনাম :

অদম্য বাংলাদেশ অনিরুদ্ধ অগ্রযাত্রা

  ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলি

০১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

মানুষ স্বপ্নবিলাসী। মানুষের চেতনাগুলো স্বপ্নে লালিত হয়। স্বপ্নে শাণিত হয়। চেতনার জাগতিক পথ বেয়ে স্বপ্নবান মানুষ এগিয়ে চলে ব্যক্তিক বা সামাজিক সমৃদ্ধির অদম্য পথে । চেতনা ব্যক্তিক, চেতনা সামাজিক, চেতনা সামষ্টিক।

চেতনাগুলো যখন সম্মিলিতভাবে জাতির জাতীয়তাবোধে পরিণত হয়, তখন তার জন্য শুধু যথার্থ একজন নাবিকের প্রয়োজন হয়। যিনি চেতনাকে উস্কে দেন, উম্মুক্ত করান, সঠিক পথে পরিচালিত করেন,দৃশ্যমান করেন। বাংলাদেশের সে নেতৃত্বও দীপ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্তগঙ্গা প্রবাহের, জীবন সম্ভ্রম হারানোর, অদৃশ্যপুর্ব ও অভূতপুর্ব গণজাগরনের। প্রতারণা প্রবঞ্চণা ও বৈষম্য থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অত:পর বিস্ফোরণের পথ ধরে বিদ্রোহ। গণ বিদ্রোহ, গণযুদ্ধ, মুক্তির জন্য জীবন মরণ পণ। হাজার বছরের মুক্তির পথ খুঁজে খুঁজে আমাদের মুক্তির চেতনাগুলো স্পষ্ট। আমাদের স্বাধীনতার চেতনা সার্বজনীন। সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবিক সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা। ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। বঞ্চনা ও সামাজিক -রাষ্ট্রীক শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। দেশাতœবোধে সিক্ত-পৃক্ত, জাতীয়তাবোধে জাগ্রত, অনুরক্ত বাংলাদেশ।
অগণিত, জায়া-জননী, মা-বোন,কন্যা-বধূর জীবন ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, তিরিশ লাখ প্রাণের বিসর্জন বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, রক্ত, অশ্রু, দীর্ঘশ্বাস আর স্বজন হারানো হাহাকারের যে বাংলাদেশ- তা প্রায় সাড়ে তিন যুগ পরে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক, দুর্বার গতিতে গতিশীল। সামাজিক, সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক, ঐতিহ্যিক বাস্তবতার যে বাংলাদেশ- তা আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, বাঙালির স্বপ্নজাগানিয়া,অদম্য,অপ্রতিরোধ্য। লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধের সময় আমাদের তীব্রভাবে হাতছানি দিচ্ছে। সাত চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত করেছে প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন যে দেশ একফোটা বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত- সকাল থেকে সন্ধ্যা, দিবস রজনী। আজ তার পরিবর্তন হয়েছে। ১৫% ভূমির স্থলে এখন সেচের আওতায় ৬৫% জমি। সাতকোটি মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে সারা দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে হত যে দেশকে। খাদ্য উৎপাদন হতো এক কোটি ত্রিশলাখ টন। আজ ২০১৯এ এসে উৎপাদন পৌঁছেছে চার কোটি তের লাখ টনে। আজ দেশের মানুষ সতের কোটি। ধান উৎপাদনে দেশ পৃথিবীতে চার নম্বরে। খাদ্যের আন্তর্জাতিক অপরাজনীতি থেকে দেশ আজ মুক্ত। ভূখন্ডগত আয়তনের ক্রমে আমাদের দেশ পৃথিবীতে চুরানব্বইতম। অথচ সবজি উৎপাদনে আমরা গোটা পৃথিবীতে তৃতীয়। মাছ এবং ফল উৎপাদনেও আমরা পৃথিবীতে চার নম্বরে। আলুতে সপ্তম, আমে অষ্টম। বদলে গেছে দিন। বদলে গেছে বাংলাদেশ। বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাথাপিচু আায় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে পাঁচগুন। বিদ্যুৎ বিতরণের পরিধি এবং ভোক্তা বেড়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে ৯২% মানুষ। ২০২১ সালের ভিতর পঁচিশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিতে দেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। চিকিৎসায় দেশ বিশ্ব জয় করতে চলেছে। দেশের ৯৮% চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের ওষুধ পৃথিবীর ১৫১ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যে সব দেশের তালিকায় আমেরিকা ইউরোপও আছে। রপ্তানি আয় দেশটির একচল্লিশ বিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্স আয় পনের বিলিয়ন ডলার । রপ্তানি পণ্য সাতশত বাহাত্তরটি। রপ্তানি হয় পৃথিবীর ১৯৯ দেশে। পোশাক রপ্তানিতে আমরা পৃথিবীতে দ্বিতীয়। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে নারীর ক্ষমতায়নে এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে। এ ঈর্ষণীয় সফলতা বিগত দশ বছরের। কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়িদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়ন রোল মডেল। ছয়কোটি তারুণ্যের টগবগে স্বপ্নের অদম্য অভিযাত্রী এখন বাংলাদেশ। গন্তব্য ২০২১, ২০৩০, ২০৪১ এবং ২১০০ এর অধরা লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তরুণ সমাজ তীব্রভাবে ধারন করছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। অদম্য বাংলাদেশের অনিরুদ্ধ যাত্রা তাই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার। আসুন আমরাও শরীক হই। একটি সুখী বর্তমান ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য। (দৈনিক আজাদী থেকে নেয়া)

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক

এই বিভাগের আরো সংবাদ