আজকের শিরোনাম :

একজন ধূর্তের ধূর্তামি

  জয়দেব নন্দী

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

যে ক্যানভ্যাসার মাদুলি বিক্রি করেন, তিনিও জানেন; এই মাদুলি রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অসার। তবুও তিনি মানুষকে বোকা বানিয়ে ভাওতাবাজি করেন! সেই ভাওতাবাজকে 'ধূর্ত'ও বলতে পারেন।

আসুন তেমন একজন ধূর্ত সম্পর্কে একটু বৃথা সময় নষ্ট করি।

মাহি বি চৌধুরীর ‘planB’ শুনলাম। তাকেও আমার ঠিক মাদুলি বিক্রেতা ক্যানভ্যাসারের মতো মনে হয়েছে। ধূর্তও মনে হয়েছে, তা আমি ব্যাখ্যা করছি।

উনি উনার ‘planB’র শুরুতে বলেছেন, আওয়ামী লীগ চাইলে লাখ লাখ নেতাকর্মী একমুহূর্তে একজায়গায় করতে পারেন এবং সেটি নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। আওয়ামী লীগ নাকি এই লাখ লাখ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুষে রেখেছে! এই লাখ লাখ নেতাকর্মীর নাকি রাজনীতি ছাড়া পেট চালানোর আর কোনো পেশা নেই (তিনি বিএনপি সম্পর্কেও বলেছেন, সেটি আমার আলোচ্য বিষয় নয়)! মি. মাহি বি চৌধুরী শেখ হাসিনার এই অগ্রগতির বাংলাদেশে পেশা বা কাজের অভাব আছে, এই কথা বললে যে সচেতন মানুষ আপনাকে অপ্রকৃতস্থ জ্ঞান করবে, সেটা কি ভেবেছেন? আর আওয়ামী লীগের জন্মের ইতিহাস কি আপনি কখনও পড়েছেন? না পড়লে আজই আর একবার পড়ুন। মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ আপনার মতো লোকেরা করে না, আওয়ামী লীগ করে বাংলার আমজনতা, খেটেখাওয়া মানুষ; যারা কোনো লোভ-লালসা থেকে আওয়ামী লীগ করতে আসে না।

ধরুন, আপনি একটা জনসভা করছেন, যেখানে মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলা হচ্ছে। আপনি নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন তো? পারবেন না। কেননা, আপনার নামসর্বস্ব দলের কোন নেতাকর্মী আপনাকে বাঁচাতে মানববর্ম তৈরি করে আপনাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি আদর্শিক দল, যে দলের নেতাকর্মীরা কিছু পেতে আসে না, আসে দিতে। যে কারণে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা, আমাদের প্রিয় নেত্রীকে বাঁচাতে মানববর্ম সৃষ্টি করে আমাদের দলের নিবেদিত নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে প্রিয় নেত্রীকে সেদিন বাঁচিয়েছিল। এখানে কিসের লেনদেন ছিল বলুন তো?

আপনি বলেছেন, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’- এই স্লোগান আজকের দিনে কিসের প্রয়োজন রয়েছে? -এই স্লোগান বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন এই স্লোগানের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে এবং থাকবে। কারণ, আপনাদের আস্কারায় একাত্তরের প্রেতাত্মারা এখনও এদেশে আছে, তাদের উল্লম্ফন এখনও আমরা দেখি! তাদের বিচার চলছে, আরও দীর্ঘদিন ধরে এই বিচার চলবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হবার পরও এই স্লোগান শ্বাশত, চিরন্তন। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। একটি পতাকা, একটি মানচিত্র পেয়েছি। আমরা আজ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এখন আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যুদ্ধ করছি। তার নেতৃত্বে আমরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে এসে পৌঁছেছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। একাত্তরের সেই ‘হাতিয়ার’ সমৃদ্ধ চেতনা বুকের গভীরে যদি শেখ হাসিনার না থাকতো, তবে বাংলাদেশ আজ কোথায় পড়ে থাকতো? আপনি এই স্লোগানকে আজকের দিনে প্রাসঙ্গিক মনে নাও করতে পারেন, কিন্তু বাংলার কোটি কোটি তরুণ এই স্লোগানকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি-ই মনে করে।

আপনি ‘planB’তে শান্তি-সুখের বাংলদেশের কথা বলেছেন। ভালো কথা। কিন্তু বিএনপি-জামাত যখন অগ্নি-সন্ত্রাসের মাধ্যমে শত শত নিরীহ মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছিল, তখন কি (একটু শান্তির জন্য!) একদিনের জন্য কি সেই পোড়া মানুষগুলোকে দেখতে গিয়েছিলেন? নাকি সেই সময়টিতে ব্যক্তি-মোহে নিমজ্জিত থেকে গতানুগতিক আয়েসী জীবনে ডুবে ছিলেন?

লেখক : সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

এই বিভাগের আরো সংবাদ