আবদুল মান্নান
একাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ বনাম ‘অন্যরা’
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৬
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সামনের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাধারণত যেকোনো দেশে নির্বাচন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে তার পরিবর্তে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বনাম ‘অন্য’রা। এই ‘অন্য’দের মধ্যে যেমন আছে বিএনপি আর জামায়াত, ঠিক তেমনি আছে কয়েকজন সাবেক ব্যর্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একাধিক জোট, কিছু তত্ত্বসর্বস্ব বাম দল, কিছু ‘সুশীল’ লেবাসধারী ব্যক্তি আর গোষ্ঠী, আছে কিছু গণমাধ্যম আর করপোরেট হাউস। এদের পেছনে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বিদেশি কিছু শক্তি আর সংগঠন, যার মধ্যে পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই অন্যতম। অনেকে মনে করেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর তারা এখন তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এমন ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল, তা এবার ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি। তাদের সংগঠন ও কর্মীবাহিনী এখনো অটুট আছে। ধর্মের বড়ি খাইয়ে স্ফীত হচ্ছে অনেক জায়গায়। বিএনপির পেছনে তারাই হচ্ছে মূল শক্তি। কারণ তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে কমিটমেন্ট আছে, তা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন একটা নেই। সুতরাং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এই ‘অন্য’দের মোকাবেলা করে নির্বাচনে জিততে হবে, কারণ এই ‘অন্য’দের বর্তমানে একমাত্র এজেন্ডা হচ্ছে যেকোনো উপায়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে বাধা সৃষ্টি করা। এবার তো এদের একজন প্রকাশ্যে ঘোষণাই দিয়েছেন ‘যেকোনো উপায়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে হবে।’
কারা এই ‘অন্যান্য’? রাজনৈতিক দলগুলোর কথা তো বলেছি। এবার আসুন অন্য ‘অন্যান্য’র কথা শুনি। প্রথমে ‘সুশীল’। সুশীলের একটা সংজ্ঞা আছে। তাঁরা সাধারণত কোনো একটি এনজিওর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। নিজেদের তাঁরা ফেরেশতাতুল্য ঘোষণা করেন। ঘোষণা করেন তাঁদের একমাত্র প্রত্যাশা দেশের ‘গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করা’। তার জন্য তাঁরা জান বাজি রাখতে রাজি। তাঁদের অবশ্যই আওয়ামী লীগবিরোধী হতে হবে। কিছু নির্ধারিত বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে তাঁদের থাকবে গলাগলি ভাব। নিয়মিত তাঁরা চা চক্র বা রাতের অন্ধকারে ডিনারে মিলিত হবেন। সেখানে সবাই দেশে গণতন্ত্র সুরক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করবেন। কোনো কারণে দেশে কোনো তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটলে তাদের কেউ হবেন সরকারের আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা। কেউ কেউ বিদেশে কোনো বড় ধরনের দায়িত্ব নিয়ে দেশ ত্যাগ করবেন। আবার দু-একজন থাকবেন, যাঁরা তৃতীয় শক্তির সঙ্গে অর্থ লেনদেনের দূতিয়ালি করতে ব্যস্ত থাকবেন। তাঁদের প্রথম আবির্ভাব ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন তাঁরা গুলশানের একটি অভিজাত কমিউনিটি সেন্টারে ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ নাম দিয়ে মিলিত হয়েছিলেন ‘গণতন্ত্রকে রক্ষা’ করার জন্য। হঠাৎ করে এই আবির্ভাবের কারণ ছিল ২০০৬ সালের শেষে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অনেকটা অবধারিত ছিল। কারণ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০০১-০৬ মেয়াদের সরকারের দুঃশাসনে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। এরপর এক-এগারোর নাম করে জাতির ভাগ্যে নেমে এলো ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের নামে এক জবরদখলকারী সরকার। তখন এই ‘যোগ্য প্রার্থী’ওয়ালাদের ভাগ্য খুলে গেল। কেউ হলেন উপদেষ্টা আর কেউ বা রাষ্ট্রদূত। যদিও তখন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ছিল। এঁদের দু-একজন খুলে বসলেন নিজেদের রাজনৈতিক দোকান। ঘোষণা দিলেন দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে তাঁদের সমর্থন দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এঁদের নাম হলো ‘কিংস পার্টি’। জন্ম হলো ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। কোনো অবস্থায়ই শেখ হাসিনা অথবা খালেদা জিয়াকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। আসলে এটি ছিল রাজনীতি থেকে মাইনাস শেখ হাসিনা। এই তত্ত্ব ঘোষণা করে দেশের দুটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করল। একদিন শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে ধস নামানো বিজয় ছিনিয়ে এনে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলেন।
এবার আসি নির্বাচন সামনে রেখে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ‘অন্য’দের জোটের কথায়। রাজনীতিতে জোট কোনো নতুন বিষয় নয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে অসফল ব্যক্তিরা যখন একটি দলকে নির্বাচনে বাধা দেওয়ার জন্য জোট তৈরি করেন, তখনই প্রশ্ন ওঠে। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত হয়েছিল নির্বাচনী জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’। সেই জোটে ছিল আওয়ামী লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি আর গণতন্ত্রী দল। নেতৃত্বে শেরেবাংলা, মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে সেই জোটের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল মুসলিম লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে তেমন একটি জোট গঠন করা হয়েছে। এই ‘যুক্তফ্রন্ট’কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নাম দিয়েছেন ভেজাল ‘যুক্তফ্রন্ট’। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে ড. কামাল হোসেনের ‘গণফোরাম’ আর ডা. বি চৌধুরীর ‘বিকল্পধারা’। এই মিলনকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। কারণ এই জোট আর তাঁদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। যেকোনোভাবে সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য বিজয় ঠেকিয়ে দিতে হবে। যাঁরা এই জোটে আছেন তাঁদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া সবারই গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক অতীত আছে এবং অবশ্যই তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
ড. কামাল হোসেন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য। একজন আইনজীবী হিসেবে তাঁর খ্যাতি অসামান্য। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি অভিযুক্তদের পক্ষে একজন জুনিয়র আইনজীবী ছিলেন। তখন থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর নজরে আসেন। সম্পৃক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে পররাষ্ট্র ও আইনসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। তাঁর বড় কীর্তি তিনি বাংলাদেশের সংবিধান রচনা টিমের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৮১ সালে তিনি বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে হেরে যান। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’-এর জন্য গঠন করেছিলেন ‘গণফোরাম’। সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টুকে। বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হন তখন তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইউরোপে। বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন লন্ডনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে, যেখানে শেখ রেহানা কথা বলবেন। তিনি তা করতে অস্বীকার করেছিলেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য চলে যান অক্সফোর্ডে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো জাতীয় নির্বাচনে তাঁর বিজয়ী হওয়া কঠিন। ডা. বি চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ছিলেন একজন প্রতিথযশা চিকিৎসক। ষাটের দশকে ঢাকা টিভিতে ‘আপনার ডাক্তার’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাঁর পিতা কফিলউদ্দিন চৌধুরী একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের আগে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর ছেলে ডা. বি চৌধুরী। জেনারেল জিয়া যখন বিএনপি গঠন করেন, তখন তাঁর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন এবং তিনি ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। খালেদা জিয়া তাঁকে ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। এক বছরের মাথায় চরম অপমানিত হয়ে তাঁকে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘বিকল্পধারা’ নামের একটি রাজনৈতিক দল। মহাসচিব বানিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর মান্নানকে। একাত্তরের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে টিম বানিয়েছিল তার সদস্য ছিলেন মেজর মান্নান (৩ কমান্ডো ব্যাটালিয়ন, চট্টগ্রাম সেনানিবাস। The way it was. Brig (Retd) Z A Khan)। মেজর মান্নান যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আত্মসমর্পণ করেন এবং যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারত হয়ে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন (Daktar : Diplomat in Bangladesh. Viggo Olsen.)। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তান চলে যান। বঙ্গবন্ধুর বদান্যতায় তিনি ১৯৭৩ সালে দেশে ফেরেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া তাঁকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। বর্তমান ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
‘নৌকাকে ফেলে দিতে হবে’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আছেন জাসদের আ স ম আবদুর রব। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের অন্যতম সেনাপতি আর ছাত্রলীগের একজন তুখোড় ছাত্রনেতা। ১৯৭০ সালে ডাকসুর সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগ ভাগ হলে তিনি ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে’ দীক্ষিত অংশের নেতৃত্বে চলে আসেন। পরে জাসদ সংগঠিত করেন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে তাঁকে সমর্থন জানান এবং তাঁর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। ২০০১ সালের পর তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বর্তমানে বহুধাখণ্ডিত জাসদের একাংশের নেতা। মাহমুদুর রহমান মান্না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীকালে ডাকসুর সহসভাপতি নির্বাচিত হন। এটি তাঁর বিরল কৃতিত্ব। ছাত্রলীগ থেকে জাসদ ছাত্রলীগ হয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। মাঝখানে বাসদে যাত্রাবিরতি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বগুড়ার একটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে নিজে ‘নাগরিক ঐক্য’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এখন পর্যন্ত কয়জন নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ করছেন, তা জানা যায়নি।
আওয়ামী লীগ যেন সামনের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য সর্বশক্তি নিয়োজিত করা হয়েছে। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ছাত্রলীগের একজন তুখোড় নেতা ছিলেন। কঠিন সময়ে ডাকসুর সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মৌলভীবাজারের একটি আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করে প্রথমবার নির্বাচিত হলেও পরেরবার পরাজিত হন। এক-এগারোর পর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন। কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তবে আওয়ামী লীগবিরোধী জোটে আছেন। গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অনেকটা রহস্যপুরুষ। মানুষ জানে তিনি খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তাঁর আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। টিভিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য জোর গলায় আওয়াজ তুলেছিলেন। একাত্তরে তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভারতের মেলাঘরে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে কাছে টেনে নিয়ে সাভারে জমি দিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল স্থাপন করার জন্য। তিনিও ‘আওয়ামী লীগ ঠেকাও’ ঐক্যের সঙ্গে আছেন। আওয়ামী লীগ বা নৌকা ঠেকাওওয়ালারা কখনো শলাপরামর্শের জন্য ড. কামাল হোসেনের বাড়িতে বসেন কখনো বা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাড়িতে। নৌকা ঠেকাও আন্দোলনের মূল কাসিমবাজার কুঠি লন্ডনে হলেও বাংলাদেশে কয়টি শাখা স্থাপিত হয়েছে তা গবেষণার বিষয়।
নৌকা ঠেকাও আন্দোলনের জন্য স্থাপিত কাসিমবাজার কুঠিগুলো যাঁদের পদচারণে সদা সরগরম থাকে, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার কৃপাধন্য। যখন থেকে তাঁরা নিজ দায়িত্বে কিছু করার চেষ্টা করেছেন, তখন থেকে তাঁদের দেউলিয়াত্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। তবে যেহেতু এঁরা সবাই একসময় আওয়ামী লীগের ঘরের ভেতরের মানুষ ছিলেন, তাঁদের পক্ষে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করাটা কিছুটা সহজ। আরো একটা বিষয় নিয়ে অনেকে চিন্তিত। বঙ্গবন্ধুকে যাঁরা হত্যা করেছিলেন তাঁরা সবাই তাঁর অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যার কিছু কাছের মানুষ নিয়ে তাঁর হিতাকাঙ্ক্ষীরা চিন্তিত। শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু আমলাদের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। মাহবুব আলম চাষী, আবদুল মোমেন (তৎকালীন খাদ্যসচিব, ড. মইন খানের বাবা), সানাউল হক (বেলজিয়ামের সাবেক রাষ্ট্রদূত। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে শেখ হাসিনাকে পরিবারসহ তাঁর বাসভবন থেকে বের করে দিয়েছিলেন) এঁরা সবাই জাঁদরেল আমলা ছিলেন। বর্তমানে তাঁদের যেসব উত্তরসূরি আছেন তাঁদের অনেককে নিয়েও শেখ হাসিনার হিতাকাঙ্ক্ষীদের সন্দেহ আছে। একজন সিনিয়র সাংবাদিক ঈদের ছুটির সময় আমাকে বলেছিলেন এমন একজন আমলার কথা, যিনি এখন থেকে চিন্তা করছেন সামনের নির্বাচনের পর ক্ষমতার পরিবর্তন হলে কী কী করা উচিত। এটি স্বীকার করতে হবে প্রশাসনে সবাই বর্তমান সরকার বা শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেন, তা বিশ্বাস করা মারাত্মক ভুল। এমনটি কখনো হয় না। সুতরাং সামনের নির্বাচনে ভালো করতে হলে কোনো আমলা বা সরকারি চাকরিজীবীর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নির্ভর করতে হবে দলের নিষ্ঠাবান নেতাকর্মীদের ওপর। সময় থাকতে সাবধান হতে হবে দলে অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে। এটি আবারও পুনরুক্তি করতে চাই, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ এখনো অপ্রতিরোধ্য। দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে ‘অন্য’রা কিছু করতে পারবে না। (দৈনিক কালের কণ্ঠ থেকে সংগৃহীত)
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক
এই বিভাগের আরো সংবাদ