একুশের চেতনায় বাঙালির করোনা টিকা গ্রহনই শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার বহি:প্রকাশ
শামসুজ্জোহা লোটাস
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:১৩ | অনলাইন সংস্করণ
রাত পোহালেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশ মানেই বাঙালির কাছে আলাদা কিছু। শিরদাঁড়ায় বয়ে যাওয়া হীম শীতল স্রোত নাকি আরো কিছু! নাকি একুশ মানে বাঙালির আবেগ, ঐক্য, সংগ্রাম, চেতনা! একুশ মানে সবকিছুই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ একুশে পদক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে একুশকে এক লাইনে সব বলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একুশের পথ বেয়েই আমাদের রক্তস্নাত স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব অর্জন। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে একুশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ একাত্তর বছর পর আর একটি একুশের সামনে দাঁড়িয়ে সেদিনের একুশের কথাটাই যেনো প্রধানমন্ত্রীর কথায় ফিরে এলো। বাঙালি এই একুশে শেখ হাসিনার হাত ধরে আরো একটি মুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। যেখানে আতংকিত বিশ্বের প্রায় দেড়শ'র মতো দেশ এখনো ভ্যাক্সিনের দেখা পায়নি সেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধের প্রতিরোধক হিসাবে শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রজ্ঞাময় নেতৃত্বের বদৌলতে এই একুশের আগে প্রায় বিশ লক্ষ বাংলাদেশী করোনার ভ্যাক্সিন গ্রহন করেছে। বায়ান্নর একুশ আমাদের স্বাধীনতার সোপান দিয়েছিলো আর এই একুশ বেঁচে থাকার পালে পালক যুক্ত করেছে।
বায়ান্নর ভাষা শহীদ ও একুশ এর একুশের বিশ্ব শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে ভ্যাক্সিন, গুজব ও ষড়যন্ত্র নিয়ে কিছু কথা বা তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র। সর্ব প্রথম চীনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ধরা পড়লেও আধুনিক বিশ্বের অতি ভয়ংকর হিসেবে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে হানা দেয় ২০২০ সালের মার্চ মাসের আট তারিখে। হাজারো আলোকবর্ষ পথ পাড়ি দিয়ে বিজ্ঞানীরা যখন পৌঁছে গিয়েছেন দেশ কাল সিমানা ছাড়িয়ে ঠিক তখনই অজানা রুপে ভয়ংকর আতঙ্কে নীল বিষের ছোবলে করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে দিকভ্রান্ত করে মানুষকে ছুড়ে ফেলে অনিশ্চয়তার অন্ধকার আস্তাকুঁড়ে । মৃত্যু হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের। প্রথম থেকেই আনপ্রেডিক্টেবল করোনার প্রতিকার বা প্রতিষেধক হিসেবে ঔষধ তৈরি করতে বিজ্ঞানীদের গলদঘর্ম হলেও আশার আলো দেখতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। মানব জাতির জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে নামার সাহস যোগাচ্ছে অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকা সহ বিশ্বের আরও দুইটি ইনিস্টিউটের আবিষ্কৃত দুর্বোধ্য করণার ভ্যাকসিন। ইতিমধ্যে সব ভ্যাক্সিন গুলো মানবদেহে পরিক্ষা নীরিক্ষা শেষে WHO এর অনুমতি নিয়ে বাজারে এসে গেছে। এরমধ্যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আবিষ্কৃত ব্রিটিশ সুইডিশ কোম্পানি এসটাজেনেকার তৈরি ভ্যাক্সিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় বিশ্ববাসীও অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিনেই বেশি আস্থা রাখছেন। বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন ভ্যাক্সিন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে দিনাতিপাত করছেন তখন সূদুর প্রসারি নেতৃত্বের অধিকারী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে সর্বপ্রথম একটি অসাধারণ চুক্তি সম্পাদন করেন। যার ফলশ্রুতিতে ইতিমধ্যে করোনা'র ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছিয়েছে এবং গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কোস্তাকে প্রথম টিকাদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। জীবন রক্ষার সহায়ক ভ্যাকসিন নিয়েও শুরু হয়েছিলো ধুন্ধুমার সমালোচনা। টিকা কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে ও জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে গুজববাহিনী যে এজেন্ডা গুলো হাতিয়ার করেছিলো সেগুলো মোটামুটি এভাবে বলা যায়ঃ ভারত বিরোধিতাকে সামনে রেখে ভ্যাক্সিনকে ভারতীয় ভ্যাক্সিন বলে মানুষের মগজ ধোলাই করা। ভারতকে খুশি করতে অনেক বেশিদামে কেনা হয়েছে এবং ভারতের টিকা তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আর সরকার সরাসরি ভ্যাক্সিন না কিনে কেনো বেক্সিমকোর মাধ্যমে অতিরিক্ত এক ডলার খরচ করে কিনলো। কারণ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাকে লাভবান করার জন্য। অথচ আদতে এই কথা গুলোর একটিও সত্য নয়। একেবারেই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন প্রচার। এটিকে সরকার পতনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে দেশে সরকার বিরোধী স্ট্যান্টকে প্রতিষ্ঠার একটি অভিপ্রয়াস হিসাবেও দেখা যায়। কারণ টিকা বিতর্কের মাঝেই আল-জাজিরা টেলিভিশন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে শেখ হাসিনা বিরোধী ও সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট ডকুমেন্টারি প্রচারে এনেছে। যাইহোক, সেরামের টিকা ভারতের উদ্ভাবিত টিকা নয়। কারণ ভারত উদ্ভাবিত করোনা টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এখনো অনুমোদিত হয়নি। বাংলাদেশে এসেছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রজেনিকা যে ভ্যাক্সিনটি তৈরি করেছে সেই ভ্যাক্সিন। অক্সফোর্ড-এস্ট্রোজেনিকার উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি উৎপাদন করার জন্য তারা বিশ্বের সাতটি কোম্পানিকে নির্বাচিত করেছে। যারা যথাযথ নিয়ম মেনে ভ্যাক্সিনটি উৎপাদন করবে এবং অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার এক্সপার্টরাই উৎপাদন কাজের তদারকি করবেন। এই সাতটি কোম্পানির মধ্য একটি হলো ভারতের পুনে রাজ্যে অবস্থিত সেরাম ইন্সটিটিউট। কারণ সেরাম ইন্সটিটিউট হলো অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার আবিষ্কৃত ভ্যাক্সিন প্রথমে যুক্ত্রারাজ্য তথা ব্রিটেন তথা ইংল্যান্ডের মানুষের উপর সর্বপ্রথম প্রয়োগ করা হয় এবং ব্রিটিশ সরকার অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার কাছ থেকে ভ্যাক্সিনটি ক্রয় করে। কারণ বিশ্বের কোনো দেশ কখনো টিকা আবিষ্কারের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেনা। তাই সেরাম থেকে যে টিকা বাংলাদেশে এসেছে সেটা ভারতের উদ্ভাবিত বা উৎপাদিত টিকা নয়। ভারত সরকারও সেরামের কাছ থেকেই অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার টিকা কিনেছে। এখানে তাই ভারতকে খুশি করার কোনো বিষয় জড়িত নেই। এখানে বরংচ বাংলাদেশ যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে ভারতের আগে সেরামের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে সেখানে বাংলাদেশ অতন্ত্য চাতুর্যের সাথে একটি অসাধারণ ক্লজ সংযুক্ত করেছে। সেরামের সাথে তারা প্রতি ডোজ (দুটি টিকায় এক ডোজ) চার ডলার করে রফা করে কারণ এই ভ্যাক্সিনটি অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি যেমন সেরাম ইন্সটিটিউট তেমনি সেরাম ইন্সটিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হলো বেক্সিমকো ফার্মা। তাই অক্সফোর্ডের টিকা সেরাম থেকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিতে হবে। যেমন যুক্তরাজ্য, ভারত তারাও কোনো দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি। তারাও অক্সফোর্ড নির্ধারিত প্রতিনিধির কাছ থেকেই টিকা সংগ্রহ করেছে। এখানে বেক্সিমকোকে যে এক ডলার দেয়া হচ্ছে তার কারণ হলো ভারত থেকে ভ্যাক্সিন নিয়ে আসা, সংরক্ষণ করা ও দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে পরিবহন করার জন্য। এই বিশাল কর্মজজ্ঞ সরকারি ভাবে স্বল্প সময়ে দ্রুতার সাথে মানুষের কাছে পৌঁছানো কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়।
আমরা সাধারণ মানুষ খুব অবাক হই যখন দেখি প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, সততা, দেশের প্রতি ভালোবাসাকে সংসদের বিরোধী সংসদ সদস্যরাও কাছ থেকে যানার পরেও শুধু বিরোধিতার স্বার্থে মিত্যা, আজগুবি কথা প্রকাশ্যে উপস্থাপন করে জনগনকে বিভ্রান্ত করেই যান। আমি অবাক হলাম আমরা যাদের কাছ থেকে সত্যটা জানবো সেই সংসদ সদস্য বিএনপি'র হারুন অর রশিদ সাহেব একাত্তর টেনিভিশনের প্রগ্রামে লাইভে এসে মন্তব্য করেন যে, ভারতের কাছ থেকে টিকা নিলে যদি তারা টিকার মধ্যে গো মূত্র দিয়ে দেয়! এমন কথায় যখন প্রতিপক্ষ বক্তারা নিন্দা জানানোর ভাষা হারান তখন হারুন সাহেব জনগনের উপরে দোষ চাপিয়ে বলেন, "না এটা আমার কথা নয়, জনগন বলছে "।
অথচ বিএনপির হারুন সাহেবদের বোঝা উচিৎ, আত্মরক্ষার জন্য জনগণকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্যই বাংলার জনগণ বারবার তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছে। আসলে পাকিস্তানপন্থী আর নিজ স্বার্থান্বেষীদের কাছে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, ভাষা শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং শেখ হাসিনা ও বিনা পারিশ্রমিকে শুধু বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবে বাংলার তরুণ তুর্কি প্রযুক্তি বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের ত্যাগকে শিকার করলেও মেনে নিতে পারেননা। তাদের ভাবনায় কাজ করে পাকিস্তান সব দিক দিয়ে পিছেয়ে গেছে, এখনো যদি শেখ হাসিনা ও জয়কে টেনে ধরা না যায়, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্টে পরিণত করা না যায় তাহলে তাদের স্বার্থ কখনোই সিদ্ধিলাভ করবেনা। তাই, একুশের একুশে বাঙালির শপথ এটাই হোক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেকোনো মূল্যে পাকি চিন্তাকে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করবোই ইনশাআল্লাহ। লেখক: শামসুজ্জোহা লোটাস, সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট।
বায়ান্নর ভাষা শহীদ ও একুশ এর একুশের বিশ্ব শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে ভ্যাক্সিন, গুজব ও ষড়যন্ত্র নিয়ে কিছু কথা বা তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র। সর্ব প্রথম চীনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ধরা পড়লেও আধুনিক বিশ্বের অতি ভয়ংকর হিসেবে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে হানা দেয় ২০২০ সালের মার্চ মাসের আট তারিখে। হাজারো আলোকবর্ষ পথ পাড়ি দিয়ে বিজ্ঞানীরা যখন পৌঁছে গিয়েছেন দেশ কাল সিমানা ছাড়িয়ে ঠিক তখনই অজানা রুপে ভয়ংকর আতঙ্কে নীল বিষের ছোবলে করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে দিকভ্রান্ত করে মানুষকে ছুড়ে ফেলে অনিশ্চয়তার অন্ধকার আস্তাকুঁড়ে । মৃত্যু হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের। প্রথম থেকেই আনপ্রেডিক্টেবল করোনার প্রতিকার বা প্রতিষেধক হিসেবে ঔষধ তৈরি করতে বিজ্ঞানীদের গলদঘর্ম হলেও আশার আলো দেখতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। মানব জাতির জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে নামার সাহস যোগাচ্ছে অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকা সহ বিশ্বের আরও দুইটি ইনিস্টিউটের আবিষ্কৃত দুর্বোধ্য করণার ভ্যাকসিন। ইতিমধ্যে সব ভ্যাক্সিন গুলো মানবদেহে পরিক্ষা নীরিক্ষা শেষে WHO এর অনুমতি নিয়ে বাজারে এসে গেছে। এরমধ্যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আবিষ্কৃত ব্রিটিশ সুইডিশ কোম্পানি এসটাজেনেকার তৈরি ভ্যাক্সিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় বিশ্ববাসীও অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিনেই বেশি আস্থা রাখছেন। বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন ভ্যাক্সিন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে দিনাতিপাত করছেন তখন সূদুর প্রসারি নেতৃত্বের অধিকারী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে সর্বপ্রথম একটি অসাধারণ চুক্তি সম্পাদন করেন। যার ফলশ্রুতিতে ইতিমধ্যে করোনা'র ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছিয়েছে এবং গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কোস্তাকে প্রথম টিকাদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। জীবন রক্ষার সহায়ক ভ্যাকসিন নিয়েও শুরু হয়েছিলো ধুন্ধুমার সমালোচনা। টিকা কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে ও জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে গুজববাহিনী যে এজেন্ডা গুলো হাতিয়ার করেছিলো সেগুলো মোটামুটি এভাবে বলা যায়ঃ ভারত বিরোধিতাকে সামনে রেখে ভ্যাক্সিনকে ভারতীয় ভ্যাক্সিন বলে মানুষের মগজ ধোলাই করা। ভারতকে খুশি করতে অনেক বেশিদামে কেনা হয়েছে এবং ভারতের টিকা তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আর সরকার সরাসরি ভ্যাক্সিন না কিনে কেনো বেক্সিমকোর মাধ্যমে অতিরিক্ত এক ডলার খরচ করে কিনলো। কারণ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাকে লাভবান করার জন্য। অথচ আদতে এই কথা গুলোর একটিও সত্য নয়। একেবারেই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন প্রচার। এটিকে সরকার পতনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে দেশে সরকার বিরোধী স্ট্যান্টকে প্রতিষ্ঠার একটি অভিপ্রয়াস হিসাবেও দেখা যায়। কারণ টিকা বিতর্কের মাঝেই আল-জাজিরা টেলিভিশন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে শেখ হাসিনা বিরোধী ও সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট ডকুমেন্টারি প্রচারে এনেছে। যাইহোক, সেরামের টিকা ভারতের উদ্ভাবিত টিকা নয়। কারণ ভারত উদ্ভাবিত করোনা টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এখনো অনুমোদিত হয়নি। বাংলাদেশে এসেছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রজেনিকা যে ভ্যাক্সিনটি তৈরি করেছে সেই ভ্যাক্সিন। অক্সফোর্ড-এস্ট্রোজেনিকার উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি উৎপাদন করার জন্য তারা বিশ্বের সাতটি কোম্পানিকে নির্বাচিত করেছে। যারা যথাযথ নিয়ম মেনে ভ্যাক্সিনটি উৎপাদন করবে এবং অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার এক্সপার্টরাই উৎপাদন কাজের তদারকি করবেন। এই সাতটি কোম্পানির মধ্য একটি হলো ভারতের পুনে রাজ্যে অবস্থিত সেরাম ইন্সটিটিউট। কারণ সেরাম ইন্সটিটিউট হলো অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার আবিষ্কৃত ভ্যাক্সিন প্রথমে যুক্ত্রারাজ্য তথা ব্রিটেন তথা ইংল্যান্ডের মানুষের উপর সর্বপ্রথম প্রয়োগ করা হয় এবং ব্রিটিশ সরকার অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার কাছ থেকে ভ্যাক্সিনটি ক্রয় করে। কারণ বিশ্বের কোনো দেশ কখনো টিকা আবিষ্কারের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেনা। তাই সেরাম থেকে যে টিকা বাংলাদেশে এসেছে সেটা ভারতের উদ্ভাবিত বা উৎপাদিত টিকা নয়। ভারত সরকারও সেরামের কাছ থেকেই অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার টিকা কিনেছে। এখানে তাই ভারতকে খুশি করার কোনো বিষয় জড়িত নেই। এখানে বরংচ বাংলাদেশ যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে ভারতের আগে সেরামের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে সেখানে বাংলাদেশ অতন্ত্য চাতুর্যের সাথে একটি অসাধারণ ক্লজ সংযুক্ত করেছে। সেরামের সাথে তারা প্রতি ডোজ (দুটি টিকায় এক ডোজ) চার ডলার করে রফা করে কারণ এই ভ্যাক্সিনটি অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি যেমন সেরাম ইন্সটিটিউট তেমনি সেরাম ইন্সটিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হলো বেক্সিমকো ফার্মা। তাই অক্সফোর্ডের টিকা সেরাম থেকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিতে হবে। যেমন যুক্তরাজ্য, ভারত তারাও কোনো দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি। তারাও অক্সফোর্ড নির্ধারিত প্রতিনিধির কাছ থেকেই টিকা সংগ্রহ করেছে। এখানে বেক্সিমকোকে যে এক ডলার দেয়া হচ্ছে তার কারণ হলো ভারত থেকে ভ্যাক্সিন নিয়ে আসা, সংরক্ষণ করা ও দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে পরিবহন করার জন্য। এই বিশাল কর্মজজ্ঞ সরকারি ভাবে স্বল্প সময়ে দ্রুতার সাথে মানুষের কাছে পৌঁছানো কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়।
অথচ বিএনপির হারুন সাহেবদের বোঝা উচিৎ, আত্মরক্ষার জন্য জনগণকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্যই বাংলার জনগণ বারবার তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছে। আসলে পাকিস্তানপন্থী আর নিজ স্বার্থান্বেষীদের কাছে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, ভাষা শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং শেখ হাসিনা ও বিনা পারিশ্রমিকে শুধু বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবে বাংলার তরুণ তুর্কি প্রযুক্তি বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের ত্যাগকে শিকার করলেও মেনে নিতে পারেননা। তাদের ভাবনায় কাজ করে পাকিস্তান সব দিক দিয়ে পিছেয়ে গেছে, এখনো যদি শেখ হাসিনা ও জয়কে টেনে ধরা না যায়, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্টে পরিণত করা না যায় তাহলে তাদের স্বার্থ কখনোই সিদ্ধিলাভ করবেনা। তাই, একুশের একুশে বাঙালির শপথ এটাই হোক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেকোনো মূল্যে পাকি চিন্তাকে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করবোই ইনশাআল্লাহ। লেখক: শামসুজ্জোহা লোটাস, সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট।
এই বিভাগের আরো সংবাদ