আজকের শিরোনাম :

১৫ই আগস্টের খুনিরা ফিরেছিল ২১শে আগস্টে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০১৮, ২১:১৪

মশিউর রহমান, ২১ আগস্ট, এবিনিউজ : ইতিহাসের অভিশাপ মুছে যাক। আসল খুনি সবসময় আলোচনার সামনে আসে খুব কম। প্রকৃত খুনিরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাহিরে। পরিচয় প্রকাশ পায় খুব কম। যখন পরিচয় প্রকাশ পায় তখন দেখা যায় তার মৃত্যুটি হয়েছে অমানুষের মতো। একটা খুন করা হয় অনেক কিছু হিসাব নিকাশ করে। যে ব্যক্তি খুনের পরিকল্পনা করে সেই ব্যক্তিই আসলে কি কারনে? কেন? কি উদ্দেশ্যে? কি তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা? কিভাবে কাজটি সুসম্পন্ন করা যায়? নিজে ধরি মাছ না ছুই পানির মতো।

তিনি আসলে খুনের আসল কারণ মাথায় রেখেই খুনটি অন্যের দাঁড়ায় সুসম্পন্ন করে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়। তার বাস্তব প্রমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকান্ড। একটু খেয়াল করুন তো? কি সুপরিকল্পিতভাবে কি রকম চৌকসকতার সাথে সম্পন্ন করেছেন মেজর জিয়া। কি ঠাণ্ডা মাথায় সুই হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভেতরে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নিজে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ধাপে ধাপে মেজর জিয়া তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অবৈধভাবে খুনের মাধ্যমে দেশের শাসন ব্যবস্থা হাতে নিয়েছিল।

পাকিস্তানের ভাবধারায় নিজেকে তৈরি করেছেন সেই ছাত্র থাকা অবস্থায়। এর পর চাকরিরত অবস্থায় দীর্ঘদিন পাকিস্থানে অবস্থান করেছেন পাকিস্তানের আদর্শ, পাকিস্তানের ভাবধারা, পাকিস্তানের চেতনা, পাকিস্তানের নিষ্ঠুরতা, পাকিস্তানের বর্বরতা, পাকিস্তানের নৃশঃসতা নিজে ধারণ করেছেন এবং প্রতি পদে পদে তা বাস্তবায়ন করেছেন।

৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার আগের ঘটনা গুলোর দিকে একটু খেয়াল করুন? খুনি ফারুক, ডালিম এদের ভাষায়, এদের সাক্ষাৎকারে দেখুন তো সুনির্দিষ্টভাবে মেজর জিয়া কিভাবে তাদেরকে সবকিছু জেনে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন নিজের মত। কয়েকবার খুনিদের সাথে মিটিং করেছেন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এসব তথ্য নিজের মুখ থেকেই উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সমস্ত পরিকল্পনা জিয়া জানতেন এবং কিভাবে জুনিয়র অফিসারদের দাঁড়ায় বাস্তবায়ন করা যায় সেজন্য তিনি সকল রকমের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ঠান্ডা মাথায়।

সেই ঠান্ডা মাথার খুনি জাতির পিতা হত্যার পর কতটা চতুরতার সহিত মোকাবেলা করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে নিয়েছিলেন। জিয়া যদি মুক্তিযোদ্ধা হবেন, সেক্টর কমান্ডারই হবেন, জিয়া যদি এদেশের আলো বাতাসে গড়ে ওঠা একজন বাঙালি হবেন, জিয়া যদি বাংলাদেশী হবেন তাহলে যে মানুষটি সারা জীবন সাধনা করে করে জীবন অতিষ্ঠ করে জেল-জুলুমের মধ্য দিয়ে ফাঁসি কাষ্ঠের সম্মুখীন হয়েও দেশের স্বাধীনতা এনে দিলেন সেই মানুষটিকে হত্যার পর জিয়া একবারও কি সমবেদনা জানিয়েছেন? খুনিদের বিচার চেয়েছেন? আসলে সে তো পাকিস্তানি বাঙালি। সে তো বাংলাভাষী পাকিস্তানি। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই যে প্রকৃত খুনি তার প্রমান জিয়া তার জীবন দশায় রেখে গিয়েছেন। জাতির পিতাকে হারানোর পর জাতি যখন শোকাহত, জাতি যখন মর্মাহত, জাতি যখন এতিম, জাতি যখন পথভ্রষ্ট, জাতি যখন সারা বিশ্বে কলঙ্কিত, জাতি যখন মুখ থুবড়ে পড়া জাতিতে পরিণত তখন জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কালো আইন করে বন্ধ করে দেয়। মাঠ পর্যায়ের খুনীদের বিচার না করে বিচার না চেয়ে তাদেরকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অদিষ্ট করেন। শুধু তাই নয় বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বানিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের পুরস্কৃত করেন জিয়া। বানিয়েছেন মন্ত্রী বানিয়েছেন এমপি।

একাত্তরের পরাজিত শক্তির মুল হোতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীদের পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে অপমানিত করেছে ৩০ লক্ষ শহীদের, দু লক্ষ মা বোনদের এবং সেই সাথে নিজেকে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। শুধু কি তাই ধরে ধরে জাতীয় চার নেতাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে গোপন কারাগারে। রাতের অন্ধকারে গুম করেছে অগণিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণকারী নিবেদিত প্রাণ শক্তিগুলোকে। বঙ্গবন্ধুকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে পাকিস্তান আমেরিকা সহ বেশকিছু রাষ্ট্রের সহযোগিতায়। জিয়া একদিকে দেশের ভেতরে সেনা বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলাতার বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে অন্যদিকে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের ভেতরে গুজব ছড়ার নেতৃত্ব দিয়েছিল বামদের দিয়ে। এই জিয়াই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। খেয়াল করে দেখবেন যে খুন করে তার একটি মাত্র উদ্দেশ্য থাকে খুন করতে হবে। তার মাথায় এর বেশি কোন পরিকল্পনা থাকে না। কিন্তু যে খুন করায় সেই তো জানে কিভাবে হত্যাটি সুসম্পন্ন করা যায়।

আবার যারা খুন করলো তাদেরকে খুনের মামলায় জড়িয়ে কিভাবে ছদ্মবেশে নিজেকে ভালো হিসেবে প্রকাশ করে মূল উদ্দেশ্য আদায় করা যায় জিয়া সেই কাজটি দক্ষতার সহিত সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। একদিকে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব জোরপূর্বক দখল করেছে অন্যদিকে সেনাবাহিনীকে ঢাল করে মাঠ পর্যায়ে যাদের দিয়ে খুনি করিয়েছে তাদের দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দিয়ে প্রকৃত খুনি জিয়া হয়েছিলেন রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তি। একটি বিষয় পরিষ্কার সকল তথ্য, মাঠ পর্যায়ের খুনীদের স্বীকারোক্তিই বলে দিচ্ছে যে এই হত্যার প্রকৃত খুনি জিয়া। এখানে পরিলক্ষিত হওয়ার বিষয় মাঠ পর্যায়ের খুনীদের অনেকের ফাঁসি হলেও প্রকৃত খুনির আঁস্তাকুড়ে মৃত্যু হওয়ার কারণে প্রকৃত খুনির বিচার হয়নি। তবে ইতিহাসের দাবি, ইতিহাসের আক্ষেপ, ইতিহাসের চোখের কান্না, ইতিহাসের দায়বদ্ধতা বলছে মুল খুনির বিচার করতেই হবে। না করলে ইতিহাসের পাতায় প্রকৃত খুনিরা বারবার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাবে আর ইতিহাস হবে কলঙ্কিত।

তাই সময় এসেছে জিয়ার মরণোত্তর বিচার করা। মেজর জিয়ার বিচার করতেই হবে। মেজর জিয়ার মরণোত্তর বিচার যদি জাতি করতে পারতো তাহলে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট সেই নৃশংস হামলার শিকার হতে হতো না বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। একটা চমৎকার বিষয় খেয়াল করুন তো? মেজর জিয়া জিয়া খুনিদের সাথে সকল পরিকল্পনা বাসায় বসে করেছেন আর গোপন জায়গা থেকে নির্দেশনা দিয়ে চুপ করে থেকে ভেতরে ভেতরে সকল রকমের অপতৎপরতা চালিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করালেন এবং নিজে রাষ্ট্রের সুযোগ্য পাকিস্তানি কায়দার সামরিক শাসক হলেন। রক্তের ঋণ কি কেউ ভুলে যায়? রক্ত কখনো বেইমানি করে? খেয়াল করবেন বাপে যে কায়দায় রাতের অন্ধকারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করিয়েছিলেন, ছেলে তারেক জিয়া তার থেকেও  কয়েক ধাপ আপডেট। পিতা গোপনে গোপনে রাতের অন্ধকারে হত্যার নেতৃত্ব দিলেন আর ছেলে গোপনে গোপনে সকল রকমের নির্দেশনা দিলেন এবং বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করলেন প্রকাশে। কিভাবে কেমন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা হয়েছিল কাকে দিয়ে করেছিল তার সকল প্রমাণ মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে। এই খুনের নেতৃত্বে ছিল হাওয়া ভবন। মন্ত্রী-এমপিরা কিভাবে সম্পৃক্ত তাও উঠে এসেছে। সবকিছু দক্ষ হাতে সামাল দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া তারেক জিয়া মিলে শেখ হাসিনাকে বারবার টার্গেট করার বিশেষ দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে।

একটা দিক হচ্ছে মেজর জিয়া যেহেতু বাংলাদেশকে পাকিস্তান রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারেননি সেহেতু শেখ হাসিনাকে হত্যা করে মেজর জিয়ার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে তাদের এই প্রচেষ্টা। দ্বিতীয়ত হয়তো তারেক রহমান, খালেদা জিয়া জেনে গিয়েছিল এবং জানে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত খুনি মেজর জিয়াউর রহমান। তাদের বিশ্বাস এবং ধারণা একথাটি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সহ জাতি জেনে গেছে। তাহলে এখন কি হবে? জাতির প্রাণের দাবি, আত্মার দাবি, আবেগের দাবি, অনুভূতির দাবি শেখ হাসিনা অবশ্যই পূরণ করবেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রকৃত খুনি মেজর জিয়ার বিচার হবে এবং শেখ হাসিনা তা করবেই। কারণ শেখ হাসিনার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। এই সত্যটিকে মুছে ফেলার জন্য এই সত্যটিকে প্রতিষ্ঠা করতে না দেওয়ার জন্য, এই সত্যটি ইতিহাস বহন করুক, এই সত্যটি ইতিহাসের প্রকৃত প্রজন্ম জানুক তা মুছে ফেলতে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য জিয়া পুত্র তারেক জিয়া একুশে আগস্ট নাটের গুরু হয়ে পিতার মত প্রকৃত খুনি হয়ে মাঠ পর্যায়ের চুক্তিভিত্তিক জঙ্গিদের দ্বারা হত্যা সুসম্পন্ন করতে চাইলেন এবং প্রায় সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে।

শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে না পারলেও ২৪ জন নেতাকর্মীকে নৃশসংশভাবে হত্যা করে তারেক জিয়ার পরিকল্পনায়। হামলার পরবর্তী ভূমিকায়ও পিতার দৃশ্যতা। পিতা যেমন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে নেতৃত্ব দিয়ে সুকৌশলভাবে সফল হয়ে খুনিদের বিদেশে পুরস্কৃত করে পাঠিয়েছিলেন ঠিক তেমনি করে যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান তারেক জিয়াও মাঠ পর্যায়ের ১৫ই আগস্টের খুনিরা ফিরেছিল ২১শে আগস্টেচেতনার উপর আঘাত আসতো না, নিষ্পেষিত হতো না। কুখ্যাত তারেক জিয়াও সাহস পেত না বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর বারবার হত্যার পরিকল্পনা করার।

তবে যেটাই হোক আগস্ট মাস আসলেই বাংলাদেশ যেন কেঁপে ওঠে। বাংলাদেশের ইতিহাস যেন একটু ভীতিকর অবস্থায় পড়ে যায়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামাত শিবিরের মোচড়ে কেঁপে ওঠে সারা দেশ। ঝমঝম করতে থাকে এই বুঝি ৭১ এর পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র শুরু হলো। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে বেগম খালেদা জিয়া। অনেক পাপ ও পাপের সাক্ষী বেগম খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার জন্যই শেখ হাসিনার উপর একুশে আগস্ট খালেদা জিয়ার মদদে তারেক জিয়ার নেতৃত্বে সুপরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছিল।

৭৫ এর ১৫ আগস্টের খুনের উদ্দেশ্যে আর ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্যে একই। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসকে রক্ষা করার জন্যই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার খুনিদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে শেখ হাসিনার উপর বারবার এই খুনিদের আঘাত আসবে। মেজর জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের অভিশাপ। কাল সাপের রক্ত কাল সাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। মেজর জিয়ার মরণোত্তর ও তারেক জিয়ার বিচারের মধ্য দিয়ে ইতিহাসকে তার সঠিক প্রাপ্যতা দেওয়ার এখনই উপযুক্ত পরিবেশ।

লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় উপ-কমিটি

এই বিভাগের আরো সংবাদ