কৃষকের বঙ্গবন্ধু এবং আজকের বাংলাদেশ
শিবলী নোমান সরকার
১৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলার মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি।’ সারা দুনিয়ায় এই মাটি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই মাটিতে সোনালি ফসল ফলিয়ে সোনার বাংলা তৈরি করা সম্ভব। কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে সবসময় কাজ করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। কৃষকদের সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল তার। তিনি ছিলেন গরিবের দরদি। বঙ্গবন্ধু কৃষকের মাঠে কৃষকের হাসি দেখতে চেয়েছেন। তাই জাতির পিতা কৃষকের উন্নয়নে নিয়েছিলেন এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। তাদের সব বকেয়া খাজনা ও সুদ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা ও সুদ চিরতরে মওকুফ করে দিয়েছিলেন, যা আজ অবধি বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার মনের মানুষ। তিনি বুঝেছিলেন, কৃষি তথা কৃষকের উন্নয়ন করতে হলে দক্ষ কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু প্রথম বাজেটে কৃষিখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। ২১ দফার প্রতিটা দফাই ছিল কোনো না কোনোভাবে কৃষি ও কৃষকের মঙ্গলকামী। কৃষির উন্নতির জন্য সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। বন্যা ও খরার হাত থেকে কৃষককে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সরকারি ইজারাদারি প্রথা বিলুপ্ত করেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন কৃষি ও কৃষকবান্ধব মানুষ। সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর উন্নত বাংলাদেশ এবং সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য কৃষির উন্নতির কোন বিকল্প ছিল না। সেই লক্ষ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। মানুষের প্রথম চাহিদা খাদ্য আর খাদ্য নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তিনি কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কৃষি উন্নয়ন বলতে বোঝায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে যুদ্ধবিধস্ত এই দেশকে কৃষি অর্থনীতিতে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন কৃষি ও কৃষকের উন্নতি বিধান নিশ্চিত করা না গেলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তিনি স্বপ্ন দেখতেন কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে। এ জন্য তিনি উচ্চতর শিক্ষা গবেষণা প্রশিক্ষণ এবং শহরের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। জাতীয় বৈদেশিক নীতির জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাইÑ
ক. বঙ্গবন্ধু কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। এ কারণে কৃষি কাজে জড়িত উপকৃত হয়েছেন। খাজনা দেওয়ার অক্ষমতা ও জটিলতা হতে মুক্ত হয়ে কৃষকরা আনন্দে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু আমলে খাজনা আদায় থেকে সহজেই মুক্ত হয়েছিলেন।
খ. অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম উপায় সম্পদের সুষম বণ্টন। বঙ্গবন্ধু সম্পদের সুষম বণ্টনে উৎসাহিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তির নামে ১০০ বিঘের উপরে জমি থাকাতে নিরুৎসাহিত করেছেন। অতিরিক্ত জমি ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টন করে ভূমিহীনদের চাষাবাদ করার সুযোগ তৈরি করে দেন। এভাবে কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছেন। পুঁজিবাদী সাম্যব্যবস্থা নিরুৎসাহিত করেছেন।
গ. গ্রাম্যসমাজভিত্তিক গরিব কৃষকদের সহযোগিতার জন্য সদ্য মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
ঘ. স্বাধীনতা পরবর্তীসময়ে প্রায় ২২ লাখের বেশি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিলেন।
ঙ. কৃষকদের উন্নয়নে তিনি প্রথম বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বাজেটে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে কীটনাশক ও সার সরবরাহ করেন। ফলে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে কৃষি উৎপাদন অতীতের যেকোনো সময় থেকে অনেক বেশি উৎপাদিত হয়েছিল। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মী নিয়োগ করেছিলেন।
চ. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ন্যূনতম ন্যায্য মূল্য বেধে দিয়েছিলেন। গরিব কৃষকদের রেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সবুজ বিপ্লব কর্মসূচির আওতায় খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হল কৃষি। এখনও কৃষিতেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও মুক্তি নিহিত। কৃষির এই অমিত সম্ভাবনাকে ঘিরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। জাতির পিতার সূচিত পথ ধরে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এ দেশের কৃষিকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে গত প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদাপূরণে ধারাবাহিকভাবে কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এগিয়ে চলেছে দেশের কৃষিখাত। ফসল উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাইলফলক। বর্তমান সরকারের সুপ্রসারিত কৃষিনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্যিক কৃষি উন্নয়ন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়নসহ কৃষির আধুনিকীকরণ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষিতে ঘটছে নীরব বিপ্লব। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয় এবং আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন সপ্তম স্থানে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ধান, গম, আলুসহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য খাতেই বইছে উন্নয়নের জোয়ার। বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টনেরও বেশি। বছরে আলু উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ২ লাখ মেট্রিক টন। প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। শুধু উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। গত বছর আলু রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মাছ রপ্তানি বেড়েছে ১৩৫ গুণ। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, পাঁচ বছরে চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ৪৮ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। ভিটামিনখ্যাত শাক-সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৩২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। তেল, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার, ২ লাখ ৪ হাজার ও ১ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। ভুট্টার ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণের বেশি। শুধু দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোই নয়, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কৃষি খাতের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কৃষি আমাদের দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। ধান, মাছ, মাংস, আম, পেয়ারা ও ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ করায় কৃষিতে আধুনিকায়ন ঘটেছে। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে কৃষিতে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ, দফায় দফায় সারের দাম কমানো, কৃষকের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন ৩ গুণের বেশি, গম ২ গুণ, সবজি ৫ গুণ ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। সরকারের মনোযোগ, কৃষি গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, উচ্চফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ, সহজ কিস্তিতে ঋণব্যবস্থার কারণে কৃষিতে কাক্সিক্ষত সাফল্য এসেছে। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসেই কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি কুচক্রি মহল বাংলাদেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোককে শক্তিতে পরিণত করে বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে দাঁড় করিয়েছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা খাতওয়ারি বরাদ্দে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কৃষি বাজেটের মধ্যে আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাবদই বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। মহামারী করোনার আঘাতে বিশ্বব্যাপী কৃষির উৎপাদন বা উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত দিকনির্দেশনায় করোনার সময়েও আমাদের কৃষির উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষির হাত ধরে। লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
বঙ্গবন্ধু ছিলেন কৃষি ও কৃষকবান্ধব মানুষ। সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর উন্নত বাংলাদেশ এবং সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য কৃষির উন্নতির কোন বিকল্প ছিল না। সেই লক্ষ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। মানুষের প্রথম চাহিদা খাদ্য আর খাদ্য নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তিনি কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কৃষি উন্নয়ন বলতে বোঝায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে যুদ্ধবিধস্ত এই দেশকে কৃষি অর্থনীতিতে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন কৃষি ও কৃষকের উন্নতি বিধান নিশ্চিত করা না গেলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তিনি স্বপ্ন দেখতেন কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে। এ জন্য তিনি উচ্চতর শিক্ষা গবেষণা প্রশিক্ষণ এবং শহরের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। জাতীয় বৈদেশিক নীতির জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাইÑ
ক. বঙ্গবন্ধু কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। এ কারণে কৃষি কাজে জড়িত উপকৃত হয়েছেন। খাজনা দেওয়ার অক্ষমতা ও জটিলতা হতে মুক্ত হয়ে কৃষকরা আনন্দে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু আমলে খাজনা আদায় থেকে সহজেই মুক্ত হয়েছিলেন।
খ. অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম উপায় সম্পদের সুষম বণ্টন। বঙ্গবন্ধু সম্পদের সুষম বণ্টনে উৎসাহিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তির নামে ১০০ বিঘের উপরে জমি থাকাতে নিরুৎসাহিত করেছেন। অতিরিক্ত জমি ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টন করে ভূমিহীনদের চাষাবাদ করার সুযোগ তৈরি করে দেন। এভাবে কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছেন। পুঁজিবাদী সাম্যব্যবস্থা নিরুৎসাহিত করেছেন।
গ. গ্রাম্যসমাজভিত্তিক গরিব কৃষকদের সহযোগিতার জন্য সদ্য মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
ঘ. স্বাধীনতা পরবর্তীসময়ে প্রায় ২২ লাখের বেশি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিলেন।
ঙ. কৃষকদের উন্নয়নে তিনি প্রথম বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বাজেটে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে কীটনাশক ও সার সরবরাহ করেন। ফলে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে কৃষি উৎপাদন অতীতের যেকোনো সময় থেকে অনেক বেশি উৎপাদিত হয়েছিল। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মী নিয়োগ করেছিলেন।
চ. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ন্যূনতম ন্যায্য মূল্য বেধে দিয়েছিলেন। গরিব কৃষকদের রেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সবুজ বিপ্লব কর্মসূচির আওতায় খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হল কৃষি। এখনও কৃষিতেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও মুক্তি নিহিত। কৃষির এই অমিত সম্ভাবনাকে ঘিরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। জাতির পিতার সূচিত পথ ধরে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এ দেশের কৃষিকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে গত প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদাপূরণে ধারাবাহিকভাবে কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এগিয়ে চলেছে দেশের কৃষিখাত। ফসল উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাইলফলক। বর্তমান সরকারের সুপ্রসারিত কৃষিনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্যিক কৃষি উন্নয়ন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়নসহ কৃষির আধুনিকীকরণ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষিতে ঘটছে নীরব বিপ্লব। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয় এবং আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন সপ্তম স্থানে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ধান, গম, আলুসহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য খাতেই বইছে উন্নয়নের জোয়ার। বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টনেরও বেশি। বছরে আলু উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ২ লাখ মেট্রিক টন। প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। শুধু উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। গত বছর আলু রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মাছ রপ্তানি বেড়েছে ১৩৫ গুণ। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, পাঁচ বছরে চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ৪৮ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। ভিটামিনখ্যাত শাক-সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৩২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। তেল, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার, ২ লাখ ৪ হাজার ও ১ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। ভুট্টার ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণের বেশি। শুধু দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোই নয়, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কৃষি খাতের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কৃষি আমাদের দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। ধান, মাছ, মাংস, আম, পেয়ারা ও ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ করায় কৃষিতে আধুনিকায়ন ঘটেছে। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে কৃষিতে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ, দফায় দফায় সারের দাম কমানো, কৃষকের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন ৩ গুণের বেশি, গম ২ গুণ, সবজি ৫ গুণ ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। সরকারের মনোযোগ, কৃষি গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, উচ্চফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ, সহজ কিস্তিতে ঋণব্যবস্থার কারণে কৃষিতে কাক্সিক্ষত সাফল্য এসেছে। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসেই কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি কুচক্রি মহল বাংলাদেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোককে শক্তিতে পরিণত করে বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে দাঁড় করিয়েছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা খাতওয়ারি বরাদ্দে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কৃষি বাজেটের মধ্যে আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাবদই বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। মহামারী করোনার আঘাতে বিশ্বব্যাপী কৃষির উৎপাদন বা উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত দিকনির্দেশনায় করোনার সময়েও আমাদের কৃষির উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষির হাত ধরে। লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
এই বিভাগের আরো সংবাদ