আজকের শিরোনাম :

আক্রান্ত সিরিয়া : বিশ্ব পুঁজিবাদের আগ্রাসন কে ঠেকাবে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০১৮, ১৭:০৮

কানাই দাশ, ১৪ মে, এবিনিউজ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বপুঁজিবাদের আগ্রাসনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। ১৯১৮ সালে বেলফু’র ঘোষণা অনুযায়ী জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে ইসরায়েল নামক একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সৌদিআরবসহ আমির বাদশাহ শাসিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তল্পিবাহকের ভূমিকা পালন করাতে বিশ্বপুঁজিবাদ মধ্যপ্রাচ্যে সম্পদ লুণ্ঠন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবসময় একটি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। কিন্তু যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার পতনের ধারায় বহু দেশ বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে কোথাও গণঅভ্যুত্থান, কোথাও সামরিক বাহিনীর দেশপ্রেমিক সেনা- নায়কদের নেতৃত্বে জনকল্যাণে প্রতিশ্রুত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে থাকে। পুরো মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বব্যাপী সেই জাগরণে প্রাণিত হয়ে উঠে। ইরানে-ইরাকে, মিশরে, সিরিয়ায় এ পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে এবং এসব দেশে ক্ষমতায় দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী শক্তি চলে আসে। এসব সরকারগুলো স্বাধীন জাতীয় অর্থনীতি বিকাশে নানা প্রগতিশীল কর্মসূচি নেয়। মিশরের কর্ণেল জামাল আবদুল নাসেরের নেতৃত্বে প্রগতিশীল আরব জাতীয়তাবাদের উত্থান এক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী মিশরে অবস্থিত অথচ ব্রিটিশ মালিকানাধীন আন্ত মহাসাগরীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান নৌপথ সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করেন। সাথে সাথেই সেই ১৯৫৬ সালে ব্রিটেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স একত্রে মিশর আক্রমণের জন্য ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। কালবিলম্ব না করে সোভিয়েত রাশিয়ার তৎকালীন নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ যুদ্ধজাহাজ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তাদের ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। তখনি কেবল ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসী শক্তি নিবৃত্ত হয় ও মিশর বিশ্ব পুঁজিবাদের আগ্রাসন থেকে বেঁচে যায়। ১৯৭০এর দশকে ইরাক ও সিরিয়ায় বাথ-পার্টি নামে সেক্যুলার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট শক্তি ক্ষমতায় আসে ও সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। সিরিয়ায় বাশার ও ইরাকে সাদ্দাম গড়ে তোলে বহুজাতিক কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত তেল বিপণন ব্যবস্থা। উন্নতমানের ইরাকি তেল লুণ্ঠনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় ইঙ্গ-মার্কিন কর্পোরেট হাউসগুলো। ইরানে সেই পঞ্চাশের দশকে মোসাদ্দেক সরকার পুরো তেল শিল্পকে জাতীয়করণ করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মোসাদ্দেক সরকারের পতন ঘটানো হয় ইঙ্গ-মার্কিন- সৌদি চক্রান্তে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থান থেকে সোভিয়েত রাশিয়া তখন উত্তাল মধ্যপ্রাচ্যের পুরো প্রগতিশীল পরিবর্তনে নির্ধারক শক্তির ভূমিকা পালন করে। সিরিয়ার বাশার, ইরাকের সাদ্দাম, মিশরের নাসের প্রমুখ প্রগতিশীল আরব জাতীয়তাবাদীরা ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি-মার্কিন-ইসরায়েলী অক্ষের চিহ্নিত দুশমন। ১৯৬৯ সালে ক্ষমতা দখল করে কর্ণেল গাদ্দাফি লিবিয়ার তেল শিল্পের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে নিয়ে নেন ও তেল বিক্রির বিপুল রাজস্ব লিবিয়ার জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে থাকেন। এঁদের কারো কারো মধ্যে দ্বিধা ও দোদুল্যমানতা, সুবিধাবাদ ও স্বৈরাচারী নৃশংসতা পরিলক্ষিত হলেও তাঁরা ছিলেন প্রায় সবাই সেকুলার, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে মোটামুটি প্রতিশ্রুত। আমরা দেখেছি ইসলামী বিপ্লবের পর ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। ‘অবাধ্য’ ইরানকে এখনো বাগে আনতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত রাশিয়ার বিপর্যয়ের পর আরব দুনিয়ার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। একক পরাশক্তি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য গণতন্ত্রের নামে জোরপূর্বক সাদ্দাম, গাদ্দাফি ও আসাদকে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ‘নয়-এগারো’র ঘটনার সাথে সাদ্দাম ও ইরাকের কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরেও ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র রাখার প্রমাণিত মিথ্যা অজুহাতে জুনিয়র বুশ ও ব্লেয়ার ইরাকে সরাসরি সৈন্য পাঠায় ও প্রচন্ড বোমাবর্ষণ করে বাগদাদ, বসরা, কারবালা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করে। সোভিয়েত রাশিয়া টিকে থাকলে সাম্রাজ্যবাদ এ অপকর্ম করতে কোনদিন যে সাহসী হত না তা সাধারণ মানুষও এখন বলে থাকে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে আজ ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী ইরাককে ধ্বংস করে শিয়া-সুন্নি ও কুর্দি সম্প্রদায়ে কার্যত তিন ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। ভেঙে দেয়া হয় সাদ্দামের শক্তিশালী সেনাবাহিনী। বিশ্বপুঁজিবাদের এ অপকর্মের একটাই লক্ষ্য ছিল, তা হল বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের বিশাল ইরাকী তেল সম্পদ লুণ্ঠন। ইতোমধ্যে ক্ষুব্ধ সুন্নি প্রধান সাদ্দামের সাবেক সেনাবাহিনীর অনেক সেনাসদস্য ও চরমপন্থীরা গড়ে তোলে কুখ্যাত ‘আই.এস’। আমেরিকার সেনা উপস্থিতিতেই সেই গোষ্ঠী ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা জুড়ে বিনা বাধায় গড়ে তোলে তাদের নিজস্ব এক খেলাফত। হত্যা, নির্যাতন ও দুঃশাসনে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার নারী-পুরুষ এক আতঙ্কের মধ্যে বাস করতে থাকে। এশিয়া ইউরোপে বিভ্রান্ত তরুণদের দিয়ে এরা চালায় নৃশংস হত্যা ও সন্ত্রাস। আর এটার জন্যেই অপেক্ষা করছিল যুক্তরাষ্ট্র যাতে এ অজুহাতে ইরাকে অবস্থান দীর্ঘায়িত করে তেল পাচার ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পুনর্গঠনের কাজ হাতিয়ে নেয়া যায়। ইতোমধ্যে বোমা মেরে প্রকাশ্যে বৃটিশ বাহিনী হত্যা করে গাদ্দাফিকে। স্বাধীনচেতা সেকুলার ও সর্বশেষ জনপ্রিয় নেতা হিসেবে এখনও আসাদ সিরিয়ার ক্ষমতায়। এজন্য বিশ্ব পুঁজিবাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য সিরিয়া। আসাদের বিরুদ্ধে সেই পুরোনো গণতন্ত্রহীনতার ধুয়া তুলে নামানো হয় সশস্ত্র বিদ্রোহীদের। সৌদি আরব, তুরষ্ক, ইসরায়েল, আমেরিকা প্রকাশ্যে সশস্ত্র সমর্থন দেয় সেই বিদ্রোহীদের। আসাদের অবস্থা যখন সংকটাপন্ন তখন নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে ইতোমধ্যে অনেকটা পুনর্গঠিত ও সুসংহত রাশিয়া মাঠে নামে। পুতিন দৃঢ়ভাবে সর্বাত্মক সাহায্য নিয়ে দাঁড়ায় আসাদের পাশে। আসাদ ও তাঁর সেনারা ঘুরে দাঁড়ায় রুশ সাহায্য ও অস্ত্রে। ভূ-মধ্যসাগরে অবস্থান নেয় রুশ যুদ্ধ জাহাজ। ইরানও সিরিয়ার পাশে দাঁড়ায়। আসাদ শুধু টিকে যায়নি রুশ সৈন্য ও অস্ত্রের সাহায্যে সামান্য কিছু এলাকা ছাড়া পুরো সিরিয়া আই.এস ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাত থেকে ইতোমধ্যে পুর্নদখল করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগে বৃটেন-ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্র গত ১৪ এপ্রিল ভোর থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দামেস্ক ও তার আশেপাশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে কিন্তু রুশ সাহায্যে আসাদ সরকারের সামরিক অবস্থান অটুট রয়েছে। রাশিয়া ইতোমধ্যে সিরিয়াতে আরো সৈন্য ও আধুনিক সমর সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে বৃহৎ শক্তি হিসেবে চীন সমর্থন দিয়েই তার ইতিকর্তব্য শেষ করেছে।

এই সংঘাতে পাঁচ বৃহৎ শক্তির মধ্যে একমাত্র চীনের কোন সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা নেইণ্ড না আর্থিক, না সামরিক। অথচ কনটেন্টের দিক থেকে এ সংঘাত কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্ব পুঁজিবাদের সম্পদ লুণ্ঠনের দুর্বৃত্তায়িত অভিযান ও এর বিপরীতে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সেখানকার দেশগুলোর জাতীয় মুক্তির মরণপণ লড়াইয়ের অংশমাত্র। খণ্ডিত ও আর্থ-সামরিক দিক থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল পুঁজিতান্ত্রিক বর্তমান রাশিয়া নিছক তার ভূ-রাজনৈতিক কৌশল থেকে আসাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে যা আবার প্রকারান্তরে পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বিরোধী ঐতিহাসিক ভূমিকার সাথে মিলে যায়। পুতিন দৃঢ়ভাবে আসাদের পাশে না দাঁড়ালে সিরিয়ার অবস্থা অনেক আগেই ইরাক ও লিবিয়ার মতন হত। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এক মেরু বিশ্বে বিশ্বপুঁজিবাদের এ অব্যাহত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কে কিভাবে রুখে দাঁড়াবে এবং কে বিশ্ব পরিসরে এ-দায়িত্ব নেবে সোভিয়েত-রাশিয়ার অবর্তমানে, নাকি পৃথিবী আবার হিংস্র শ্বাপদের মাৎসন্যায় নীতির নিরাপদ চারণভূমিতে পরিণত হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি বিশ্ব পুঁজিবাদের আগ্রাসী তৎপরতা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অমিত শক্তির সক্রিয় বিরোধিতার কারণে নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৯০ সালের পরে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বেপরোয়া রূপ ধারণ করেছে। এ সময় একের পর এক দেশ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক জোট। বিশ্বব্যাপী বিস্তার করেছে ধর্মান্ধ সন্ত্রাসের কালো ছায়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে বিশ্বপুঁজিবাদের এই সামরিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে সোভিয়েত রাশিয়া। আজ স্বাভাবিকভাবে এ দায়িত্ব পালন করার কথা কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত, আর্থিক ও সামরিক শক্তিতে বিশ্বে দুই নম্বর অবস্থানে থাকা চীনের। দুঃখের বিষয় চীন কখনো সেই ভূমিকা পালন করেনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ধ্বংসলীলা সত্ত্বেও সোভিয়েত রাশিয়া সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে চীন সহ সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ও সদ্য স্বাধীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পুনর্গঠিত ও শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছে। শুধু চীনে ১৯৫০ এর দশকে ২৫০টির মত ভারী ও মৌলিক শিল্প কাঠামো সোভিয়েত রাশিয়া নিজের প্রযুক্তি ও খরচে তৈরি করে দেয় যাতে বিশ্ব পুঁজিবাদের আর্থিক অবরোধ চীন মোকাবেলা করতে পারে। সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই চীনের আজকের সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের মত অনেক দেশ সোভিয়েতের সক্রিয় সাহায্যে স্বাধীনতা লাভ করেছে। শক্তিশালী বিশ্ব পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিশ্ব বিপ্লবী প্রক্রিয়ার অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করার কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিকের অবশ্য কর্তব্য পালন করতে গিয়ে, সাম্রাজ্যবাদের সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে যে আর্থিক ঝুঁকি সোভিয়েতকে নিতে হয়েছে তা তার পরবর্তী বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। পাশাপাশি আজকে বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় পরাশক্তি হিসাবে, বৃহৎ সামরিক শক্তি হিসাবে দূরে নয় পার্শ্ববর্তী আফগানিস্তানে ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির উত্থান রোধে, আমেরিকার সামরিক আগ্রাসন ঠেকাতে চীনের কোন দৃশ্যমান ভূমিকা অনুপস্থিত। সিরিয়ায়-ইরানে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বর্তমানে চীনের কোন কার্যকর ভূমিকা আমরা দেখিনা। আমাদের মনে করতে কষ্ট হয়, এই চীনই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাক-মার্কিন চক্রের সক্রিয় সহযোগী ছিল। ’৭১ সালে নৃশংস ও নজির বিহীন গণহত্যার জন্য দায়ী দেশ হিসেবে পাকিস্তান ও আমেরিকার সাথে চীনের কথাও অবশ্যই বলতে হয়। তার প্রথম ভেটো ক্ষমতা জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে চীন। আজন্ম প্রতিক্রিয়াশীল, ধর্মান্ধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সেবাদাস, অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী পাকিস্তানের মত একটি রাষ্ট্রের একদম নির্ভরযোগ্য বন্ধু কি করে হয় একটি সমাজতান্ত্রিক (!) দেশ? মনে পড়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জয়ী রণক্লান্ত বিধ্বস্ত ভিয়েতনামকে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চীন সরাসরি আক্রমণ করে বসে। ১৯৬২ তে ম্যাকমোহন লাইন অতিক্রম করে ভারত ও ১৯৬৯ সালে উশুরী নদীর সীমান্তে রাশিয়া আক্রমণ করে প্রথমে চীনই। ১৯৫০ সালে কোরীয় যুদ্ধ ছাড়া জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে বিজয়ী এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার কোন দেশ তাদের সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে চীনকে পাশে পেয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। সর্বাগ্রে জাতীয় স্বার্থ ও সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট হাউসের কায়দায় বাজার দখল ও ক্রেডিট সাপ্লাই সহ নানা কৌশলে বিভিন্ন দেশে ব্যবসা হাতিয়ে নিয়ে আর্থিক সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখাই চীনের বর্তমান উন্নয়ন রণকৌশল। পুঁজিবাদের সহজাত লুণ্ঠন বৃত্তি, দুর্বৃত্তায়নের বিপরীতে দুর্বল দেশগুলোকে রক্ষা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিশ্ব বিপ্লবী প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে নিপীড়িত বিশ্ব মানবতা ও বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত, আর্থিক ও সামরিক দিক দিয়ে এ সময়ে বৃহৎ শক্তি চীনের উপর নিঃসংশয়ে ভরসা রাখতে পারছে কিনা এটাই বিবেচনার বিষয়, কেননা সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ শুধু কোন মৌলিক কমিউনিস্ট নৈতিকতা নয় তা মানব মুক্তির সংগ্রামের এক অনিবার্য রণকৌশল ও নৈতিক সংহতির বিষয়- যা সমাজতান্ত্রিক বলে দাবিদার একটি দেশের জাতীয় স্বার্থের মতই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে চীনের যথাযথ ভূমিকা সিরিয়ার মত আক্রান্ত দেশগুলোকে রক্ষা করতে পারত।  (সংগৃহীত)

এই বিভাগের আরো সংবাদ