আজকের শিরোনাম :

মানবকল্যাণে পূজা হোক ব্যতিক্রমী

  তপন কুমার রায়

২০ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ

দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলো। পৃথিবীর জীবনমৃত্যু সন্ধিক্ষণেও সকল প্রকার আতঙ্ক, শঙ্কা, ভয়ভীতি কাটিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজা হচ্ছে। তবে কেমন হচ্ছে এবারের উদযাপন? সীমিত পরিসরে, সরকারি নিয়ম-নীতি, পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেশ-নিষেধ এসব শাব্দিক প্রয়োগ কতটুকু প্রভাবিত করতে পারে সেটা দেখভাল করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই। হোক না এবারের পূজা উদযাপন সাদামাটা। আগামীর জীবন রাঙাতে সাদামাটার স্বাদটা তো নেয়া যেতেই পারে।

করোনার সংকট থেকে আমাদের মুক্তি মিলে নাই। করোনার প্রতি আমাদের আগ্রহের নজরদারি সরে আসলে করোনার থাবা আমাদেরকে নজরবন্দি করে রেখেছে ঠিকই। এমন সংকটকালীন মুহূর্তে এবারের পূজা উদযাপনে আমাদের ব্যক্তি ও সামষ্টিক দায়িত্ববোধের পরীক্ষা দিতে হবে। পূজা উদযাপনে গত আগস্টে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ২৬টি নির্দেশনা প্রদান করে। সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগও এবারের পূজা পালনে ১১ টি গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন প্রদান করেছে। প্রসাদ বিতরণ ও শোভাযাত্রায় জোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিভাগ। সবশেষ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকেও এবার ঢাকায় কুমারী পূজা এবং শোভাযাত্রা যে হচ্ছে না সংবাদ সন্মেলনে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। 

মোট কথা আমাদেরকে সীমিত আকারেই এবার পূজা করতে হবে। মানবকল্যাণে এবারের উদযাপন ব্যতিক্রমী হওয়া চাই চাই। দুর্গতিনাশিনী মায়ের আগমন আর সম্ভাষণে একটু ব্যক্তিক্রম উদযাপনে মায়ের আরাধনায় এতটুকু অসন্তুষ্টি আসবেনা বোধ হয়। তবে আমাদের জাগতিক অসন্তুষ্টি আমাদের সর্বনাশ আনতে পারে। জগতের সর্বনাশ হতে পারে। একটু সুক্ষ্মভাবে ভাবলে এই অসন্তুষ্টি দূর করা যেতেই পারে। এবারের দুর্গা পূজা উদযাপনে ভিন্নতা প্রকৃতিগত। এবার পূজো শরৎকালে হচ্ছেনা। শারদীয়া দুর্গোৎসবের যে পরম্পরা ছিল সেই রেকর্ড এবার ভাঙতে বসেছে। এবার পূজো হচ্ছে হেমন্তকালে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হলেও বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী তখন মল মাস হওয়ায় এবার পূজা প্রায় এক মাস পিছিয়ে শরৎকালীন পূজা হেমন্তে এসে ঠেকেছে। শারদীয় দুর্গাপূজার পরম্পরা ভেঙে এবার পূজা বাংলা কার্তিক মাস তথা হেমন্তে উদযাপনে যে ভিন্নতা তার পুঁজি করে ধর্মীয় আচার-নিয়ম ঠিক রেখে জাগতিক কিছু আচার-নিয়ম পরিহার করে এবারের পূজো সাদামাটা হওয়াটা অতীব জরুরি। বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করে জাঁকজমকহীন উদযাপনে আমাদের মানসিক প্রশান্তি আনতে হবে। বেচে থাকলে এই তো আসছে বছর আবার হবে। ধুমধাম করেই হবে। বিশালাকার মন্ডপ হবে, দেশের শ্রেষ্ঠ পূজার প্রতিমা হবে। ঝলমলে উজ্জ্বল আলোকসজ্জা হবে। অন্যথায় কবি তারাপদ রায়ের কবিতার ন্যায় উচ্চারণ করা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা- 

"আমরা বুঝতে পারিনি
আমাদের কবে সর্বনাশ হয়ে গেছে।"

লেখক: শিক্ষানবিশ পুলিশ উপ-পরিদর্শক

এই বিভাগের আরো সংবাদ