আজকের শিরোনাম :

ক্ষমা চাইলেন অনন্ত জলিল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ২০:২৮

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল দেশ। এরমধ্যেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে এক ভিডিও বার্তায় হাজির হয়ে উল্টো নারীর পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। 

শনিবার (১০ অক্টোবর) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপ করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় সংবাদ। এরপর শনিবার বিকালে কিছুক্ষণের জন্য ভিডিওটি সরিয়ে নেন তিনি। সমালোচিত অংশ ফেলে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবার আপলোড করেন নিজের ফেসবুক পেজে।

সংশোধিত ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি বলেন, গতকালকের ভিডিওতে আমি মূলত মেয়েদেরকে শালীনতা বজায় রাখার জন্য বলতে চেয়েছি। অনেকেই বিষয়টিকে পজিটিভভাবে নিয়েছেন। আবার অনেকেই নেগেটিভভাবে নিয়েছেন। আমি কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না। তাই আমি উক্ত বিষয়টি কারেকশন করে দিলাম। কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। 

তিনি বলেন, এখন বলছি আমার প্রিয় ভাইয়েরা, একবার চিন্তা করে দেখেন, আপনারা যা করছেন, তা ঠিক করছেন কিনা। এর আগে আমি তুই, তোমারি (তোকারি) করেছি, সেজন্য আমি সরি। একবার চিন্তা করেন, নিজের বোন যদি, নিজের মা যদি এ ধরনের সমস্যায় পড়েন, তখন মাথায় রক্ত উঠবে কিনা। আপনার যদি একটু মনুষত্য বেঁচে থাকে, তাহরে একবার চিন্তা করেন তখন কি অবস্থা হবে আপনার। তাই যতদিন বাঁচবেন ভালো কাজ করে যান। এমন কিছু করে যান, যার জন্য সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে, বন্ধু-বান্ধবের কাছে অমর হয়ে থাকবেন।

ধর্ষণের কারণ হিসেবে নারীর পোশাককে দায়ী করার এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ করে আসছে নারী অধিকার কর্মী থেকে শুরু করে সমাজবিদরা। ধর্ষকদের 'শিক্ষা দিতে'ই অনন্ত জলিল হাজির হয়েছিলেন তার ভিডিও বার্তায়। কিন্তু কথা প্রসঙ্গে তিনি চলেন যান নারীর পোশাকেরও আলোচনায়।

সরিয়ে নেওয়া সেই ভিডিও বার্তায় নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, তোমাদের অশালীন ড্রেসের কারণে তোমাদের ফিগারের দিকে তাকিয়ে বিভিন্নভাবে মন্তব্য করে এই বখাটে ছেলেরা এবং রেপ করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে। তাই 'ভাই হিসেবে' তিনি নারীদের 'শালীন' পোশাক পরার আহ্বান জানান।

এরপরই শুরু হয় সমালোচনা। তার ভিডিওতেই কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন অনেকে।

বখাটেদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি শরীর আচ্ছাদনের কথাও বলেন সেই ভিডিওতে। পাশ্চাত্যের পোশাক 'ফলো করে' তা পরিধানে নিষেধ করেন তিনি। বলেন, এইসব ড্রেস-আপ দেখে চেহারার দিকে না তাকিয়ে বখাটেরা তোমার ফিগারের দিকে তাকায়, এরপর বিভিন্ন মন্তব্য করে এবং রেপ করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে।

'মডার্ন' জামাকাপড়ের প্রসঙ্গ তুলে জলিল বলেন, তোমরা কি নিজেদের মডার্ন মনে করো? এটা কি মডার্ন ড্রেস? না অশালীন ড্রেস। এটা মডার্ন ড্রেস হতে পারে না। মডার্ন ড্রেস হবে যেখানে ফেস দেখা যাবে যেটা আল্লাহতায়লা দিয়েছেন। কিন্তু যে বডিটা আছে সেখানে শালীনভাবে পোশাক পরতে হবে। নিজেকে পাশের একজন ভদ্রমেয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখো, তোমাকে কত বাজে লাগে দেখতে।

নারীদের টিশার্ট পরার কারণে 'ইজ্জত শেষ' হয়ে যায় উল্লেখ করে অনন্ত আরো বলেন, ছেলেদের মতো একটা টিশার্ট পরে বের হয়ে যাও, মডার্ন মেয়ে তুমি! খুব মডার্ন! তারপর ইজ্জত শেষ করে আত্মহত্যা করো না হয় মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারো না, এটা কি মডার্ন? শালীন ড্রেস পরলে যারা বখাটে যাদের মাথায় ধর্ষণের চিন্তাভাবনা আছে তারা তোমার দিকে শ্রদ্ধার দিকে তাকাবে। এরপর চোখ নিচের দিকে নিয়ে নেবে।

 

'ধর্ষকদের শিক্ষা দিলেন অনন্ত জলিল' শিরোনামে ওই ভিডিওবার্তার শুরুতে অনন্ত জলিল ধর্ষকদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের সামনে তোমাদের স্ত্রী কন্যাকে যদি কেউ রেপ করে, তাহলে তোমার কেমন লাগবে? তুমি তো একটা অমানুষ, তোমার ভালোই লাগবে মনে হয় না? না হলে তো অন্যের মেয়েকে, অন্যের মা বোনকে রেপ করতে পারতে না। তোমার যে মনুষত্ব সেটা তো মরে গেছে।

ভিডিও বার্তার শেষ দিকে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জানান এই চলচ্চিত্র অভিনেতা। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনি আমাদের অভিভাবক। আপনাকেই শক্ত হাতে এসব অমানুষের মৃত্যুদণ্ডের আইন ও বাস্তবায়নের সুব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আপনার দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে, আপনি কখন নির্দেশনা দেবেন।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ