আজকের শিরোনাম :

মাদককাণ্ড: বলিউডে রাজনীতি ও পুরুষতন্ত্রের যোগাযোগ

  ডয়চে ভেলে

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র মুখোমুখি হওয়ার আগে দীপিকা, শ্রদ্ধা ও সারা
বলিউড তারকাদের মাদক গ্রহণ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া খুবই সরগরম। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীনদের আগ্রহও দেখার মতোই। এ ঘটনায় ক্ষমতার রাজনীতির পাশাপাশি পুরুষতন্ত্রের যোগাযোগ দেখছেন অনেকেই।

সরকার ও বিজেপির বিরোধীরা বলছেন, বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটে রাজপুত ভোট টানতেই সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্র। সেই তদন্তে সুশান্তর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ আনা হয়েছিল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার।

অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্তকারী সংস্থা ইডি সেই অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ জোগাড় করতে না পারায় তদন্তের ভার চলে গেল ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের হাতে। তারই জেরে একে একে ডাক পড়লো অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন, সারা আলী খান ও শ্রদ্ধা কাপুরের।

অভিযোগ, অভিনেত্রীরা সবাই গাঁজা ও অন্যান্য মাদকের নেশা নিয়মিত করতেন। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী, কলাকুশলীরা যে গাঁজা-চরস ইত্যাদি খান, সেটা কি এই প্রথম জানা গেল?‌ এমন প্রশ্ন এখন অনেকের।

চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চিত্র সমালোচক অনিরুদ্ধ ধর সহ-পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন অপর্ণা সেনের ‘‌মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার’ ছবিতে। তিনি জানান, মুম্বাইয়ের দুই বর্ষীয়ান শিল্পী ভীষ্ম সাহানি ও সুরেখা সিক্‌রি ওই ছবিতে অভিনয় করতে এসেছিলেন। আউটডোরে প্রতিদিনের শুটিংয়ের পর তাদের দুজনকে গাঁজা খেতে খেতে গল্প করতে দেখা যেতো। কিন্তু তার প্রভাব তাদের কাজে কখনো পড়েনি। ভোরবেলা যত অসময়েই শুটিংয়ে হাজির হওয়ার থাকতো, তারা নির্ভুল ওই সময়েই পৌঁছে যেতেন। অর্থাৎ, নেশা করার জন্য তাদের পেশাদারির কোনো ঘাটতি চোখে পড়েনি।

আরেক বিখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহর কথাও জানিয়েছেন অনিরুদ্ধ ধর, যিনি মজা করে বলতেন, গাঁজা না খেলে ভালো অভিনয় করা যায় না।

কিন্তু চলচ্চিত্রের জগতে গাঁজা-চরসের পেছনে পড়ে যাওয়ার অন্য কারণও আছে মনে করেন অনিরুদ্ধ। তার কথায়, ‘‌‘‌নেশা করে তারা যে মারাত্মক একটা কিছু করেন, দেশ বিরোধী কিছু করেন, তা তো নয়!‌ কিন্তু তা হলে তাদের এ রকম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কেন?‌ আমার মনে হয়, এটার পেছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। যেমন কিছুদিন আগে দীপিকা পাড়ুকোন জেএনইউ-তে গিয়েছিলেন। তাকে একটা শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপার ছিল। এভাবে, যারাই সরকারবিরোধী কথা বলছেন, সরকারবিরোধী মনোভাব পোষণ করছেন, তাদের একটা ইঙ্গিত দেওয়া যে, এই সব করলে তোমাকে খুনখারাবির চার্জে তো ফেলা যাবে না, কিন্তু নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে দেবো!‌’’

সুশান্তর মৃত্যুর ঘটনায় এখনো পর্যন্ত প্রধানত নারীদেরই বেশি জেরার সামনে পড়তে হচ্ছে। মাদক নেওয়ার প্রশ্নেও অভিযুক্ত মূলত তারাই। রিয়া চক্রবর্তী থেকে দীপিকা পাডুকোন, সবাই অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ করেছেন বলে সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের একাংশ তুলে ধরছে।

এ বিষয়ে অভিনেত্রী গুলশনারা খাতুন মনে করেন, এর পেছনে পুরুষতন্ত্রের চিরকালীন রাজনীতি কাজ করছে। দীপিকাকে নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর জেরার দিন তার পক্ষে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন গুলশনারা। গণহারে রিপোর্ট করে সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে।

গুলশনারার সোজা কথা, ‘‌‘‌বিজেপি, আরএসএস যে ভারতমাতার রূপটি তুলে ধরে, তা পুরুষতন্ত্র যেভাবে নারীদের দেখতে চায়, সেই ছাঁচেই। এবং এই ছাঁচেই বিশ্বের প্রতিটি নারী পড়বে, এটাই তারা প্রমোট করতে চায়, তারা বিশ্বাস করে এবং এটাই তাদের প্রচার। এই ছাঁচের বাইরে যখনই কোনো মেয়ে এই চরিত্রের বাইরে অন্যরকম একটি চরিত্র হয়ে ওঠে, যা তাদের পুরুষতন্ত্রের বিরোধী, বা তাদের তৈরি করে দেওয়া যে সামাজিক রীতিনীতি, তার বিরোধী, তখনই তাকে রাজনৈতিক দিক থেকে এবং রাষ্ট্রনৈতিক দিক থেকে অপমান করার একটা প্রয়াস চলতে থাকে। এই প্রয়াস ভীষণভাবে রাজনৈতিক এবং পুরুষতান্ত্রিক।’’

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ