আজকের শিরোনাম :

জহরের কপালে চুম্বন এঁকে দিয়ে সুচিত্রা সেন বলেছিলেন, তুমি চলে গেলে চার্লি!

  দিব্যেন্দু ঘোষ/জি নিউজ

১১ আগস্ট ২০২০, ১২:২৯ | আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২০, ১২:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

১৯৭৭-এর ১১ অগাস্ট। মেডিক্যাল কলেজ থেকে একটা শোকমিছিল এগোচ্ছিল বিধান সরণি ধরে। বেথুন কলেজের সামনে এসে থেমে গেল মিছিলটা। মিছিল একটা গাড়ির মুখোমুখি। গাড়ি থেকে নামলেন সুচিত্রা সেন। ধীর পায়ে লরিতে উঠলেন। সেখানে নিথর শুয়ে এক কঙ্কালসার দেহ। যে দেহ সুগার, লিভারের অসুখ আর তিন তিনবার জন্ডিসে ঝাঁঝরা। রমা নীরব তাঁর বন্ধুকে দেখে। ধীর কণ্ঠে বললেন, 'তুমি চলে গেলে চার্লি!' তার পর নিচু হয়ে ছোট্ট একটা চুম্বন এঁকে দিলেন বাংলার চার্লি চ্যাপলিনের কপালে। জহর রায়কে এই নামেই ডাকত রুপোলি দুনিয়া। কিন্তু বাংলার চার্লির অন্তিম যাত্রায় ইন্ডাস্ট্রির লোকজনকে খুব বেশি দেখা যায়নি। হাতে গোনা কয়েকজন সতীর্থ। কেন এই অবজ্ঞা! দুরন্ত এক শিল্প আর তার অসামান্য শিল্পীর এই নিয়তি, এই পরিণতি তো হওয়ার ছিল না। কিন্তু দুরন্ত পণ্ডিত, শৌখিন জহরকে ভীষণ পছন্দ করতেন সুচিত্রা। বন্ধুর কাছে বারবার 'রেডি উইট চুটকিলা' শুনতে চাইতেন। সেই মহানায়িকা তাঁর সমস্ত স্টারডম ঝেড়ে ফেলে ছুটে এসেছিলেন প্রাণের বন্ধুর শেষযাত্রায়। চোখের কোল কী নিদারুণ ভিজেছিল! কেঁদেছিলেন হাউ হাউ করে। বারবার বলেছিলেন, 'চার্লি, তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না!'

বাংলার চার্লি কি আর সাধে নাম হয়েছিল! চ্যাপলিনের এক-একটা ছবি আট-দশবার করে দেখতেন। দুনিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কমেডিয়ানের প্রতিটি ভঙ্গি, প্রতিটি মুভমেন্ট গুলে খেতেন জহর। দাঁড়িপাল্লায় তুলেছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মাকেও! ১৯৫৮ সালে মুক্তি পায় 'ভানু পেলো লটারী'। এই সিনেমারই একটি গানে লিপ দেন জহর। 'ব্রহ্মা যখন দাঁড়িপাল্লায়'। অদ্ভুত লিরিক। যেন জহর রায়কে মাথায় রেখেই গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার গানটি লেখেন। দুরন্ত চিত্রায়ণ বাংলার চার্লির। সুর দেন নচিকেতা ঘোষ। গেয়েছিলেন শ্যামল মিত্র।

'ব্রহ্মা যখন দাঁড়িপাল্লায়
তোমায় আমায় তুলল ভগবান।
আমার চেয়ে তোমার ওজন
বেশি কি, সমান সমান।
.....
ঠাকুর তুমি পল্কা
তোমার ওজন হাল্কা
তাই তো তুমি তুড়ি লাফে
পৌঁছে গেলে আসমান।
.....
যতবার মনে করি
প্রভু আমি যে তোমায় গড়ি
তাই তো আমি তোমার চেয়ে
অনেক শক্তিমান।'

অসামান্য অভিনয় দিয়ে গানের কথায় আরও হাস্যরস ঢেলে দেন জহর রায়। যোগ্য সঙ্গত দেয় শ্যামল মিত্রের গায়কী। বাংলার চার্লির প্রথম সিনেমায় সুযোগ পাওয়াও দ্য গ্রেট ডিক্টেটরের দৌলতেই। দেশ স্বাধীনতার বছর। পরিচালক অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায় 'পূর্বরাগ' সিনেমাটি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সটান তাঁর কাছে হাজির জহর। অডিশনে জহর চার্লি চ্যাপলিনের 'দ্য গ্রেট ডিক্টেটর'-এর পার্ট করলেন। আর তাতেই পেয়ে গেলেন সুযোগ। তারপর তো ইতিহাস। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে সে কী দাপট। একাই উতরে দিতেন এক-একটা ছবি। ভানু-জহর জুটি মাইলস্টোন তৈরি করে দেয় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ