আজকের শিরোনাম :

করোনাভাইরাস : থমকে গেছে বলিউড

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২০, ১৩:০৫

গত মাসের এ রকম একটা সময়ে বিশ্বজুড়ে বলিউডের ফিল্মের ভক্তরা ছিলেন অধীর অপেক্ষায়। পরিচালক রোহিত শেঠির ‘সুরিয়‌াভানশি’ বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ২৪ মার্চ। ছবির নির্মাতারা বক্স অফিস থেকে বিপুল মুনাফার আশা করছিলেন। কারণ ভারতে এক সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে ছবির মুক্তির তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সব উলট-পালট করে দিল। ভারতে এই মহামারি ঠেকাতে ২১ দিনের লকডাউন জারি করা হলো।

‘সুরিয়‌াভানশি’র মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেয়া হলো। একইভাবে স্থগিত হয়ে গেল পরিচালক কবীর খানের মুভি ‘এইটি-থ্রি’র মুক্তিও। ১৯৮৩ সালে ভারত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এই ছবির কাহিনী সেই ঘটনা নিয়ে। এতে অভিনয় করেছেন রণবীর সিং এবং দীপিকা পাডুকোন। ১০ এপ্রিল এটির প্রিমিয়ার হওয়ার কথা ছিল।

ইউটিউব চ্যানেল ‌‘ফিল্ম কম্পানিয়ন‌’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কবীর খান বলেন, এরকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজটি ছিল বেশ কঠিন। এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে দেখানোর জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে যা আমাদের এই ছবির চেয়েও বড়। আজ গোটা পৃথিবী যেন এক জায়গায় থমকে আছে। ছবি দেখা এখন মোটেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাপার নয়।

শুধু যে নতুন ছবির মুক্তি থেমে আছে তা নয়।

অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত তার নতুন ছবি ‘থালাইভি’র শুটিং করছিলেন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাডুতে। তার পর জারি হলো লকডাউন।

বলিউডের এক নিউজসাইট ‘পিংকভিলা’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার সেখানে থাকার কথা ছিল ৪৫ দিন। কিন্তু তার পর একটা দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য আমাদের লোকজনের ভিড় দরকার ছিল, কিন্তু আমাদের সেটির অনুমতি দেয়া হয়নি। এর পর শুটিং বন্ধ হয়ে গেল, আমি মুম্বাইতে ফিরে আসলাম।’

অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোনে অবশ্য বলছেন, তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবতী’ মনে করেন, কারণ ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে তার শ্রীলংকায় যাওয়ার কথা ছিল একটি ছবির শুটিং করতে।

সাংবাদিক রাজীব মাসান্দকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভাগ্য ভালো যে আমরা মুম্বাই ছেড়ে যাইনি। আমরা কোথাও গিয়ে আটকা পড়িনি। আমি এমন অনেককে জানি, যাদের একটা ফিল্ম শেষ করার জন্য আর মাত্র কয়েকদিনের শুটিং বাকী ছিল।’

বলিউডের তারকাদের হাতে যেন হঠাৎ করে অঢেল সময়। কিছু করার নেই। এই অবসরে তাই অনেকে সোশ্যাল মিডিয়া টাইমলাইনে তাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা টুকিটাকি শেয়ার করছেন।

যেমন দীপিকা পাডুকোনে আর ক্যাটরিনা কাইফ তাদের ঘরের নানা কাজ-কর্ম করছেন- রান্না-বান্না, বাসন-কোসন ধোয়া এবং ঘর সাজানো। আর আলিয়া ভাট আর হৃত্বিক রোশন নাকি নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করছেন।

তবে করোনাভাইরাসের মতো একটি গুরুতর সংকটের ব্যাপারে ‘সংবেদশনশীলতা‌’ না দেখানোর কারণে অনেকে সমালোচনার মুখেও পড়েছেন।

পরিচালক ফারাহ খান ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তার কয়েকজন বিখ্যাত বন্ধুকে এই বলে হুমকি দিয়েছেন যে, তারা তাদের শরীরচর্চার ভিডিও দেয়া বন্ধ না করলে তিনি তাদের ‘আনফলো’ করতে বাধ্য হবেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি আপনারা বেশ সুবিধাভোগী শ্রেণীর মানুষ। এই বিশ্ব মহামারির সময় আপনাদের আর কোন চিন্তা নেই, কেবল ‘ফিগার’ ঠিক রাখাটা নিয়েই আপনারা চিন্তিত। কিন্তু এই সংকটে আমাদের আরও অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয়।’

কিছু তারকা অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করছেন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সে ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে। কার্তিক আরিয়ান তার ফিল্ম ‘পেয়ার কা পাঞ্চনামা‌’র একটি দৃশ্যের অনুকরণে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এই সংকটের সময় কেন সবার ঘরে থাকাটা এত জরুরি, সেই বার্তা তিনি তুলে ধরেছেন এই দৃশ্যটির সংলাপ বদলে দিয়ে। ইনস্টাগ্রামে এটি এক কোটি বারের বেশি দেখেছে মানুষ।

চলচ্চিত্র জগতের আরও অনেকে তাদের মতো করে সাহায্যের চেষ্টা করছেন এই দুর্যোগে। অক্ষয় কুমার এবং আনুশকা শর্মা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতীয় তহবিলে দান করেছেন। লকডাউনের কারণে যে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের সাহায্য করা হয় এই তহবিল থেকে। প্রযোজকদের একটি সংস্থাও একটি তহবিল গঠন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পে যারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে তাদের সাহায্য করার জন্য।

কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ আরও অনেক বাড়ানো হতে পারে এমন জল্পনার মধ্যে প্রযোজকরা আশংকা করছেন বলিউডের কাজের ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

চলচ্চিত্র পরিচালক করন জোহর তার পরবর্তী ছবি ‘তখত’ এর শুটিং এপ্রিলে শুরু করবেন বলে কথা ছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক ছবি। তার টিম এরই মধ্যে ইউরোপে এটির শ্যুটিং এর জন্য সেট তৈরি শুরু করেছিল। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে করন জোহর বলেছেন, এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন।

‘ফ্লোরেন্সের একটা প্রাসাদে আমরা শ্যুটিং শুরু করেছিলাম, আমরা স্পেনের আলহামরাতেও শুটিং করছিলাম। গত কয়েক বছর ধরে আমরা এই জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে বাছাই করেছি। এই মুহূর্তে এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করছি না। এর পর কী ঘটবে, সেটা নিয়েই চিন্তা।’

করন জোহর ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযোজকদের একজন। তার দুটি ছবি মুক্তির জন্য তৈরি আছে। আর নির্মাণাধীন আছে আরও সাতটি ছবি।

তিনি বলেন, ‘এটি তো গেল কেবল ধর্ম প্রোডাকশান্সের কথা। প্রতিটি কোম্পানি, প্রতিটি স্টুডিওর পরিস্থিতি এখন এ রকম। আমরা এখনো জানিনা, কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কত মানুষ সিনেমা দেখতে যাবে।’

যেসব ছবির মুক্তি স্থগিত হয়ে গেছে, সেগুলো পরে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেয়া হলেও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

তবে ‘এইটি-থ্রি’র পরিচালক কবীর খান আশাবাদী। তিনি আশা করছেন ৪ মাসের মধ্যেই হয়তো বলিউড আবার গতি পাবে।

করোনাভাইরাস সংকটে গরিব মানুষ যে দুর্ভোগের মুখে পড়েছে, তার তুলনায় যে বলিউডের পরিচালক এবং তারকাদের সমস্যা কিছুই নয়, সেটি তারা উপলব্ধি করেন।

অভিনেতা ভিকি কৌশাল প্রতিদিনের খবরে যা দেখছেন তাকে ‌‘মর্মান্তিক’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি আশা করছেন, এই সংকটে তার অনুরাগীরা ‌‘যতটা সতর্ক এবং দায়িত্বশীল হওয়া দরকার’ তা হবেন এবং চেষ্টা করবেন জীবনের ছোটখাট বিষয় থেকেই আনন্দ খুঁজে পেতে।

অনেকটা একইভাবে দীপিকা পাডুকোনে বলেন, আমাদের এখন সেসব বিষয়েই মনোযোগ দিতে হবে যা আমাদের কিছুটা হলেও আনন্দ দেবে, আশা দেবে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ