হলিউডে এশীয় তারকাদের শক্ত অবস্থান
দ্য গার্ডিয়ান
০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ
রোমান্টিক কমেডি থেকে মার্ভেল ব্লকবাস্টার—হলিউডে এশিয়ার তারকারা ঈর্ষণীয় সাফল্যে ভাসছেন। আসছে মার্ভেলের এশীয় সুপারহিরো
দি এজ অব স্টিভেনসন (২০১৬) ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চীনা বংশোদ্ভূত কানাডীয় অভিনেতা হেইডেন সুজেটো। এ ছবিতে এরউইন কিমের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শক-সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ছবিতে শ্বেতাঙ্গ অভিনেত্রী হেইলি স্টেইনফেল্ডের সঙ্গে সুজেটোর প্রেমের অধ্যায় ছিল।
হেইডেন সুজেটোর সেই অভিনয়ের পর কেটে গেছে তিন বছর। এ সময়ের মধ্যে হলিউডে এশীয় তারকাদের উপস্থিতি এবং প্রভাবের চিত্র একেবারে বদলে গেছে। এখনকার ছবিতে এশীয় অভিনেতাদের সঙ্গে হলিউড অভিনেত্রীর প্রেম পরিণতিও পাচ্ছে। মালয়েশিয়ার অভিনেতা হেনরি গোল্ডিংয়ের লাস্ট ক্রিসমাস মুক্তি পেয়েছে গত মাসে। এ ছবিতে হেনরিকে প্রেম করতে দেখা গেছে ব্রিটিশ অভিনেত্রী এমিলিয়া ক্লার্কের সঙ্গে। এ বছর নেটফ্লিক্সের ছবি অলওয়েজ বি মাই মেবি ছবিতে কিয়ানু রিভসকে দেখা গেছে একটি ক্যামিও চরিত্রে। কিন্তু কিয়ানুর উপস্থিতি সত্ত্বেও কোরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান অভিনেতা র্যান্ডাল পার্ক দর্শকদের মন জয় করেছেন।
২০২১ সালে মার্ভেলের সিনেমা জগতের প্রথম এশীয় সুপারহিরোকে দেখা যাবে। চীনে জন্ম নেয়া কানাডীয় অভিনেতা সিমু লিউকে দেখা যাবে মার্ভেলের প্রথম এশীয় সুপারহিরো ছবি শ্যাং-চি অ্যান্ড দ্য লিজেন্ড অব দ্য টেন রিংস-এ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই ‘অদৃশ্য সংখ্যালঘু’ একটি অংশ হলিউডের মেইনস্ট্রিমের অংশ হয়ে উঠেছে। পূর্ব এশিয়ার অভিনেতারা এখন আর হলিউডে পার্শ্ব-অভিনেতা নয়, বরং ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন। তাদের চরিত্রগুলো এখন দর্শকরা দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। লারা ক্রফট: টম্ব রেইডার ছবিতে অভিনয় করেছেন ডেভিড সে। তিনি বলেন, ‘পূর্ব এশিয়ার দিকে তাকালে দেখা যাবে রোমান্টিক চরিত্র এবং নায়কের ভূমিকায় অনেক সুদর্শন অভিনেতা অভিনয় করছেন। এশিয়াজুড়ে এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু পশ্চিমা দুনিয়ায় এশীয় অভিনেতাদের নিয়ে বর্ণবাদী আচরণ দেখা যায়। এ নিয়ে এশিয়ার অনেক বড় অভিনেতা-অভিনেত্রী বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।’
বিশ শতকের প্রথম দিকে হলিউডের পূর্ব এশিয়ার গল্প নিয়ে তৈরি যেকোনো ছবি কিংবা হলিউডি ছবিতে পূর্ব এশিয়ার কোনো চরিত্র থাকলে তাকে প্রায় অবশ্যম্ভাবীভাবে দেখানো হতো মার্শাল আর্ট নিয়ে উৎসাহী হিসেবে। কিন্তু প্রেম বা যৌনতায় তাদের যেন কোনো ভূমিকা নেই। এশীয় তারকারা সুদর্শন হতে পারে কিন্তু হলিউডে তাদের কোনো রোমান্টিক ভূমিকা নেই। এ ধারা এমনকি সেদিনের ছবি দি এজ অব স্টিভেনসন-এও (২০১৬) দেখা গেছে। এরউইন কিমের চরিত্রটি ম্যাড়মেড়ে, আগুন ধরানো রোমান্টিক হিরোর নয়। এ রকম ধারার সবচেয়ে বাজে উদাহরণটি ছিল ২০০০ সালের ছবি রোমিও মাস্ট ডাই। ছবিতে মূল দুই চরিত্রে ছিলেন জেট লি এবং আমেরিকান অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী আলিয়াহ। ছবিতে এ এশীয় অভিনেতা এবং পশ্চিমা অভিনেত্রীর প্রেম ছিল একেবারে সাদা-কালো যুগের। অনেক সাধারণ দৃশ্যকেও কেটে ফেলা হয়েছিল।
লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিও অভিনীত দ্য বিচ ছবিতে অভিনয় করেছেন ড্যানিয়েল ইয়র্ক লোহ। তিনি হলিউডে এশীয় অভিনেতাদের নিয়ে স্টেরিওটাইপিং প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটা একবারেই বিশ্রী ব্যাপার। হলিউডের ছবিতে পূর্ব এশিয়ার অভিনেতাদের অনাকর্ষণীয়, কিংবা কখনো নিষ্ঠুর ভূমিকায় দেখানো হয়।’ ইয়র্কের মতে, হলিউডের এই স্টেরিওটাইপিংয়ের পেছনে রয়েছে বর্ণবাদ।
২০১৪ সালে চালানো এক জরিপে দেখা গিয়েছিল পশ্চিমে এশীয় পুরুষদের গড় মানের চেয়ে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ কম আকর্ষণীয় মনে করেন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ এবং লাতিন মেয়েরা। এমনকি খোদ চীনেই যেসব পুরুষের চেহারা পশ্চিমা ধাঁচের, তাদের বেশি আকর্ষণীয় বিবেচনা করা হয়।
হেনরি গোল্ডিংই এশিয়ার অন্যতম অভিনেতা, যিনি পশ্চিমের বর্ণবাদী ধারণাকে পাশ কাটিয়ে হলিউডের মূল স্রোতে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন। ক্রেজি রিচ এশিয়ানস ছিল সব এশীয় শিল্পী অভিনীত প্রথম ব্লকবাস্টার। তার পর থেকে পেছনে ফিরে তাকাননি গোল্ডিং। ২০১৯ সালে করেছেন লাস্ট ক্রিসমাস। ২০১৮ সালে থ্রিলার আ সিম্পল ফেভার। ২০২০ সালে গোল্ডিংকে দেখা যাবে গ্যাংস্টার থ্রিলার দ্য জেন্টেলম্যান-এ। ডেভিড সে মনে করেন, এটা একটা দারুণ বাঁক বদলের ঘটনা। ‘হেনরি পূর্ব এশিয়ার মানুষদের নিয়ে গত শতকের ঔপনিবেশিক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।’
সামনে দেখা যাবে সিমু লিউকে সুপারহিরো ছবি শ্যাং-চি অ্যান্ড দ্য লিজেন্ড অব দ্য টেন রিংস-এ। শুধু এশীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি সুপারহিরো ছবি তৈরির সিদ্ধান্তটিকে সন্ধিক্ষণ হিসেবে দেখছেন অনেক সমালোচক। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হলিউড এটা মেনে নিচ্ছে যে আমরা একটা মিশ্র সংস্কৃতির দুনিয়ায় বাস করি। এবং এ দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বড় পর্দায় তাদের উপস্থিতি দেখতে টিকিট কেটে সিনেমা হলে যায়। বক্স অফিসে ব্ল্যাক প্যান্থার-এর সাফল্য এ বাস্তবতাকে নিশ্চিত করেছে। ডেভিড সে আশাবাদী যে অদূর ভবিষ্যতে হলিউডে আরো অনেক এশীয় তারকাকে জায়গা করে নিতে দেখা যাবে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ