আজকের শিরোনাম :

বাংলাদেশের সিনেমায় ‘হাজির বিরিয়ানি’ গানটি নিয়ে যতরকম বিতর্ক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৫১

ভিডিও দেখার ওয়েবসাইট ইউটিউবে গানটি ছাড়া হয়েছে চলতি মাসের ১৪ তারিখে - এরপর এই চার দিনেই গানটি দেখা হয়েছে প্রায় দশ লক্ষ বার।

গানটির নিচে কমেন্টের সংখ্যাও সাড়ে চার হাজারের মতো। সেখানে গানটি নিয়ে হাস্যরস করা হয়েছে প্রচুর। বেশ কিছু প্রশংসাও অবশ্য আছে, তবে সমালোচনা রয়েছে ঢের।

ইউটিউবে ছাড়া গানটির ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক তরুণ একটি বস্তি এলাকা দিয়ে কোন-কিছু-পরোয়া-করে-না এমন এক ভঙ্গিতে হেটে যাচ্ছেন। এরপর লম্বা এক টান দিলেন সিগারেটে। গানের বিষয়বস্তু বিবেচনায় অবশ্য সেটিকে গাঁজা বলেও মনে করতে পারেন অনেকে।

এক পর্যায়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা তার। চোখে মুখে কোন অনুতাপ নেই বরং রয়েছে উল্লাস। সাথে যুক্ত হচ্ছেন পাড়ার আরও অনেক তরুণ। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে গান।

২০১৮ সালের নভেম্বরে মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা জাজ মাল্টিমিডিয়ার তৈরি 'দহন' চলচ্চিত্রের এই গানটির শিরোনাম 'হাজির বিরিয়ানি'। তবে আলোচনা-সমালোচনা চলছে গানটির কথা নিয়ে।

গান আর চলচ্চিত্রটিতে মাদক ব্যবসা আর মাদকাসক্তি নিয়ে সামাজিক সমস্যার গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ। কিন্তু গানটি নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার আগেই।

শোয়েব তরফদার জাজ মাল্টিমিডিয়ার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, "ভাষার ব্যবহার জঘন্য, মদ গাজা, বাবা, আর হিসু করবে দেওয়ালে - এসব কি?"

আরিয়ান ধ্রুব লিখেছেন, দেশে যখন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে, মাদকের গ্রাস থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে যখন সবাই সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে, তখন এভাবে মাদককে উৎসাহিত করার কোন মানে হয় না।

তবে জিএম তামিম সরকার ব্যাপারটিকে দেখছেন একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। তিনি লিখেছেন, জাজ মাল্টিমিডিয়ার বুদ্ধি আছে! এমনভাবে বাজে লিরিকস্‌ লিখেছে, যার কারণে গানটি সমালোচিত হয়েছে! আর সমালোচনা মানেই হিট!!!!!


পরিচালক রায়হান রাফী বলছেন সিনেমার চরিত্রটি অসুস্থ মস্তিষ্কের একটি ছেলে। গানটিতে কি মাদক ব্যবহারকে রোমান্টিসাইজ করা হয়েছে?

গানটির ভিডিওতে প্রায় পুরো সময় জুড়ে স্ক্রিনে 'ধূমপান ও মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর', এমন সতর্কবার্তা লেখা রয়েছে।

'মাতাল হয়ে হিসু করবো দেয়ালে....' অথবা 'গাঁজা দে রে টানি' - গানটির এমন কথা নিয়েই চরম আপত্তি অনেকের।গানটির ইউটিউব ভিডিও এবং এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পাতায় অনেকেই কমেন্ট করে লিরিকস্‌ের কঠোর সমালোচনা করছেন। গানটিতে ভাষার ব্যবহারেরও সমালোচনা করা হয়েছে।

এই লিরিকস্‌ দিয়ে মাদক ব্যবসা বা মাদকাসক্তির মতো গুরুতর সমস্যাকে হালকা করে ফেলা হল কি-না, অথবা এই গানটি উল্টো ছেলেমেয়েদের 'নষ্ট' হতে উৎসাহ যোগাবে কি-না, এমন আলোচনাও চলছে।

তবে আব্দুল আজিজ বলছেন ভিন্ন কথা।

"আমরা এই গানটার মাধ্যমে এই ছেলেটির চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে চাচ্ছি - দেখবেন যে পুলিশ দৌড়চ্ছে, মদ খাচ্ছে, লাফালাফি করছে। ও যে কতখানি ফালতু এবং থার্ড ক্লাস মেন্টালিটির ছেলে, এই জিনিসটা আমরা গানটির মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি," বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

কী বলছেন চলচ্চিত্রটির পরিচালক

ছবিটির পরিচালক রায়হান রাফী বলেন, "আমাদের গল্পের চরিত্রটি একটি বস্তিতে বেড়ে উঠেছে। তার বাবা-মা নেই। যার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হল আজ রাতে সে কিছু একটা নেশা করবে।"

"অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এই ছেলেটা। গালি ছাড়া কথা বলে না। নেশার টাকার জন্য অনেক কিছু করতে পারে সে, সেটাই আসলে এখানে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।"

মি. রাফী বলেন, "আমাদের গল্পের যে ক্যারেক্টার, সেটি নিয়ে অনেকদিন ধরে গবেষণা করেছি। বস্তিতে গিয়ে আমাদের টিম কাজ করেছে।"

গানটির গীতিকার, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক - সবাই কোলকাতার।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত এদেশের কেউ এমন ভাষায় গান লেখার সাহস করবেন কি-না, সেটিও আলোচনায় টানা হচ্ছে।

পরিচালক রায়হান রাফী এ প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা বাংলাদেশের একজন শিল্পীকেই চেয়েছিলাম এবং সেই শিল্পী ভয়েসও দিয়েছিলো। কিন্তু আমরা আসলে যে লেভেলের গানটা চাচ্ছিলাম, সেরকম হচ্ছিলো না।"

গানটি দিয়ে কি কাটতি বাড়ানো চেষ্টা হচ্ছে?

সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগেই গানটির মাধ্যমে প্রচারণা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে যে সমালোচনা হচ্ছে তার জবাবে রায়হান রাফী বলছেন, যে গানটি সবচাইতে আগে প্রস্তুত হয়েছে, সেটিই আগে ছাড়া হয়েছে।

তিনি বলেন, "আমারও মন হয় গানটির ভাষা পছন্দ হওয়ার মতো না। এটা নিয়ে পরিচিত লোকজনও আমাকে কথা বলেছে। এটা খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মনে হয় ছবিটি যখন মানুষ দেখবে, তখন আর গানটা খারাপ মনে হবে না।" বিবিসি বাংলা। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ