আজকের শিরোনাম :

যেভাবে সঙ্গীতজগতকে পাল্টে দিয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৮, ১০:২১

বিশ্ববাসীর কাছে ‘কিং অব পপ’ হিসেবে পরিচিত মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সঙ্গীতের জগতের কিংবদন্তিদের মধ্যে অন্যতম। 

তার সঙ্গীতপ্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে জীবনে একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ভক্তদের কাছে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন প্রযোজনা, গান রচনা, অভিনয় ও বিশেষ করে তার নাচের জন্য।

বিভিন্ন বিভাগে মোট ১৩ বার পশ্চিমা সঙ্গীতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত ‘গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন মাইকেল জ্যাকসন।

উপস্থাপনায় সৃজনশীলতা, গানের সাথে মানানসই মনমুগ্ধকর নৃত্য, ব্যক্তিগত আদর্শ, জীবনযাপনের ধারাসহ আলোচিত-সমালোচিত নানা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তার সময়কার সঙ্গীত জগতে তুমুল আলোড়ন তৈরি করেছিলেন মাইকেল জ্যাকসন।

১৯৮২ সালে প্রকাশিত হওয়া মাইকেল জ্যাকসনের ষষ্ঠ একক অ্যালবাম ‘থ্রিলার’ বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় থেকেই তাকে ‘কিং অব পপ’ বলা শুরু হয়।

দীর্ঘসময় ধরে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যবসাসফল গানের অ্যালবামের স্থানটি দখল করেছিল ‘থ্রিলার’।

কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের অনেকেই মনে করেন, সে সময়কার সঙ্গীতজগতে বিদ্যমান বর্ণবৈষম্য দূর করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মাইকেল জ্যাকসনের।

তাকে বলা হতো সর্বপ্রথম কৃষ্ণাঙ্গ তারকা, যিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন। মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা সে সময়কার উদীয়মান আফ্রিকান-আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে দারুণ অনুপ্রেরণা তৈরি করেছিল।

আশার, কেইন ওয়েস্ট, উইকন্ড’-এর মতো এখনকার অনেক জনপ্রিয় কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীই বলেছেন তারা মাইকেল জ্যাকসন দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত।

তার অভিনব মিউজিক ভিডিও
১৯৮৩ সালে ‘থ্রিলার’ গানের মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার আগে ১৪ মিনিট ধরে একটি গানের ভিডিও দেখার কথা হয়তো কেউ চিন্তাও করেননি।

ওই ভিডিওর মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও সম্পর্কে সে সময়কার মানুষের প্রথাগত ধারণাই বদলে দিয়েছিলেন জ্যাকসন।

‘থ্রিলার’ এর ভিডিওতে মাইকেল জ্যাকসনকে ‘ওয়্যারউলফ’ (পশ্চিমা উপকথার কাল্পনিক দানব) বেশে মৃতদেহদের সাথে নাচতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ভিন্নধর্মী গ্রাফিক্স ও স্পেশাল ইফেক্ট মিউজিক ভিডিওর বাজারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে।

ওই গানের ভিডিওতে মাইকেল জ্যাকসনের নাচের মুদ্রাগুলো তখন যতটা আলোড়ন তুলেছিল, সেগুলো এখনো ততটাই রোমাঞ্চ তৈরি করে ভক্তদের মনে।

জানা যায়, ‘থ্রিলার’-এর মিউজিক ভিডিও বানাতে ৫ লাখ ডলারের বেশি অর্থ খরচ হয়, যা ওই সময়ের বিবেচনায় অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল।

‘থ্রিলার’-এর বিস্ময়কর সাফল্যের পর মাইকেল জ্যাকসনকে ‘সঙ্গীতের বাজারের একক উদ্ধারকর্তা’ খেতাব দেয় ‘টাইম’ ম্যাগাজিন।

পরবর্তী সময় ‘স্মুথ ক্রিমিনাল’, ‘ব্ল্যাক অর হোয়াইট’, ‘বিট ইট’-এর মতো দুর্দান্ত ব্যবসাসফল ভিডিও প্রকাশ করেন জ্যাকসন।

তার নাচ...এবং অবশ্যই, ‘মুনওয়াক’
মাইকেল জ্যাকসনের নাচের সবচেয়ে অভিনব অংশটি ছিল একটি বিশেষ মুদ্রা, যাকে ‘মুনওয়াক’ বলা হতো। এ ‘মুনওয়াক’-এর সময় জ্যাকসন বিশেষ ভঙ্গিমায় স্টেজের ওপরে এমনভাবে হেঁটে বেড়াতেন, যে দেখে মনে হতো তার গোড়ালি স্টেজ স্পর্শ করছে না।

নাচের মুদ্রাগুলোকে এতটাই সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতেন জ্যাকসন, যে কখনো কখনো মনে হতো নাচের মধ্যেও স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করেছেন তিনি।

অধিকাংশ গানের ভিডিও তৈরির জন্য জ্যাকসনকে কতটা কঠোর প্রস্তুতি নিতে হতো, তা ‘স্মুথ ক্রিমিনাল’সহ আরও অনেক ভিডিওতে তার পারফরমেন্স দেখে বোঝা যায়।

‘লাইভ’ কনসার্টের জাদু
টিভি পর্দায় মাইকেল জ্যাকসনের নাচ-গানই ভক্তকূলের হৃদয় জয় করে নিয়েছিল। কিন্তু ‘লাইভ’ কনসার্টে তার পারফরমেন্সে বিমোহিত হতে বাধ্য হয়েছে জ্যাকসন বিদ্বেষীরাও। অফুরন্ত জীবনীশক্তি আর প্রাণবন্ততা দিয়ে স্টেজ মাতানোয় খ্যাত ছিলেন তিনি।

দীর্ঘসময় ধরে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনুষ্ঠান করা বা ‘মেগা ট্যুর’-এর ধারণাকে জনপ্রিয়তা দেন জ্যাকসন।

তার ১৯৯২ সালের ‘দ্য ডেঞ্জারাস ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ চলে টানা পাঁচ মাস। সে সময়ের মধ্যে ৬৯টি কনসার্টে অংশ নেন তিনি।

২০০৯ সালে ‘দিস ইজ ইট’ নামের আরেকটি ‘মেগা ট্যুর’ আয়োজনের পরিকল্পনা করছিলেন মাইকেল জ্যাকসন, যেখানে মোট অনুষ্ঠান হতো ৫০টি। তার শেষ লাইভ পারফরমেন্স হিসেবে ঘোষণা করা হতো ওই অনুষ্ঠানগুলোকে।

খ্যাতির বিড়ম্বনা
মাইকেল জ্যাকসন তার কর্মজীবনে অচিন্তনীয় সাফল্য পেলেও তার ব্যক্তিগত জীবন সমালোচিত ছিল নানা বিতর্কে। সাফল্যের শীর্ষে থাকা অবস্থায় তার ব্যক্তিগত জীবনের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়কে কেন্দ্র করে একের পর এক অভিযোগ তোলা হয়।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০০০ সালের পর কয়েকবছরের জন্য নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নেন জ্যাকসন।

অবিশ্বাস্য সহজাত প্রতিভা ও উদ্ভট ব্যবহারের এক মিশ্রণ হিসেবে ভক্ত-সমালোচকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন।

আর এই বিরল মিশ্রণের কারণেই মাইকেল জ্যাকসনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে গণমাধ্যম. সাধারণ মানুষ ও সমালোচকদের ব্যাপক আগ্রহ, যা তাকে সমসাময়িক অন্যান্য তারকাদের তুলনায় আলাদা একটি ভাবমূর্তি দিয়েছে।

জীবনের শেষদিকে তার চামড়া ফিকে হয়ে যেতে শুরু করে। সঙ্কুচিত হয়ে যেতে থাকে তার নাকও।

এমনটা শোনা যায় যে, তিনি জোসেফ মেরিকের হাড়ও কেনার চেষ্টা করেছিলেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া জোসেফ মেরিক তার জীবদ্দশায় বিভিন্ন ধরণের শারীরিক বৈকল্য ও অঙ্গবিকৃতিতে ভোগেন।

নানা ধরনের শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়া জোসেফ মেরিক ওই সময়কার চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে জায়গা করে নেন।

জোসেফ মেরিকের রহস্যময় জীবনের ব্যাপারে সবসময়ই আগ্রহী ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন।

এ ঘটনার কিছু দিন পরেই একাধিক শিশু নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে জ্যাকসনের বিরুদ্ধে। তবে বিভিন্ন বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও, মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কখনই।

মাইকেল জ্যাকসনের জীবনের শেষ কয়েকটা বছর কাটে জাঁকজমকপূর্ণ কনসার্টের মাধ্যমে সঙ্গীতজগতে রাজসিক প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করে। যেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি তার অসময় মৃত্যু।

২০০৯ সালের ২৯ আগস্ট ৫০ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ