আজকের শিরোনাম :

২০২১ সালেও ঘুচবে না চরম দারিদ্র্য : আশঙ্কা বিশ্বব্যাংকের

  এএফপি

১০ জুন ২০২০, ১৩:১০ | অনলাইন সংস্করণ

করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে চলতি বছর ব্যাপক আকারে কমবে বিশ্বের গড় প্রবৃদ্ধি। এমনকি কোন কোন দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। মহামারি কেটে গেলে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী বছর ঘুরে দাঁড়াবে। তবে করোনা মারামারির কারণে এ বছর যে বিশাল জনগোষ্ঠী অতি দরিদ্র হয়ে পড়বে, আগামী বছরও সে সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক।

গতকাল মঙ্গলবার (০৯ জুন) এক ব্লগ পোস্টে এ সতর্কবার্তা দিয়েছে সংস্থাটি। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ওই ব্লগ পোস্টে বিশ্বব্যাংক বলছে, বিশ্বের মোট দরিদ্রের এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাস করে নাইজেরিয়া, ভারত ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। এই দেশগুলোর মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হবে যথাক্রমে মাইনাস শূন্য দশমিক ৮, ২ দশমিক ১ এবং শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে, এই দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, ১ শতাংশ ও ৩ দশমিক ১ শতাংশ। দরিদ্রের সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট নয়।

বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, মহামারির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি বাড়বে দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতে। বিশ্বব্যাপী ১৭ কোটি মানুষের দৈনিক আয় ৩ দশমিক ২০ ডলারের (২৭১ টাকা) নিচে নেমে আসবে। এই ১৭ কোটির দুই–তৃতীয়াংশ হবে এশিয়ার মানুষ।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০’–এ চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও কমে ১ শতাংশে আসতে পারে বলে মনে করছে তারা। এ ছাড়া এ বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হবে বলছে বিশ্বব্যাংক। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাথাপিছু আয় কমবে।

করোনায় সবকিছু বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক বলেছে, লকডাউনের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের মতো দেশে ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগ ব্যাপকভাবে কমেছে। এসব দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলো হলো বেসরকারি খাতের প্রাণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ব্যাপক পরিমাণ কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ হারিয়েছে। পল্লি এলাকায় খাবার ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহও বিঘ্নিত হয়েছে। সম্প্রতি লকডাউন শিথিল করায় এসব দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা পরিস্থিতি প্রকট হলে দারিদ্র্য বাড়বে। এই অঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক খাতে বিপুলসংখ্যক লোক কাজ করেন। করোনা মহামারি তাদের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় খাবারের মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি আছে। দেশগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ভারসাম্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (৮ জুন) ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০’ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ব্লগে এই বিশ্লেষণ দিয়েছে তারা। সংস্থাটি বলছে, গত ৮০ বছরের মন্দে সবচেয়ে বড় মন্দায় পড়েছে বিশ্ব। এই করোনা মহামারির কারণে চলতি বছর ৭ থেকে ১০ কোটি মানুষ চরম দরিদ্র হয়ে পড়বে। মহামারির আগে বিশ্বব্যাংকের ‘চরম দারিদ্র্য’ বলতে ওই মানুষকে বলা হতো, যিনি প্রতি দিন ১ দশমিক ৯০ ডলারের (১৬১ টাকা) চেয়ে কম অর্থে জীবনযাপন করেন। এখন তা কমিয়ে আনা হচ্ছে।

তবে আগামী বছর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ হতে পারে। তবে যেসব দেশগুলোয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি, তাদের প্রবৃদ্ধি জনসংখ্যার অনুপাতে অতটা বাড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ২০২০ সালে যারা চরম দরিদ্র হয়ে পড়ছেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত তাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ