আজকের শিরোনাম :

ফিরছে বিনিয়োগকারী, বাড়ছে লেনদেন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:২৯

শেয়ারবাজার বিনিয়োগে তফসিলি ব্যাংকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেওয়ায় শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে মূল্য সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। যা এক বছরের মধ্যে বাজারটিতে সর্বোচ্চ লেনদন। যদি মূল্য সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ এভাবে বাড়তে থাকে তবে, শেয়ারবাজারে বাড়বে বিনিয়োগকারীদের আস্থা। বাড়বে লেনদেনের পরিমাণ।

গত ৫-১৪ জানুয়ারি শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঘটে। এ সময় লেনদেন হওয়া ৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৭ কার্যদিবসেই বড় পতন হয়। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ৪২৩ পয়েন্ট কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্তারা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিএসইসি ঘোষণা দেয়, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে শেয়ারবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরপর ১৯ জানুয়ারি শেয়াবাজারে বড় উত্থান হয়। এতে একদিনেই ডিএসইতে ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন বাড়ে। আর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশের ওপরে।

এর আগে, ৯ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে শেয়ারবাজার শক্তিশালী করতে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক বাজারে আসছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও  বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়া হবে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের কিছুটা সময় লাগবে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের শেয়ার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, শেয়ারবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুইটি বাজারে আছে। এই বছরের মধ্যে আমরা সব ভালো কাজ করতে চাই। প্রত্যেকটি ব্যাংক লাভজনক অবস্থানে আছে। সুতরাং পুনঃঅর্থায়নের কোনো প্রয়োজন নেই। এ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আমরা পুনঃঅর্থায়ন করিনি।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন’ একটি সার্কুলার জারি করে। সেখানে বলা হয়- দেশের প্রত্যেক ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। নিজস্ব উৎস বা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। পাঁচ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। যা পাঁচ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সাত শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।

সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঢাকা অফিস থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পুনর্গঠন, দ্রুত বিকাশ ও কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৭ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে)। থার্ড ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএমডিপি-৩) আওতায় দ্বিতীয়বারের মতো এই পরিমাণ ঋণ অনুমোদন করে ব্যাংকটি।

এর ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে মূল্য সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে চলছে। প্রায় এক বছর পর গতকাল (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৯০০ কোটি ছাড়িয়ে হাজার কোটি টাকার দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। সূচক একদিনেই প্রায় ১৭০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনকৃত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৮২ শতাংশের দাম বাড়ে এবং মাত্র ১১ শতাংশের দাম কমে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। যারা বিনোয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিল তারা আবার বিনোয়োগে এগিয়ে আসবে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে স্টেকহোল্ডারদের একটি পক্ষ পুঁজিবাজারে বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে শেয়ারবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তহবিল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছিল না। এখন তহবিল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে দেশের প্রত্যেক ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করা এবং বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পুনর্গঠন, দ্রুত বিকাশ ও কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৭ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

অনেকের মতে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে গেলে শক্তিশালী শেয়ারবাজারের বিকল্প নেই। আর যদি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ না করে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা সরকার না দেখে তাহলে শক্তিশালী শেয়ারবাজারের আসা কখনোই করা যায় না। সবকিছু ঠিক থাকলে শেয়ারবাজারের আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর রূপান্তর ঘটবেই।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ