আজকের শিরোনাম :

সিঙ্গেল ডিজিটে সুদহার : সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৯

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনার জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিঠি গঠন করা হবে। এই কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

রোববার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণের সাথে মতবিনিময় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এসময় অর্থমন্ত্রী বলেন, “এই কমিটির কাজ আজ থেকেই শুরু হবে। কীভাবে ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে আনা যায় সে বিষয়ে পর্যালোচনা করে এই কমিটি রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামী জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে আদালতের আদেশ অনুযায়ী সুদ হার নেওয়া হবে।’

‘আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ নন-পারফরমিং লোন (এনপিএল-ঋণখেলাপি)। আমি বলেছিলাম ঋণখেলাপি বাড়বে না, বরং সামনে ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণের হার কমবে। কিন্তু আপনারা বলছেন, এনপিএল বাড়ছে। এনপিএল বৃদ্ধির মূল কারণ সুদ হার। বাংলাদেশের মতো এতো বেশি সুদ বিশ্বের কোথাও নেই। ’

‘খেলাপি ঋণ বাড়ছে এটা সত্য, কিন্তু কেন বাড়লো তাহলে এটা বলব অসত্য। সুহদার বাড়লে খেলাপি ঋণ বাড়বেই। ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ সুদহার হলে এটা দিয়ে ঋণ গ্রহীতারা কুলাতে পারে না। সুতরাং সুদহার ৯ শতাংশ হলে এনপিএল বাড়বে না। আমি আশা করি ১০ বছর পরে আমাদের ব্যালেন্সসিট পরিষ্কার হবে।”

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি জায়গায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারি নাই। সেটা হচ্ছে আমাদের এনপিএল। এই এনপিএল– এর পরিমাণ বাড়ছে আপনারাই বলছেন। এনপিএল বাড়ার একটি কারণ হলো আমাদের সুদহার অনেক বেশি। আমাদের মতো এতো হাইলি ইন্টারেস্ট রেট পৃথিবীর আর কোনো দেশে নাই। এনপিএল কমাতো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো সুদহার বসাতে হবে।’

‘আমরা সবাই বসেছিলাম- কীভাবে সুদহার কমানো যায়, অথবা কমপিটিটিভ একটা এনভায়রনমেন্টে আনা যায়। সবাই আমরা এক বাক্যে স্বীকার করেছি যে, ইয়েস সুদহার কমাতেই হবে। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনলে আমাদের অনেক এনপিএল কমে যাবে। সুদহার কমলে আমাদের সঙ্গে বিদেশিরা ব্যবসা করে শান্তি পাবে, কোনো প্রশ্ন করবে না। বিদেশিরা আমাদের এলসিগুলো গ্রহণ করবে।”

ব্যাংক প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই যে উদ্দেশ্যে সরকার ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে সেই জায়গা থেকে ব্যাংক কাজ করবে। এনপিএল কমাতে হবে এবং সুদহারও কমাতে হবে। আমাদের বেসরকারি ব্যাংক অনেক এলাকা কাভার করে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। এগুলো সম্ভব হয়েছে আমাদের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কারণে।’

তিনি বলেন, ‘সুদহার কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে। যতজন মেম্বার তিনি (গভর্নর) মনে করেন কমিটিতে ততজন থাকবে। যারা রিপ্রেজেন্ট করবে ব্যাংককে, রিপ্রেজেন্ট করবে প্রাইভেট-পাবলিক খাতকে। তাদের সবাইকে নিয়ে গভর্নর একটি কমিটি গঠন করে দেবেন। কমিটি সকল বিষয়ে নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করে ব্যাখ‌্যা দেবে। আগামী সাত দিনের মধ্যেই তারা এই কাজ করবেন। কীভাবে আমরা সুদহার কমাব এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সুদহার কমবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়বে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর প্রথম দিন থেকে বলে আসলিছাম খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়বে না। খেলাপি ঋণ যদি বাড়ে তবে কোথা থেকে বাড়ে? এদেশের সকল নাগরিকের কাছ থেকেই খেলাপি ঋণ বাড়ে। তাদের সবার কষ্টার্জিত টাকা। আমি তাদের পক্ষ নিয়েই বলেছিলাম খেলাপি ঋণ বাড়বে না। আমরা সঠিকভাবে সঠিক কাজ করতে পারলে সব কিছুই সম্ভব।’

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলে মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা ও শিল্পায়নের জন্য কাজ করছি। দেশের সার্বিক উন্নয়ন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিরলসভাবে কাজ করছেন। শিল্পায়নের মাধ্যমে আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের প্রবৃদ্ধি কমবে না। আমাদের যে সমস্ত আইটেম তৈরি হয়, তার চাহিদা সব সময় আছে। দেশে ও বাইরে চাহিদা সব সময় আছে। যে সমস্ত আইটেম তৈরি করি তার চাহিদা সারা বিশ্বে আছে। তাই প্রবৃদ্ধি কমবে না।’

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সুদহার সিঙ্গেল ডিজেট করলে অনেক উপকার হবে। আমি আজকেউ বলি কোর্টের যে অর্ডার ছিল, সেটি কিন্তু এখন আর নাই। রায়টি আমরা যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম সেইভাবেই পেয়েছি। কোর্টের অর্ডার বাস্তবায়িত হলেই ঋণখেলাপি কমে যাবে। এখন আমরা বিশ্বাস করি, ডিসেম্বর ৩১ তারিখে আপনারা এর প্রতিফলন দেখতে পাবেন। ঋণখেলাপি বাড়বে না, কমের দিকে আসবে। এর আগে টাকা দেয়া বন্ধের কারণেই ঋণ খেলাপি বেড়েছিল।’

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ