আজকের শিরোনাম :

বৈশ্বিক অর্থনীতির ৯ খাতে পিছিয়েছে বাংলাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:১১

বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। কিন্তু গত সপ্তাহেই ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আরেক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশ বাজে ফলাফল দেখতে পাওয়া গেছে।

বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে সম্প্রতি এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সপ্তাহখানেক পরেই 'গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯' প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনটি বলছে, বিশ্বের ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫-তম। কিন্তু গতবছরই এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৩।

যেসব খাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে, তারমধ্যে অন্যতম নিরাপত্তা, দুর্নীতি ও বাক্ স্বাধীনতা। এ খাতে গত বছরের তুলনায় সংঘবদ্ধ অপরাধ, খুন, সন্ত্রাস ও পুলিশের ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতা- এসব নিরাপত্তা ইস্যুতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। আর পুলিশের ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতায় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে তলানীতে আছে দেশটি।

বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে কোন দেশের সরকার, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিচার ব্যবস্থাকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গতবারের স্কোর ছিল ১০০-র মধ্যে ৩৮। আর দেশভিত্তিক অবস্থান ছিল ৯৩-তম। আর এ বছর ৩৫.২ স্কোর নিয়ে অবস্থান ৯৬-তম। এটিও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। 

রির্পোটার্স উইদআউট বর্ডার্সের 'ওয়ার্ল্ডস প্রেস ফ্রিডম ২০১৯' সূচক থেকে তথ্য নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪০টি দেশের মধ্যে এ বছর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩-তম (স্কোর ৪৯.৩)। আর গত বছর ছিল ১১৯-তম (স্কোর ৫১.৪)।

অবশ্য রির্পোটার্স উইথআউট বর্ডাসের মূল ইনডেক্স-এ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১৫০-তম।

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সর্বশেষ ২০১৮ সালে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তাতে ২৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ এবং উগান্ডা ছিল একই অবস্থানে (১২৫-তম)। আর গতবছর ২৮ স্কোর নিয়ে ১২০-তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

কপিরাইট বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি কতটা সুরক্ষিত সেই প্রশ্নেও বেশ তলানীতে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে ২০১৮ সালে ৩৯.২ স্কোর নিয়ে ১১৯-তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর এ বছর স্কোর কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৬, অবস্থান ১২৫-এ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনটিতে যোগাযোগ অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির মতো সেবাখাতগুলোর অবকাঠামো পর্যালোচনা করে বলা হচ্ছে এসব ক্ষেত্রেও বিশেষ ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। ১৪০টি দেশের মধ্যে দুটোতেই অবস্থান ১০০-র নিচে।

সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতবছর থেকে মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও সড়কে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থান (১২৪-তম)। আর সেবাখাতে গতবছর থেকে আরো নিচে নেমেছে (১০৯ থেকে ১১৩-তম অবস্থানে) দেশটি। এক্ষেত্রে পানির ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি অবনমন হয়েছে। নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা এবং পানি সরবরাহের উপর নির্ভরশীলতা, এই সূচকে গতবছর ১১৬-তম অবস্থানে থাকলেও এবারের অবস্থান ১২৪-এ।

তথ্য প্রযুক্তিকে কোন দেশে কীভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে - তাও তুলে ধরা হয়েছে গ্লোবাল কম্পিটিটিভ ইনডেক্সে। এরমধ্যে রয়েছে মোবাইল টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারসহ ইত্যাদি। ১৪১টি দেশের মধ্যে গতবছর ৩৯.৮ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২। আর এ বছর ছয় ধাপ পিছিয়ে অবস্থান ১০৮ (স্কোর ৩৯.১)।

মুদ্রাস্ফীতি এবং ঋণের বৈচিত্র্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গতবছরের ৮৮-তম অবস্থান থেকে ৯৫-তম অবস্থানে নেমে এসেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতিতে ১০৫ এবং ঋণের বৈচিত্র্য সূচকে ৮০ থাকলেও এবার যথাক্রমে ১১৪ এবং ৮৩-তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

তবে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে বলেছে, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি ৭শতাংশের উপর রাখতে সহায়তা করছে।

মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক কাজের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন তার কতটা অর্জন করতে পারে - এমন প্রশ্নে ৩৯.৯ স্কোর নিয়ে ১২৩-এ ঠেকেছে বাংলাদেশের অবস্থান। গতবছর এ খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দুই ধাপ ওপরে। এবার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন তো বটেই, এমনকি নেপালের অবস্থানও ৯৭-তম।

কোন দেশে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকরা কি মুখস্তবিদ্যার উপর জোর দেন নাকি উদ্ভাবনী ও ক্রিটিক্যাল চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করেন সেই প্রশ্নে বাংলাদেশ আট ধাপ পিছিয়ে এবার ১১৫-তম অবস্থানে। এটিও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বিনম্ন।

শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা এবং নমনীয়তা- এসব বিষয়কে শ্রম বাজরের আওতায় এনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গতবছর ১১৫-তম অবস্থান থেকে এ বছর ১২১-এ অবস্থান এসে ঠেকেছে বাংলাদেশের। শ্রমিকদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করা কতটা সহজ সেই প্রশ্নে এবার ২৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রমিক অধিকার প্রশ্নে সতেরো ধাপ পিছিয়ে এসে ঠেকেছে ১০৯-তম অবস্থানে।

প্রাইভেট সেক্টরের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অর্থসংস্থান, উদ্যোক্তাদের জন্য মূলধনের প্রাপ্যতা, বীমা সুবিধা এবং ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ও স্থিতিশীলতা - এই সূচকে গতবছর থেকে তিনধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। তবে স্কোর সামান্য [৫২.৮ থেকে ৫২.১] উন্নতি হয়েছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা, ক্রেডিট গ্যাপ, ব্যাংকঋণ ইত্যাদি সূচকে আফ্রিকার দেশ মালি বা ঘানা থেকেও নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ (১২৯-তম)। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বাংলাদেশ একদমই দুর্বল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আর্থিক সামর্থ্য, ব্যবসা শুরু করার সময় ও উদ্যোক্তা সংস্কৃতি নিয়ে ব্যবসায় বৈচিত্র্য ধারণাটির সূচক অনুযায়ী গতবছরের চাইতে একধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের অবস্থান ১২০।

বৈচিত্রপূর্ণ দক্ষ কর্মী, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতা, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণের কোন দেশ কতটা এগিয়ে সেই সূচকে তিন ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের এবারের অবস্থান ১০৫।

বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ, বিশেষ সুবিধা ও বরাদ্দ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামডাক - এই প্রশ্নে পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের অবস্থান ৮২। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ