আজকের শিরোনাম :

আইনজীবী ছাড়াই ই-রিটার্ন দাখিল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৩ | আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৮:২৫

ঢাকা, ১৭ আগস্ট, এবিনিউজ : রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ঝুট-ঝামেলা আর থাকছে না। আইনজীবীর উপরও আর নির্ভর করতে হচ্ছে না। আয়কর প্রদানে জটিলতামুক্ত হওয়ার সময় এসে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান ‘ডিকে টেকনোলোজি’-ইলেকট্রনিক্যালি ‘বিডি ট্যাক্স’ নামক রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি সফটওয়্যার রয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে করদাতারা আইনজীবীর সহায়তা ছাড়াই ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করতে পারছেন। প্রযুক্তিভিত্তিক এ উদ্যোগটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়।

করদাতাদের আইনি ও প্রশাসনিক যেসব ঝামেলা পোহাতে হয় তা লাঘব করার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে সফটওয়্যারটি। একই সঙ্গে রিটার্ন দাখিল ব্যবস্থা ডিজিটাল হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারকে সহায়তা করাও এর লক্ষ্য। এই পদ্ধতির একটি সুবিধা হলো- আগে থেকেই নিবন্ধিত থাকার কারণে ক্লায়েন্টকে দ্বিতীয়বার কর নথিভুক্তিকরণ তথ্য পূরণ করতে হচ্ছে না।

এছাড়া ক্লায়েন্টের ক্লাউড সার্ভারে করদাতার তথ্য সংরক্ষিত থাকায় আগের তথ্য বা ডাটা ফিরে পেতে সক্ষম হচ্ছেন। এমনকি আগের তথ্য সম্পর্কে জানা, ট্যাক্স পরিমাণ অথবা অন্য কিছু সম্পর্কে ব্যবহারকারীরা সহজেই তথ্য দেখতে পারছেন। এছাড়া ডাটা-রিকভারি সিস্টেম নিশ্চিত থাকায় এবং ক্লায়েন্ট যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় তাদের ফরম পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে সফটওয়্যারটি চালু হয়। ইতোমধ্যে ১০০টি ‘ল’ ফার্ম এবং ৩০০টিরও বেশি কর্পোরেট ক্লায়েন্ট এবং ২৫ হাজার ব্যক্তি এই সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

বিডি ট্যাক্স ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জুলফিকার আলী বলেন, কাগজভিত্তিক নথিপত্র দাখিল করা সময়সাপেক্ষ। আর এতে সংবেদনশীল ক্লায়েন্টের তথ্য হারিয়ে যাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা চুরি যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে ডিকে টেকনোলোজি দল এ সফটওয়্যারের ধারণা নিয়ে এসেছে অ্যাকাউন্টেট এবং আইনজীবীর সহায়তা ছাড়াই। গুরুত্বপূর্ণ ট্যাক্স-সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করতে পারে এবং দ্রুত ঝামেলা ছাড়াই রিটার্ন দাখিলে করদাতাদের সহায়তা করা যায়। তিনি আরও বলেন, এতে কোনো আইনি সমস্যা নেই। কেননা এনবিআর ফর্মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এটা তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে ট্যাক্স আইনজীবীদের সঙ্গেও।

ট্যাক্স হচ্ছে একটা দেশের আয়ের পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্সের মাধ্যমে সরকার দেশ পরিচালনার অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। একটি পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতে যেভাবে পরিবার সদস্যকেকে আয় করতে হয়। তেমনি একটি দেশ পরিচালনার জন্য সে দেশের সরকারকে আয় করতে হয়। যে পরিবারে আয় যত বেশি তাদের জীবনযাপন মান তত ভাল। তেমনি যে দেশের আয় যত বেশি হবে তাদের দেশের উন্নয়নও পরিচালনা তত ভাল হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একজন করদাতা খুব সহজেই ঘরে বা অফিসে বসে নিজের কর ফাইল নিজেই তৈরী করতে পারছেন। এই ক্ষেত্রে www.BDTax.com.bd- এই ওয়েব অ্যাড্রেসে সফটওয়ারটি পাওয়া যাচ্ছে।

উন্নত বিশ্বে ট্যাক্সের অবস্থান ও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে জুলফিকার আলী বলেন, যে দেশ যত বেশী ট্যাক্স আহরণ করে, সে দেশ ততবেশী উন্নয়ন করতে পারে। উন্নত বিশ্বে ট্যাক্স আহরণের পদ্ধতি আমাদের দেশের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। তারা বেশী ট্যাক্স আহরণ করে তাই তারা বেশি উন্নয়ন করতে পারে। উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, ২০১৮ সালে ইউএস বাজেটে আয়করের রাজস্ব ছিল ৬.২ ট্রিনিয়ন ডলার। সেখানকার ৫৩% লোক আয়কর কর দেয় আর বাংলাদেশে ২ থেকে ২.৫% লোক নিয়মিত কর দেয়। মার্কিন সর্বনিম্ন বাৎসরিক আয় সীমা ১৫০০০/ ডলার, আর বাংলাদেশে ২.৫০০০০/ টাকা। এই পার্থক্যই বলে দেয় আমাদের অবস্থান। তাই কর দাতাদের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। আওতাধীন ব্যক্তিদের কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবে অবশ্যই সহজ পদ্ধতিতে, যে কোন ধরনের হয়রানি ছাড়া।

১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু মাত্র ৩৫ লাখ মানুষের ETIN আছে। এর মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ লোক কর দেয়। কর দেয়ার অনীহা মূলত আমাদের কর রির্টান জমা দেয়ার পদ্ধতি, যা অনেকটা ঝামেলাপূর্ণ। বেশির ভাগ মানুষ কর দেয়াকে ঝামেলা এবং ভীতিপূর্ণ মনে করেন। কারণ তাদেরকে একজন কর আইজীবীর দ্বারস্থ হতে হয়। তারপর আইনজীবীকে সব প্রয়োজনীয় কাগজ দিতে হয়। তারপর আইনজীবী অনেক সময় কষ্ট করে কর অফিস অথবা কর মেলায় রির্টান জমা দেন। এসব সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সে কারণে একজন কর আইনজীবীকে গড়ে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা দিতে হয়।

বিভিন্ন অনিয়ম, বেশি ঝামেলা এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার থাকায় অনেকেরই রয়েছে কর দেয়ার অনীহা। এই অনীহার জন্য বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা কর আদায় হচ্ছে না। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। আমাদের দেশে প্রায় ৮ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যদি ইন্টারনেট সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কর আদায় করা যায় তাহলে অতি দ্রুত জাতীয় রাজস্ব আদায় সহজে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা সম্ভব। তাই সরকার তথা সংশ্লিষ্টদেরকে কর দেয়ার উপকারিতা জনগণের মাঝে প্রচার করা সঙ্গত। একই সঙ্গে জনসচেনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এর জন্য সরকারকে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি।

জুলফিকার আলী গত ২২ বছর ধরে বিদেশে থাকলেও দেশের জন্য কিছু করার ব্যাপারে সবসময়ই একটা সুযোগ খুঁজতে ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত। তার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়া কুমিল্লা-২ তথা দাউদকান্দি ও মেঘনা থেকে দুইবারের এমপি। বলা যায়, দেশপ্রেমের কারণে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় দেশের জন্য কাজ করতেই এই উদ্যোগ। তার ভাবনা দেশের জন্য কিছু করতে হলে দেশের আয় বৃদ্ধি করতে হবে, আর আয় একমাত্র করের মাধ্যমেই। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের বিনির্মাণের স্বপ্ন ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজিব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায় অনুপ্রাণিত হয়ে গত ৩ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের অবসরভাতা ২০০,০০০/ ডলার পুঁজি নিয়ে BDTax.com নামে দেশের প্রথম অনলাইন সেল্ফ গাইডেড টেক্স প্রিপারেশন সফটওয়ার তৈরি করেন। এই অল্প সময়ে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৭ সালে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত Bangladesh Statarup Award পেয়েছেন।

জুলফিকার আলীর ভিশন হচ্ছে- ২০১৮ সালে ১ লাখ কর দাতাকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে কর ফাইল করানো। আগামী পাঁচ বছরে ১০ লাখ করদাতাকে এই পদ্ধতির কর ফাইল করানো। তার বিশ্বাস, এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার কর আহরণ সম্ভব হবে। তবে এই পদ্ধতিকে আরো জনমুখী করতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে মিডিয়ারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে পারে।

এবিএন/রাজ্জাক/জসিম/এআর

এই বিভাগের আরো সংবাদ