কসবা সীমান্ত হাটে বাংলাদেশী বিক্রিতাদের অবস্থান ধর্মঘট
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৫৮
কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ০৫ আগস্ট, এবিনিউজ : বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ ভাবে প্রতিষ্ঠা করা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাটে আজ রবিবার বাংলাদেশী দোকান মালিকরা তাদের দোকান না বসিয়ে হাটের বাইরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন।
ভারতের ক্রেতাদের হাটে প্রবেশ করতে না দেয়ায় বাংলাদেশী বিক্রেতারা এ কর্মসূচী পালন করেছেন। এর আগে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশী দোকান মালিকরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা গত রোববার ২৯ জুলাই সীমান্ত হাটে ভারতীয় কোন ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কোন মালামাল বিক্রি করতে পারেননি। অথচ বাংলাদেশী ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। প্রত্যেক ব্যবসায়ী কমপক্ষে ৭০থেকে ৮০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করেন।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার বর্ডার হাট পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) ও কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই সাথে আগে থেকে ঘোষনা দিয়ে সীমান্ত হাটে দোকান না বসিয়ে হাটের বাইরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রবিবার সকাল ৮টায় সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ীরা হাটের বাইরে কসবা রেল স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় হাটের রাস্তা বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করেন।
খবর পেয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌছে তাদের কথা শুনেন এবং তাদেরকে ভারতীয় বর্ডার হাট পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে সকাল সাড়ে ১০টায় তারা রাস্তা ছেড়ে দেন। কিন্তু হাটে মালামাল নিয়ে কোন দোকান বসান নি। পরে ইউএনও হাটের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
হাটের তৈরী পোষাক ব্যবসায়ীর মো. অলিউল্লাহ সরকার বলেন, হাটটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশী বিক্রেতারা কিছু বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু গত রোববার হঠাৎ করে ভারতীয় বিএসএস ওই দেশের ক্রেতাদের হাটে আসতে দেননি। রবিবারও মাত্র ১০-১২ জন ভারতীয় ক্রেতা এ হাটে এসেছেন। এ কারনে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে। বাধ্য হয়েই দোকান বন্ধ করে অবস্থান ধর্মঘট করতে হয়েছে।
সীমান্ত হাটের বাংলাদেশী ব্যবসায়ী মোস্তাফা হারুন বলেন, ভারতীয় সীমান্তের ৫কিলোমিটারের অভ্যন্তরে পাহাড়ী দরিদ্র জনগোষ্টির বসবাস। এখান থেকে তেমন ক্রেতা হাটে আসেনা। এতদিন যত ভারতীয় ক্রেতা আসত তার অধিকাংশই ৫ কিলোমিটারের বাইরের। হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় তাদের ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে।
কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি মো.সোলেমান খান বলেন, যে উদ্দেশ্যে এ সীমান্ত হাট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নীতিমালার জন্য এর উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। উভয় দেশকে নীতিমালায় সংস্কার করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আবার নতুন করে ভাবতে হবে।
কসবা সীমান্ত হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ও কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের অধিবাসীরা সেখানে কেনাকাটা করবেন। অন্য এলাকার কেউ আসতে পারবে না। তবে এর আগে ৫ কিলোমিটার এলাকার অধিবাসীদের বার্ষিক কার্ড দেয়া হত এবং একদিনের জন্য এক হাজার ব্যক্তিকে হাটে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হত।
২৯ জুলাই থেকে এক দিনের অনুমতি বন্ধ করে দেয়ায় এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে। এ হিসাবে ভারতের লোকজন কম আসছেন । বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা বিষয়টি লিখিত ভাবে অবহিত করিয়েছেন। অভিযোগটি হাটের পরিচালনা কমিটির সভাপতিেেক অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন; বিষয়টি নিয়ে ভারতের সীমান্ত হাট পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২০৩৯ পিলারের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর এলাকার তারাপুর এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ এক একর ৫০ শতক জায়গাজুড়ে সীমান্ত হাট বসে। প্রত্যেক রোববার এ হাটের সাপ্তাহিক দিন।
২০১৫ সনের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে এই হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ওই বছরের ১১ জুন থেকে সপ্তাহের একদিন এ হাট বসে।
এবিএন/ মো. অলিউল্লাহ সরকার অতুল/জসিম/রাজ্জাক
এই বিভাগের আরো সংবাদ