আজকের শিরোনাম :

রাঙ্গাবালীতে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের ১৫ লক্ষ টাকা লোপাট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪১

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে সম্মানি ও প্রশিক্ষন ভাতার ১৫ লক্ষাধিক টাকা লোপাট করা হয়েছে তার অভিযোগ পাওয়া গেছে গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ৪৫ জন সভাপতি ও ম্যানেজারদের এ ভাতা স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্পের সমন্বয়কারী গোলাম আযম এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

অভিযোগের তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে বলে রাঙ্গাবালী ইউএনও নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে  জানা গেছে, ২০১৪-২০১৭ তিন অর্থ বছরের আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের (পূর্বের নাম একটি বাড়ি একটি খামার) সভাপতি-ম্যানেজারদের সম্মানি ও প্রশিক্ষণের ভাতা না দিয়ে প্রকল্পের সমন্বয়কারী সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে চলতি বছরের ১৪ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।

উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের নয়াভাঙ্গুনি ৭ নম্বর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার রেদওয়ানুর রহমানের দেওয়া এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রিপন খন্দকারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের গ্রাম উন্নয়ন সমিতি পরিচালনা করার জন্য দুই বছর সম্মানিভাতা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু উপজেলায় কর্মরত ৪৫ জন সভাপতি ও ম্যানেজারের কেউ সেই সম্মানিভাতা পায়নি বলে লিখিতভাবে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানানো হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ লক্ষ ৭২ হাজার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৪০০ টাকা কলাপাড়া হিসাব রক্ষণ কার্যালয় থেকে সভাপতি ও ম্যানেজারদের সম্মানিভাতা উত্তোলন করা হয়।

শুধুই তাই নয়, সমিতির সভাপতি ও ম্যানেজারদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থও আত্মসাতের তথ্যও পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমিতির ৪৫ জন সভাপতি ও ম্যানেজাররা কোন প্রশিক্ষণ কিংবা প্রশিক্ষণের ভাতা পায়নি। তবে বিল ভাউচার যাচাই করে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বিল ভাউচারের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৪ জুন ৪৯ হাজার, ২০১৬ সালের ১৯ জুন দুইটি বিলে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার, ২০১৭ সালের ২০ জুন তিনটি বিলে ৮৭ হাজার টাকা কলাপাড়া হিসাব রক্ষণ কার্যালয় থেকে উত্তোলন করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সমিতির সভাপতি ও ম্যানেজারদের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্পের সমন্বয়কারী গোলাম আযম ওইসব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। বিল ভাউচারের স্বাক্ষর যাচাই করে দেখা যায়, সমিতির সভাপতি ও ম্যানেজারদের স্বাক্ষরের সঙ্গে এর কোন মিল নেই।

ওই তদন্ত চলাকালীন জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কার্যালয়ে ইন্টারনেট হাব স্থাপনের জন্য ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্তকালীন কার্যালয় পরিদর্শন করে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

গত ২১ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ প্রতিবেদনটি দাখিল করা হলে প্রমাণাদি সংযুক্ত করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে (পিডি) পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রিপন খন্দকার জানান, ‘সভাপতি ও ম্যানেজারদের সম্মানি, প্রশিক্ষণভাতা ও ইন্টারনেট হাব বাবদ বরাদ্দকৃত মোট ১৫ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা  প্রকল্পের সমন্বয়কারী গোলাম আযম আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। এই তদন্ত প্রতিবেদন পিডি (প্রকল্প পরিচালক)কে পাঠানো হয়েছে।’

অভিযুক্ত প্রকল্প সমন্বয়কারী গোলাম আযমের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও ফোনটি বন্ধ থাকায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন পিডি স্যারকে পাঠানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিএন/মু. জিল্লুর রহমান/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ