আজকের শিরোনাম :

লালমনিরহাটে ভুয়া এনআইডি দিয়ে ঋণ বরাদ্দের অভিযোগ পিয়নের বিরুদ্ধে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৯

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মাঝে ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি ) ব্যবহারসহ একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তির নামে ঋণ বরাদ্দ, ঋণ প্রদানের নামে উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সমবায় অফিসের বিরুদ্ধে।

এসব অনিয়মের পুরো কল কাটি নিয়ন্ত্রণ করেন মোক্তাকিন ইসলাম নামে ওই অফিসের এক অফিস সহায়ক। সুবিধাভোগীরা উন্নত জাতের গাভী ক্রয় শর্তে ঋণ গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ সুবিধাভোগী গাভী ক্রয় করে নাই। ফলে ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ভেঙ্গে যেতে বসেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ওই অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় পুরো অফিস তার নিয়ন্ত্রণে। তার কথা না শুনলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেন মোক্তাকিন ইসলাম।
জানা গেছে, ওই উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের আওতায় উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষে সিঙ্গিমারী ও ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে ৪র্থ পর্যায়ে ৫০ জন নারীর মাঝে জনপ্রতি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। সিঙ্গিমারী ইউনিয়নে সুবিধাভোগী ২৫ জনের মধ্যে ২০ জনের নাম দিয়েছে ওই অফিসের অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে তার দুই মামী আমেনা বেগম ও অহুরন নেছা, মামাত ভাইয়ের স্ত্রী আয়শা বেগম, মামাত বোন আমিনা বেগমসহ তার অনেক আত্মীয়স্বজন।

অনেকের নামে ঋণ উত্তোলন করে সেই ঋণের টাকা নিয়েছেন অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম এমন অভিযোগও রয়েছে।

মোক্তকিন ইসলাম তার মামাত বোন ঋণ সুবিধাভোগী আমিনা বেগমের ঋণ বিরতণ ফাইলে ১১ সংখ্যার  ৩২৫৪০০০০৩৯৫ এ জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ব্যবহার করা হলেও ওই  পরিচয়পত্র নম্বরের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে।

এছাড়া ঋণ দেয়ার নামে ওই প্রকল্পের সুবিধাভোগী মুন্নি খাতুনের কাছে ১৮ হাজার, মাজেদা বেগমের কাছে ১৩ হাজার, মহিতন নেছার কাছে ১৩ হাজার ৩ শত ও আজিমা বেগমের কাছ থেকে ৬ হাজার ৬ শত টাকা অফিসের খরচ বলে গ্রহণ করেন ওই অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম। ঋণ সুবিধাভোগী নারীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

অভিযোগ রয়েছে, মোক্তাকিন ইসলাম হাতীবান্ধা উপজেলা সমবায় অফিসের অফিস সহায়ক হলেও পুরো অফিসের সকল কার্যক্রম তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। ওই অফিসে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার কথা মত না চললে মোক্তাকিন ইসলাম স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন ভাবে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হয়রানী করেন। অফিস সহায়ক হলে তার কার্যক্রম যেন কর্মকর্তার মত।

সুবিধাভোগীরা উন্নত জাতের গাভী ক্রয় শর্তে ঋণ গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ সুবিধাভোগী গাভী ক্রয় করে নাই। তারা অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলামের মাধ্যমে ভুয়া গাভী ক্রয়ের রসিদ ম্যানেজ করে তা জমা দিয়ে ঋণ উত্তোলন করেছেন।
তবে টাকা নিয়ে ঋণ প্রদানের অভিযোগ ও অফিস নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করে অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম বলেন, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ঋণ দেয়া নিয়ম আছে। অফিস যাকে ভালো মনে করবে তাকে ঋণ দিবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিধু ভূষণ রায় বলেন, আমি এ অফিসে যোগদানের আগেই ঋণ কার্যক্রম অনুমোদন হয়েছে। আমি যোগদান করে ঋণের চেক বিতরণ করেছি মাত্র। তালিকায় অনিয়ম হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। অফিস সহায়ক মোক্তাকিন প্রসঙ্গে বলেন, শুনেছি সে স্থানীয় হওয়ায় বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানা ভাবে হয়রানী করেন।

লালমনিরহাট জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন সরকার বলেন, ঋণ বিতরণে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও যদি অনিয়ম হয়েছে কেউ এমন অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিএন/আসাদুজ্জামান সাজু/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ