আজকের শিরোনাম :

মুন্সীগঞ্জে স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা নিয়ে জটিলতা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৮, ১২:৪৭

মুন্সীগঞ্জ, ২৮ জুলাই, এবিনিউজ : মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার এক অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাজিদ ও মলির বিরুদ্ধে মামলা হলেও অভিযুক্ত মুল ধর্ষণকারী কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত মীর এর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

ভিকটিম কেয়া চেয়ারম্যানকে প্রথম শ্লীলতাহানিকারী হিসেবে তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ আনলেও তাকে কৌশলে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সে জানায়। চেয়ারম্যানকে মামলার প্রথম আসামী হিসেবে মামলায় না রাখার কারণে এ নিয়ে উঠেছে নানা গুঞ্জন।

ধর্ষিতা ছাত্রী জানিয়েছে, গত ২৬ জুলাই রাত ১২টায় চেয়ারম্যান ও আর এক অভিযুক্ত সাজিদের বিরুদ্ধে সিরাজদিখান থানায় মামলা দিতে গেলে সে রাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়নি। ভিকটিমকে নিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম ঠাট্টা তামাশা করে বলে জানায় ভিকটিম ছাত্রী কেয়া। কেয়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে এ ঠাট্টা তামাশার ধুম পরে যায় বলে সে জানায়।

এ নিয়ে ভিকটিমের মা থানায় ২৬ শে জুলাই রাত ১২ টায় অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ের শ্লীলতাহানির মামলা না করতে পেরে চলে যাবার মুহুর্তে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম একটা লিখিত কাগজে মা মেয়ের স্বাক্ষর রাখে বলে তারা জানায়। তারা জানেনা কি অভিযোগ লিখে তাতে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

সিরাজদিখান উপজেলার বেলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির শিকার ৮ম শ্রেণির ছাত্রী কেয়া জানায়, কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়ামত মীর তার ব্যক্তিগত কক্ষে নিয়ে প্রথম তার শ্লীলতাহানি ঘটায়। তাকে জোর করে এই ঘটনা ঘটানোর পর চেপে রাখা হয় তার মুখ। দরিদ্র তার বাবা মো. মুন্না সামান্য রিক্সা চালক। কোলাগ্রামে তার বাড়ি। অতি দরিদ্র হওয়ায় সে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেনি বলে জানায় কেয়া।

অন্যদিকে, কোলা ইউনিয়নের ট্যাক্স নিরুপনকারী চেয়ারম্যানের স্নেহধন্য সাজিদও তাকে শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং তার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে তার শেষ সামাজিক সম্মানটুকু ভূলুণ্ঠিত করে দেয় বলে ভিকটিক কেয়া জানায়।

কেয়া জানায়, তার মাকে নিয়ে রাতে সিরাদিখান থানায় মামলা করতে যায়। এসময় সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল কালামের কাছে চেয়ারম্যান ও তার ¯েœহধন্য সাজিদের কুকর্মের কথা জানায় এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ব্যাপারে অনুরোধ জানায়। এ সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেগে বলে ওঠেন তুমি কি জান তুমি কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছো? কেয়া উত্তর দেয়, গরীবের শেষ সম্মানটুকু যারা কেরে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছি। এ সময় কেয়া ও কেয়ার মাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টার রোল পড়ে যায় বলে কেয়া জানায়।

তিনি আরো জানান, সম্ভ্রম হারিয়ে তার বিচারটুকু চাইতে থানায় এসে এ ধরণের ঘটনায় সে ও তার মা অপ্রস্তুত হয়ে যায় বলে জানায়। এক পর্যায়ে তার ভীত ও সন্তোস্ত হয়ে পড়ে এবং মামলার ব্যাপারে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এভাবে রাত গড়িয়ে অনেক রাত হওয়ার পর যখন নিরাশ হয়ে থানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেখানে তাদের ইচ্ছেমতো একটি লিখিত কাগজে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে তাদের বিদায় করে দেয় বলে কেয়া জানায়।

সাজিত কোলা ইউনিয়নের একজন ট্যাক্স নিরুপনকারী কর্মচারী। সে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কক্ষে থাকত। কোলা ইউনিয়নের উদ্যোক্তা আব্দুস সালাম অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ৬মাস পূর্বে তার ভাগনি মলি আক্তারকে তার স্থলে কম্পিউটার শেখানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। মলির সাথে কেয়ার একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সুবাদে কেয়াকে কম্পিউটার শেখার আহ্বান জানায় মলি। সে সূত্রে কেয়া কম্পিউটার শেখার এক ফাঁকে সাজিদের কুনজরে পড়ে। সাজিদ বিভিন্ন কৌশলে তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে কুমতলব হাসিলের জন্য। এক পর্যায় সাজিদ তাকে টোপে ফেলতে সক্ষম হয়। বিয়ের প্রলোভন দেয় তাকে এবং এই ফাঁকে মলির সাহায্য নিতে থাকে সাজিদ। এক পর্যায় কেয়াকে শ্লীলতাহানী ঘটায় এবং মলির সাহায্য নিয়ে সাজিতের মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে নেয়। যা কেয়ার অগোচরেই হয়।

কেয়া সাজিতের অপকর্মের প্রতিবাদ করে সম্পর্ক গুটিয়ে নেয় এবং বিষয়গুলো মলিকে বলে। মলি বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে যেতে বলে। পরে এক পর্যায় সাজিতের ফোন কেয়া না ধরার কারণে এবং তার কুকর্ম আরো চরিতার্থ না করতে পেরে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোলাপাড়া ইউপি মেম্বার জানান, মলির সাথে কোলাপাড়া ইউপি সচিব জামালের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি কেয়া জানত। ফলে রাজস্বাক্ষীকে টেপে ফেলানোর জন্যই মলি ভিডিও কাজে সহযোগিতা করে বলে তিনি জানান।

একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানায়, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে যাওয়ার পরও মামলা না হওয়ার কারণে অনেকটা সম্মানহানীতে ভুগছেন চেয়ারম্যান। ফলে কেয়া ও তার পরিবারের প্রতি নাখোশ চেয়ার ম্যান লিয়াকত আলী মীর। কেয়াও জানায়, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। ফলে অতি দরিদ্র ও অবহেলিত এ পরিবারটি এখন অনেকটাই হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে বিশ্বস্থ সূত্রটি আশংকা করছে।

জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বিষয়টি অবগত হয়ে এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। ইউএনও মহোদয় তাৎক্ষণিকভাবে কেয়ার সাথে মোবাইল ফোন আলাপের মাধ্যমে বিস্তারিত খোজ খবর নেন। কেয়া বিস্তারিত বিষয় ইউএনও মহোদয়কে জানান বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সিরাদিখান উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশেই আমি বিষয়টি দেখছি। সার্বিকভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি পরিবারটির নিরাপত্তার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিবেন বলে এবং তার ব্যক্তিগত সেল ফোন নাম্বারটি কেয়াকে দিয়েছেন বলেও জানান।

চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মীর সেলফোনে জানান, একটি দর্শণের ব্যাপারে আমি জেনেছি। গতকালই ভিডিওটি কয়েকজন আমাকে ভিডিওটি দেখিয়েছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার শত্রু আছে। শত্রু পক্ষ আমাকে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বর্তমান আওয়ামীলীগ আমলে আপনি আওয়ামীলীগের উপজেলা আওয়ামী সদস্য হওয়ার পরও এতো মানুষ থাকতে আপনার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মান ক্ষুন্ন করার জন্য একটি শক্তিশালী মহল আমার পিছনে লেগেছে। ভিডিও দেখার পরও বিচার করলেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন প্রশাসন আছেন বিষয়টি তারা দেখবেন।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালামের সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। কয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, সাজিত ও মলির নামে থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে।

এবিএন/আতিকুর রহমান টিপু/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ