আজকের শিরোনাম :

রাণীনগরের হাতিরপুল ব্রীজ এখন মরণফাঁদ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০১৮, ১৪:০০

রাণীনগর (নওগাঁ), ২৬ জুলাই, এবিনিউজ : নওগাঁর রাণীনগরে বিট্রিশ আমলে নির্মিত হাতিরপুল নামক ব্রীজটি চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হলেও ব্রীজের উপর দিয়ে প্রতিদিন মালবাহি ট্রাক, ট্র্যাক্টর, যাত্রীবাহি বাস, সিএনজি, আটোরিক্সা, ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন উপজেলা সদর হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করছে।

যে কোনো সময় ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ে প্রাণহানীর আশংকা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজটির সংস্কার কাজ না করায় ইট-শুরকি দিয়ে তৈরি ব্রীজটির গত ৬ মাস ধরে পিলার ও গার্ডারের বিভিন্ন অংশের ইট ভারি যানবাহন চলাচলের সময় খুলে পড়ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে গত তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টির কারণে ব্রীজের উপরের অংশের খানা-খন্দে পানি জুমে ব্রীজটি দিনদিন ডেবে যাচ্ছে।

যানবাহন চালকরা দেখেও না দেখার ভান করে গাড়ী চালানোর কারণে হাতিরপুল নামক ব্রীজটি দিনদিন মরণফাঁদে পরিনিত হচ্ছে। যে কোনো সময় ব্রীজটি ভেঙে পড়ে প্রাণহানীর মত ঘটনা ঘটতে পাড়ে বলে এলাকাবাসি আশংকা করছে। অনতিবিলম্বে এই ব্রীজের উপর দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধসহ দ্রুত সংস্কার কাজ করার দাবি করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কে অবস্থিত বিট্রিশ আমলে ইট-শুরকি দিয়ে নির্মিত হাতিরপুল নামক ব্রীজটির যুগ যুগ ধরে সংস্কার কাজ না করায় বর্তমানে ব্রীজটি মরণফাঁদে পরিনিত হয়েছে। রাণীনগর উপজেলার ঐতিহাসিক একমাত্র স্থান কাশিমপুর রাজবাড়ির রাজা তার স্ট্রেট দেখাশুনার জন্য উপজেলার পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত করতো। রক্তদহ বিলের দক্ষিণ পার্শ্বে রতনডারী খালের উপর সেই সময় কোনো ব্রীজ না থাকার কারণে ওই স্থানে একটি কাঠেরপুল নির্মাণ করা হয়। সেই ব্রীজটি নষ্ট হওয়ার কারণে জনস্বার্থে বিট্রিশ সরকারের আমলে ইট-শুরকি দিয়ে হাতিরপুল ব্রীজটি মির্মাণ করা হয়।

কথিত আছে, ব্রীজটি তৈরির সময় শুরকি বিছানোর পর রাজবাড়ির হাতি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে ছাদের উপরের অংশ সমান করার কারণে এই ব্রীজটির নাম হাতিরপুল নামে এলাকায় পরিচিত লাভ করে। প্রকল্প আসে প্রকল্প গেলেও রাণীনগরের ঐতিহ্যবাহী হাতিরপুল ব্রীজটি সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার কাজ না করায় গত ৬ মাস ধরে ব্রীজের পিলার ও গার্ডারের ইট খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে।

ব্রীজের পাটাতনের একদিকে ডেবে যাওয়ায় চলাচলের অনুপযুগি হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে আর গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রীজটি দিনদিন মারাত্মক ভাবে ডেবে গিয়ে মরণফাঁদে পরিনিত হচ্ছে। দ্রুত ব্রীজটির সংস্কার কাজ করা না হলে যে কোন সময় প্রাণহানীর মত ঘটনা ঘটতে পাড়ে বলে এলাকাবাসি আশংকা করছেন।

উপজেলার লোহাচূড়া গ্রামের আব্দুল রাজ্জাক (৭০) জানান, আমার জানা মতে ১৯১৯ সালে জমিদারেরা তদের জমি দেখাশুনার জন্য রাণীনগরের পূর্ব এলাকার বিভিন্ন স্ট্রেটে যাতায়াত করতে গিয়ে রাজাপুর থেকে সিম্বা পর্যন্ত ভঙ্গুর যোগাযোগের কারণে তিন কাঠেরপুল তৈরি করে।

পরবর্তিতে দুই জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করার পর রতনডারি’র খালের উপরে বড় আকারের একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। বিট্রিশ আমলে ইট-শুরকি দিয়ে নান্দনিক নকশায় চারটি পিলার এর উপর এই ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ব্রীজটি বয়সের ভারে নিজেই এখন ঐতিহ্যের যৌলোস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।

নওগাঁর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুল হক জানান, উপজেলা সদর থেকে আবাদপুকুর পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কের পুন:নির্মান কাজের জন্য ইতিমধ্যেই একনেকে অনুমোদন হয়েছে। সড়কটি ১৮ ফিট প্রস্থসহ এই ব্রীজের স্থানে নতুন একটি ব্রীজসহ ২৫টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য আগামী মাসেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।

তবে এই ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুই একদিনের মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞ জারি করা হবে।

এবিএন/এ বাশার/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ