আজকের শিরোনাম :

গাঁজা সেবন করে স্বামী, আটক হলো কোলের শিশুসহ স্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২০, ১৬:৫০

স্বামী গাঁজা খায় কিন্তু আটক হলেন কোলের শিশুসহ স্ত্রী শিরিনা বেগম (৩৩)। ভৈরব থানা হাজতে দাঁড়িয়ে গতকাল বুধবার রাতে যমুনা টিভির প্রতিনিধির কাছে কেঁদে কেঁদে কথাগুলি বলছিল গৃহবধূ শিরিনা বেগম।

বুধবার বিকেল ৬টায় এই গৃহবধূকে কয়েক পুটলা গাঁজাসহ তার বাসা থেকে আটক করে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সার্কেলের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান। গৃহবধূর কোলে রয়েছে এক বছরের শিশু সন্তান লোহান। এছাড়াও আরও দুটি সন্তান রয়েছে তার। গৃহবধূর স্বামীর নাম খোকা মিয়া (৪৫)। পেশায় আখের রস ফেরি করে শহরে বিক্রি করে।

পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমানের অভিযোগ গৃহবধূর বাসায় এক কেজি গাঁজা পাওয়া গেছে। গৃহবধূ বলছে মিথ্যা ও সাজানো নাটক। তাকে আটক করার পর গতকাল বুধবার রাত ৮টায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও তিনদিনের কারাদণ্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গৃহবধূ শিরিনা বেগমের বাড়ি ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ছনছাড়া গ্রামে। এলাকাবাসী বলছে খোকা মিয়া গাঁজা সেবন করলেও তার স্ত্রী কখনও গাঁজার ব্যবসা করেছে এমন কথা কখনও শুনিনি।

গৃহবধূ শিরিনা বেগম কোলের শিশু নিয়ে বুধবার রাতে থানা হাজতে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার সময় সাদা পোশাকধারী দুইজন ও একজন মহিলা বাসায় ঢুকে আমার স্বামীকে খুঁজতে থাকেন। এ সময় আমার স্বামী বাসায় ছিল না। পরে ঘর তল্লাশি করে ডিব্বার ভিতর কয়েক পুটলা গাঁজা পায়। এ গাঁজা আমার স্বামী সেবন করে। আমি জানতাম না ডিব্বার ভিতর গাঁজা আছে, তবে স্বামী গাঁজা সেবন করে একথা সত্য। পরে তারা আমাকে আর আমার কোলের শিশুসহ আটক করে নিয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, তারপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমাকে ৬ মাসের সাজা প্রদান করে। দুদিন পর ঈদ। আমার তিনটি সন্তান। স্বামী গাঁজা খায় সত্যি কিন্তু আমিতো গাঁজার ব্যবসা করি না। এখন আমি কি করব, একথা বলে থানা হাজতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন গৃহবধূ।

ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অফিসের পরিদর্শক মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে এ ধরনের আরও অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকমাস আগে উপজেলার দুটি গ্রাম থেকে শেফালী বেগম ও নার্গিস বেগম নামের দুই মহিলাকে আটক করে একইভাবে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে।

কয়েকমাস আগে সম্ভুপুর এলাকায় কালা মিয়া নামের এক মাদক সেবনকারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার মেয়ে শান্তা বেগমের বেতনের ১১ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে আসে। ঘটনাটি শান্তা বেগম তখন তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করে।

এর আগে কালিকাপ্রসাদ এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করার পর তার গরু বিক্রির ১০ হাজার টাকা মাসুদর রহমান নিয়ে আসে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পরিদর্শক মাসুদুর রহমানের রয়েছে মাসিক চুক্তি। আর চুক্তির টাকা নিয়মিত না দিলেই তিনি ক্ষেপে গিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন।

শিরিনা বেগমের বৃদ্ধ বাবা হেলিম মিয়া জানান, আমার জামাই গাঁজা সেবন করে কিন্তু কোলের শিশুসহ মেয়েটিকে গ্রেফতার করে সাজা দিলো মাদকের অফিসার। ঘটনার সময় তিন পুটলা গাঁজা পায় ঘরে কিন্তু এক কেজি গাঁজার অভিযোগ আনা হয় যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট বলে তিনি দাবি করেন।

ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সার্কেলের পরিদর্শক জানান, শিরিনা বেগমের ঘরে এক কেজি গাঁজা পাওয়া যায়। তারা মাদকের ব্যবসা করে বলেই তাকে আটক করে সাজার ব্যবস্থা করেছি। এলাকাবাসীর কেউ বলছে না শিরিনা গাঁজার ব্যবসা করে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, স্বামী গাঁজার ব্যবসা করে বলেই ঘরে গাঁজা পেয়েছি।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিন জানান, মাদকদ্রব্য অফিসের কর্মকর্তারা শিরিনা বেগমকে আটক করার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দিয়ে তাকে থানায় সোপর্দ করেছে। বিষয়টির ব্যাপারে আমাদের কিছুই বলার নেই।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ