আজকের শিরোনাম :

চুরির অভিযোগে অটোরিকশা চালককে পেটালেন চেয়ারম্যান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৪:০৩ | আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৫:০২

চকরিয়া (কক্সবাজার), ২৩ জুলাই, এবিনিউজ : একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো আলোচনায় এসেছেন মো.জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব। কিন্তু অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তারের কারণে কোনো কিছুকেই ধরা জ্ঞান করছেন না তিনি।

বিগত ২০১৬ সালের ৯ জুন টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সামনের রাস্তায় শতাধিক লোকের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল রেজাউল করিম নামের এক যুবক। এই ঘটনাটি সাধারণ মানুষ মন থেকে এখনো ভুলতে পারেনি। এরই মধ্যে গতকাল রবিবার (২২ জুলাই) ঘটিয়েছেন আরেক ঘটনা।

জানা যায়, লোহা চুরির অভিযোগে আব্দুল মোকাদ্দেস নামের এক অটোরিকশা চালককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছেন জাহেদুল ইসলাম। লাঠি-বেত ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় তার টর্চার হোম (গোল ঘরে) ফেলে রাখা হয় নিরহ অটোরিকশা চালক মোকাদ্দেসকে।

পরে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। নির্যাতনের শিকার যুবক একই ইউনিয়নের আলেকদিয়া কাটা এলাকার হোসাইন আলীর ছেলে।

ওইদিন রাতে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্যাতিত অটোরিকশা চালক আব্দুল মোকাদ্দেস সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারম্যানের কথা বলে শনিবার রাতে আলেকদিয়া পাড়া এলাকার আব্দু সালামের ছেলে মাদু আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।

সারারাত চেয়ারম্যানের বাড়িতে আটকে রাখার পর লোহা চুরির অভিযোগে পরের দিন রবিবার সকালে চেয়ারম্যান জাহেদ আমাকে বেধড়ক পিটানো শুরু করে। লাঠি-বেত ও হাতুড়ির উপর্যুপরি আঘাতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। মারধরের সময় সোনাইয়া কাটা এলাকার মাহমুদের ছেলে কায়সার ও শমশু আলমের ছেলে বাদশাহ আমার হাত-পা আটকে রাখে।

নির্যাতিতের মা শাকেরা বেগম বলেন, আমার নির্দোষ ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ। একইভাবে সে অনেক নিরহ মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে যদি অপরাধ করে, তবে তার জন্য দেশে আইন আদালত রয়েছে। তাকে আইনের হাতে সোপর্দ না করে, কেন এভাবে নির্যাতন চালানো হল? আমার ছেলের উপর চালানো নেক্কারজনক এ নির্যাতনের আমি বিচার চাই।

অভিযোগের ব্যাপারে বিষয়ে জানতে চাইলে টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বলেন, আমি কাউকে মারিনি। এলাকার পাহারাদাররা তাকে ধরে নিয়ে এসে আমার কাছে আনলে আমি স্থানীয় একজনের জিম্মায় দেয়। পরে মনে হয় স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করেছে।

তিনি আরো বলেন, ওই লোক একজন চোর, মাদকসেবী। আমি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাই। এটা কি আমার অপরাধ হতে পারে?

এ বিষয়ে জানতে পেকুয়া  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব-উল করিম বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেনি। তারপরও আমি ঘটনাটি ফেসবুকে দেখে চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন। ভোক্তভোগী পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৯ জুন পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সামনের রাস্তায় শতাধিক লোকের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল রেজাউল করিম নামের এক যুবক। প্রেমিকাকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ তুলে রেজাউলকে রাস্তার উপর ফেলে নির্যাতন করেছিলো চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম। রেজাউল একই ইউনিয়নের গুদিকাটা গ্রামের মোস্তাক আহমদের ছেলে।

এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ