আজকের শিরোনাম :

কুড়িগ্রামে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, বিলীনের পথে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টি-বাঁধ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২০, ১২:২৭

তিস্তা নদীর বাঁ তীরে ভাঙনকবলিত একটি টি-বাঁধ রক্ষায় জরুরী প্রকল্পের নামে বাঁধের অদূরেই ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় টি-বাঁধ রক্ষার পরিবর্তে তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, কুড়িগ্রাম পাউবোর প্রকৌশলীদের খামখেয়ালীপনা ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে মাত্র তিন বছরের মাথায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টি-বাঁধটি বিলীন হওয়ার পথে।

এ অবস্থায় টি-বাঁধটি নদী গর্ভে চলে গেলে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের সহ¯্রাধিক বাড়ি-ঘর ও কয়েকশ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছর প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুড়া গ্রামে তিস্তা নদীর বাঁ-তীর রক্ষায় টি-হেড গ্রোয়েন নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কিছু দিন যেতে না যেতেই টি-বাঁধটির বিভিন্ন অংশে ধ্বস নামে এবং ফাটলের সৃষ্টি হয়।

এসব ধ্বস ও ফাটল মেরামতের নামে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা কখনো জরুরী মেরামতের নামে আবার কখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ঠিকাদারের সাথে যোগসাজোস করে দ্বায়সাড়া ভাবে কাজ করে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ফলে টি-বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত অবস্থার পরিবর্তে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থেকে যায়।

এদিকে গত বছর বন্যায় তিস্তা নদীর ¯্রােতের তোড়ে টি-বাঁধটির মাথার অংশের ১৩৪ মিটার নদীগর্ভে চলে যায়। সেসময় পাউবো জরুরী কাজের নামে এলাকার মানুষকে অন্ধকারে রেখে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামমাত্র কাজ করে চলে যান। শুষ্ক মৌসুমে টি-বাঁধটি সংস্কারের উপযুক্ত সময় থাকলেও পাউবোর খামখেয়ালীপনায় তা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারো বাঁধটির টি-পার্টের উজানের বেল মাউথ অর্থাৎ টি-হেডে পানির তীব্র ¯্রােতে প্রায় ৫০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জরুরী পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রাম পাউবো টি-বাঁধটি রক্ষায় হাসিবুল হাসান নামের রংপুরস্থ একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিক্ষেপের জন্য নিযুক্ত করে।

অভিযোগ রয়েছে, হাসিবুল হাসান নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জরুরী কাজের নির্দেশ পেয়ে নিজে কাজ না করে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় ব্যক্তিকে দিয়ে টি-বাঁধের অদূরেই ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন শুরু করে।

এভাবে অপরিকল্পিত ভাবে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করার ফলে টি-বাঁধ রক্ষার পরিবর্তে তা যেকোন মহুর্তে নদী গর্ভে চলে যাবে বলে স্থানীয় মানুষজন আশংকা করছে।
 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কুড়িগ্রাম পাউবোর প্রকৌশলীদের খামখেয়ালীপনা ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে মাত্র তিন বছরের মাথায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টি-বাঁধটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এবারো কাজের শুরুতেই বাঁেধর অদূরেই ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলতে থাকায় খোঁদ টি-বাঁধটি আরো হুমকির মুখে পরেছে।

সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দা নূর আমিন, সহিদুর রহমান ও ইব্রাহীমসহ অনেকে সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সরকার ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে টি-বাঁধটি নির্মাণ করল। কাজের শুরুতেই নানা অনিয়ম করার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে টি-বাঁধের বিভিন্ন অংশ নদীতে ধ্বসে যায়। কিন্তু পাউবো অস্থায়ী প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এঅবস্থায় টি-বাঁধটি নদী গর্ভে চলে গেলে পাশ্ববর্তি গ্রামের শত-শত বাড়ি-ঘর ও আবাদি জমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদসহ নানা স্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে।

এ ব্যাপরে হাসিবুল হাসান নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নিয়ে।

এদিকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বাম তীর রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (গ্রোয়েন) নির্মাণ করা হয়। পানি বৃদ্ধির কারণে তলদেশের মাটি সরে গিয়ে গ্রোয়েনটিও যেকোন মহুর্তে ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম পাউবো জরুরী গ্রোয়েনটি রক্ষায় ধীর গতিতে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ রেজাউল করিম আমিন বলেন, গ্রোয়েনটি রক্ষার ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা কোন গুরুত্ব দেয় না।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, টি-বাঁধের কাছা-কাছি ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। নদীর তীব্র ¯্রােতের কারণে দুর থেকে বালু তুলে বহন করে আনা সমস্যা হওয়ায় ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।

এবিএন/আব্দুল মালেক/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ