আজকের শিরোনাম :

বদলগাছীতে অসহায় বৃদ্ধকে দোকান করে দিলেন ইউএনও

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২০, ১৩:৫৯

নওগাঁর বদলগাছীতে বেতনের টাকা দিয়ে বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিনকে মুদি দোকান করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেন ইউএনও মো.আবু তাহির। মঙ্গলবার বিকেলে প্রায় দশ হাজার টাকার মালামাল কিনে ওই বৃদ্ধর দোকান সাজিয়ে দেয়া হয়।

বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ইউএনওর এমন ব্যক্তিক্রম ও মহৎ উদ্যোগেকে প্রশংসা করছেন এলাকাবাসী।

জানাগেছে, এক সময় গাছের ব্যবসা করতেন বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন। প্রায় ৩০ বছর গাছের ব্যবসা করেছেন। হার্টের অসুস্থায় তিনি গাছের ব্যবসা বাদ দিয়ে গত ১৬ বছর আগে বাড়িতে দোকান দেন। এক সময় দোকানে বেশ ভাল বেঁচাকেনা হতো। বাড়ি ছাড়া তার জমিজমা কিছুই নেই। দোকানের উপর চলত তার সংসার। কিন্তু বাড়ি থেকে একটু দুরে বদলগাছী-আক্কেলপুর সড়কের আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বাজার গড়ে উঠায় তার বেঁচাকেনায় ভাটা পড়ে। এতে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় দোকান। ফলে তার জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়ে পড়ে।

ইউনিয়ন পরিষদের পাশে রাস্তার জমিতে গত কয়েকদিন আগে একটি ছোট টিনের ঘর দিয়ে চায়ের দোকান শুরু করার প্রস্তুতি নেয়া হলে বাঁধাগস্ত করে স্থানীয় কয়েকজন। এরপর তারা দোকান ঘরটি ভেঁঙ্গে সরিয়ে দেয়। বৃদ্ধ কোন কুলকিনারা না পেয়ে গত ২৮ জুন ইউএনও’র শরনাপর্ন হন এবং বিষয়টি অবগত করেন। ইউএনও তাকে একটি দোকান তৈরী করে দিতে আশ্বস্থ করেন।

হঠাৎ করে দুপুরে তার দোকানের সামনে গাড়ী থেকে মালামাল (বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, কয়েক প্রকার শ্যাস্পু, সাবান, চিপস, কয়েল, ব্রাশ, ব্লেড, হুইল পাউডার ও স্যালাইন) নামিয়ে দিয়ে বলা হয় এগুলো আপনার। দোকান সাজানোর পর তিনি স্ত্রী আবেদা বেগমকে নিয়ে বেঁচাকেনা করছেন।

স্থানীয় জুয়েল ও আলমসহ কয়েকজন বলেন, বৃদ্ধটি খুবই অসহায়। এক সময় দোকান দিয়ে সংসার চললেও তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে শুনলাম ইউএনও স্যার বেতনের টাকা থেকে টাকা দিয়ে বৃদ্ধ চাচাকে দোকান করে দিয়েছেন। অনেকের ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চলে। সমাজের বৃত্তবানরা যদি এসব অসহায়দের সহযোগীতা করে তাহলে তাদের কর্মসংস্থান হতো।

বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন বলেন, তার ছয় ছেলেমেয়ে। ছেলেদের আলাদা সংসার। এক মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়ার পর তার সাথেই থাকে। স্ত্রী, মেয়ে ও এইচএসসি শির্ক্ষাথী নাতনীসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। তিনি ছেলেদের উপর নির্ভরশীল হতে চান না। যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন নিজেই পরিশ্রম করে বাঁচতে চান। ইউএনও স্যার না থাকলে হয়ত এখানে আমার দোকান করা সম্ভব হতো না। আমার দোকান পর্যন্ত স্যার মালামাল নিয়ে আসায় আমিতো আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছি। স্যারের জন্য অনেক দোয়া রইল তিনি যেন সুস্থ সবল থাকতে পারেন। স্যারের মানবতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তাহির বলেন, তিনি (মোসলেম উদ্দিন) ভিক্ষাবৃত্ত না করে সম্মানের সহিত বাঁচতে চাইছিলেন। দোকান স্থাপন করার কোন জায়গা পাচ্ছিলেন না।

বিষয়টি জানার পর রাস্তার পাশে তাকে দোকান ঘর তৈরী করতে সাহায্য করা হয়। তিনি যেন সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস ও বাঁচতে পারেন এজন্য আমার তরফ থেকে ক্ষুদ্র একটা উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে তিনি দোকান পরিচালনা করে পরিবারসহ বাঁকী জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন।

এবিএন/হাফিজার রহমান/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ