সুন্দরবনে পথ হারিয়ে ১৮ ঘণ্টা পার করলো ছয় কিশোর
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২০, ২০:৫৪
সুন্দরবনে পথ হারিয়ে ১৮ ঘণ্টা পার করে অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় ফিরে এলো শরণখোলার ছয় কিশোর। কাউকে না জানিয়ে বনে ঘুরতে গিয়ে পথ হারায় তারা।
করোনার ফলে সুন্দরবনে এ সময়ে কোন পর্যটক না থাকায় তারা বনে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার সকালে বাগেরহাটের শরণখোলার উপজেলার ওই ছয় কিশোর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকার মধ্যে গিয়ে গহীন বনে পথ হারিয়ে ফেলে।
সন্ধ্যা নেমে আসতেই শুরু হয় টানা দমকা বাতাস সাথে ভারি বৃষ্টি। একদিকে তখন হিংস্র বাঘ ও কিং কোবরার ভয়ে বৃষ্টিতে উবুথবু হয়ে ওই ছয় কিশোর প্রাণে বাঁচতে গাছের ডালে ওঠে বলে জানায়। সময় বাড়তে থাকলে ক্ষুধায় কাতর হয়ে ফিরে আসার উপায় খুঁজতে থাকে। এসময় তাদের ভেতরে জয় খলিফা নামের একজন পুলিশের ৯৯৯ এ মোবাইল করে সুন্দরবনে তাদের পথ হারিয়ে যাবার কথা জানায়।
ফোন পেয়ে সাথে সাথেই শরণখোলা থানা পুলিশকে সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ছয় কিশোরকে উদ্ধার করতে বলা হয়। এরপর রাতেই শুরু হয় পুলিশের উদ্ধার অভিযান। পুলিশ প্রায় ১৮ ঘণ্টা পার হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে তাদের খুঁজে পেয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় লোকালয়ে।
তাদের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলার উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামে। সুন্দরবন দেখতে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন রাজাপুর এলাকা থেকে বনবিভাগের চোখ ফাকি দিয়ে বনে ঢুকে পড়ে বলে জানিয়েছে তারা। উদ্ধার হওয়া কিশোররা হল, দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ইসাহাক খলিফার ছেলে জয় খলিফা (১৬), ফারুক খলিফার ছেলে সাইমুন (১৬), শহিদুল খলিফার ছেলে জুবায়ের (১৭) ও মাইনুল ইসলাম (১৯), জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আ. রহিম (১৭) ও রায়েন্দা বাজারের জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে ইমরান (১৯)।
শরণখোলা থানা পুলিশ জানায়, বুধবার সকাল ১০টায় ওই ছয় কিশোর রাজাপুর এলাকা থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর তারা দিক হারিয়ে বনের গহীনে চলে যায়। পথ খুঁজে না পেয়ে সন্ধ্যা হলে তারা বনের বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেয়। কিশোরদের মধ্যে রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী জয় খলিফা বুদ্ধি খাটিয়ে তার মোবাইল থেকে ৯৯৯ এ ফোন করে বনে হারিয়ে যাওয়া এবং উদ্ধারের জন্য সহায়তা চায়। এই তথ্য পেয়ে শরণখোলা থানা ও ধানসাগর নৌ-পুলিশ বনরক্ষী ও স্থানীয়দের নিয়ে সুন্দরবনে তল্লাশি চালায়।
তারা মাইকিং করে কিশোরদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে ভোর ৪ টায় সময় তাদের উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ। এই ছয় কিশোর লোকালয় থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার সুন্দরবনের গহীনে ঢুকে পড়েছিল বলে পুলিশ জানায়।
মো. জয় খলিফা জানায়, তারা সামান্য পানি ও চিপস নিয়ে বন দেখতে যায়। কিন্তু তারা পথ ভুলে যাবে তা বুঝতে পারেনি। খাবার-পানি শেষ হলে তারা ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা নেমে আসতেই প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়। তখন তাদের মধ্যে বাঘ ও সাপের ভয় আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই গাছের ডালে আশ্রয় নিয়ে ভিজতে থাকে। এরই মধ্যে তার মনে পড়ে ৯৯৯ এর কথা। তখন সে ফোন করে সহযোগীতা চায়।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ জানান, প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর তাদেরকে সুন্দরবন থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি আমরা। সময় মতো উদ্ধার করতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। দুপুরে সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে।
এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি
এই বিভাগের আরো সংবাদ