আজকের শিরোনাম :

বরগুনায় কিশোরকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২০, ১৭:১২

বরগুনার সদর উপজেলায় পায়রা নদীর তীরে ঈদে বেড়াতে গিয়ে কিশোরদের হামলায় এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে।

সোমবার (২৫ মে) বিকেলে উপজেলার গোলবুনিয়া পর্যটন এলাকায় পায়রা নদীর তীরে তার উপর হামলা করা হয়। গুরুতর আহত হৃদয় (১৫) বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৬ মে)  ভোরে মারা যায়।

হৃদয় বরগুনা পৌর শহরের চরকলোনী চাঁদশী সড়কের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। সে বরগুনা টেক্সটাইল ও ভোকেশনালে ইনস্টিটিউটে ১০ম শ্রেণিতে পড়তো।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ের ব্লক ইয়ার্ডে শতশত তরুণ-তরুণী ঘুরতে যায়। ওইদিন বিকেলে হৃদয়ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিয়ে গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ারডে ঘুরতে যায়। এসময় হৃদয়ের এক বান্ধবীর সাথে দেখা হলে তার সাথে কথা বলে হৃদয়। তখন হৃদয় এবং তার বান্ধবীকে নিয়ে স্থানীয় নয়ন ও তার সহযোগীরা বাজে মন্তব্য করায় এর প্রতিবাদ করে হৃদয়। এর কিছুক্ষণ পরেই উত্যক্তকারী নয়ন, হেলাল, আবীর, তনিক এবং নোমানসহ তাদের সহযোগীরা লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের উপর হামলা চালায়। এসময় হৃদয় দৌঁড়ে বাঁচতে চাইলেও তাকে তাড়া করে তাকে পেটাতে থাকে নয়ন, হেলাল, এবং নোমানসহ তাদের সহযোগীরা। এক পর্যায়ে লাঠির প্রচন্ড আঘাতে ঢলে পড়ে হৃদয়।

এরপর সাথে সাথে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরগুনা সরদর হাসপাতালে আনা হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বরিশাল শেরই বাংলা হাসপাতালে আজ সকালে হৃদয়ের মৃত্যু হয়। হুদয় এ বছর টেক্সটাইল ভোকেশনাল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা দরিদ্র দেলোয়ার হোসেন একজন রিকশাচালক। তারা বরগুনার চরকলোনি এলাকার চাঁদশী সড়কের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ডে শহর থেকে তরুণ-তরুনীরা ঘুরতে গেলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক কাজিসহ তার ভাই কনু কাজির ছেলে নোমান, স্থানীয় আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল, লিটন হাওলাদারের ছেলে নয়নসহ আবীর এবং তনিক ও তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে অনেক অপিরিচত ছেলেমেয়েদের অপমান করতো।  এরই ধারাবাহিকতায় হৃদয় হত্যার ঘটনা ঘটে বলেও তিনি জানান।

হৃদয়ের বন্ধু মিঠুন রায় জানায়, হৃদয়সহ তারা সাতজন বন্ধু ঈদের দিন বিকেলে  পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া ব্লোক ইয়ারডে ঘুরতে যায়। এসময় হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের এক বান্ধবীর দেখা হয়। এসময় হৃদয় তার ওই বান্ধবীর সাথে কথা বলতে থাকে। সেসময় নয়ন, হেলাল এবং নোমানসহ তাদের সহযোগীরা তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার কিছুক্ষণ পরেই তারা ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের উপর আঘাত হানতে থাকে। এসময় হৃদয়ের বন্ধুরা বাঁধা দিতে গেলে তাদের উপরেও হামলা চালায় ওই সন্ত্রাসীবাহিনী। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হৃদয়কে ফেলে পালিয়ে যায় তাঁরা। 
      
হৃদয়ের অপর এক বন্ধু ফেরদৌস মোল্লা জানান, হামলাকারীদের সবাইকে আমরা চিনি না। তবে অনেক বয়স্ক লোকজনকেও এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে। ফেরদৌস মোল্লা আরও জানায়, হৃদয় অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা একটি অটো রিকশায় করে তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মোবাইলফোনে কথা বললে হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম জানান, হৃদয় তাদের একমাত্র ছেলে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন তারা কী নিয়ে বাঁচবেন বলে আহাজারি করছিলেন তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন তাঁর বাবার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় হৃদয়ের হত্যাকারীদের মধ্যে আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল মৃধাদের সাথে তাদের আগে থেকেই বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জের ধরেই হেলালের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে তিনি জানান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল শেরই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাশের মযনা তদন্তের পর হৃদয়ের মরদেহ বরগুনা নিয়ে আসা হবে। হৃদয়ের বাবা-মা এখনও বরগুনায় ফিরে না আসায় এ ঘটনায এখনও কোনও মামলা হয়নি। তবে বরগুনা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন জানান, অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ