করোনা মহামারীতে তিতাসবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে ‘তিতাস ভাই’ উপাধি পেলেন উপজেলা চেয়ারম্যান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২০, ২০:৪০
করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে তিতাসবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে ‘তিতাস ভাই’ উপাধি পেলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. পারভেজ হোসেন সরকার। তিনি তার ছোট ছোট দুই শিশু পুত্রকে তাহার আদর থেকে দূরে ঢাকায় রেখে এবং বড় ভাইয়ের মৃত্যুর শোক ভূলে গিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে তিতাসবাসীকে সচেতন করার লক্ষ্যে এবং করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্মহীনদের মাঝে সরকারি ও বেসরকারী মানবিক সহায়তা পৌছে দিতে দুই মাস ধরে প্রচন্ড তাপদহ ও ঝর বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিতাসের প্রতিটি গ্রাম এবং বিভিন্ন হাঁটবাজার চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. পারভেজ হোসেন সরকার।
তার এই নিরলস কর্মপরিধি দিয়ে তিতাসবাসীর নিকট যেমন প্রশংসনীয় হয়েছেন তেমনি করে পারভেজ হোসেন সরকার একজন ‘তিতাস ভাই’ হিসেবে উপাধিও পেয়েছেন।
পারভেজ হোসেন সরকারকে ‘তিতাস ভাই’ উপাধি দিয়ে উপজেলার বাতাকান্দি বাজার শাখা জনতা ব্যাংকের ম্যাজোর মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাহার এই স্ট্যাটাসটি দেশ বিদেশে থেকে কয়েক হাজার আইডিতে শেয়ার করে ভাইরাল হয়েছে। পারভেজ হোসেন সরকার ‘তিতাস ভাই’ উপাধি এখন টক অফ দ্যা তিতাস। নিচে হুবহু মোহাম্মদ জসিম উদ্দীনের স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো।
তিনি একজন নেতা। অনেক দিন হলো নিজ এলাকায় অনুপস্থিত। জনগণের মাঝে কানাঘুষা আছে, তবে কোনো প্রকার অভিযোগ নেই। অনেকের সাথে কথা বলে বুঝা গেলো, তার প্রতি জনগণের ভালবাসারও কমতি নেই। চাকরীর সুবাদে এই এলাকায় এসেছি মাস কয়েক হলো। এই সময়ে এই নেতাকে দেখার কখনো সুযোগ হয়নি আমার।
সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি এলাকায় ফিরেছেন। সাথে সিকিউরিটি, গানম্যান। কৌতূহল বেড়ে গেল। কোনো নেতা এভাবে নিজের এলাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে? তাহলে তার দ্বারা জনগণের কী উপকার হবে? কীভাবে কাজ করবে সে ? এ কেমন নেতা! নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে অবলোকন করলাম বেশির ভাগ জনগণ তাকেই ভোট দিচ্ছে। কেনো দিচ্ছে? তাও বুঝলাম না। এক সময় সব কিছু পরিষ্কার হলো। উক্ত নির্বাচনটি ভোট গণনার পূর্বেই স্থগিত করা হলো। জাতীয় দৈনিক এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ায়গুলোতে ফলোআপ করে এই নির্বাচন বাতিলের খবর প্রচার হলো। ব্যাখ্যা করা হলো নির্বাচন স্থগিতের কারণ। যা সমগ্র জাতি দেখেছে, আমিও দেখেছি। ঠিক এই সময় বুঝা গেল তিনি কেনো এলাকায় সিকিউরিটি নিয়ে চলাফেরা করতেন।
তিতাসের জনগণের কাছে বিষয়টি আগে থেকে ক্লিয়ার বিধায় তারা উক্ত নেতাকে দূরে থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসতেন। তারপরও আমার কাছে বিষয়টিতে ধোঁয়াশা রয়ে গেল! নেতা থাকবে জনতার কাছাকাছি। তাদের প্রয়োজনে, দুঃখ দুর্দশায় এগিয়ে যাবে এমনটাই হওয়া উচিত। এই নেতার ক্ষেত্রে তেমনটি দেখছিলাম না। অবশেষে বাতিল হওয়া নির্বাচনের পুনরায় তফসিল ঘোষণা হল। আইনি জটিলতায় বিপক্ষের প্রধান প্রার্থী ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারলেন না। অন্যান্য প্রার্থীরা তাকে সমর্থন করে বসে গেলেন। ফলে, তিনি দ্বিতীয় বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন। আমার কাছে বিষয়টি সাদামাটাই মনে হলো। আপন খালাতো বোন এমপি থাকলে এমনটি অনেকের বেলাই ঘটতে পারে। ঢাকার পাখি আবার ঢাকায় চলে যাবে! ওনার ব্যাপারে আমার আর তেমন কোন আগ্রহ নেই....কিন্তু করোনার সময়টিতে এসে তিনি রীতি মত অবাক করে দিলেন। মার্চ মাসের শুরুর দিকে, দেশে সবে মাত্র করোনার আবির্ভাব ঘটেছে। এই নেতা তিতাসের জনগ কে সচেতন করতে মাঠে-ঘাটে দৌড়ঝাপ শুরু করলেন। স্ত্রী সন্তান, অসুস্থ ভাই, সবাইকে ঢাকায় রেখে সোজা চলে এলেন জনতার কাছে। রাত দিন ব্যয় করলেন জনগণের কল্যাণে।
প্রথমত ব্যাপক সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। তারপর শুরু করলেন লকডাউন কার্যক্রম। লকডাউনে আটকে পড়া অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়ে স্থাপন করলেন অনন্য নজির। সরকারি সাহায্যের জন্য অপেক্ষা না করে এই নেতা নিজ উদ্যোগে এবং স্থানীয় বিত্তশালীদের সমন্বয়ে জনগণের মাঝে যে পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করলেন, তা হিসেব করলে দেশের সমস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে জনগণের সাহায্য প্রাপ্তিতে তিতাস প্রথম হবে। অতঃপর সুষ্ঠভাবে সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা। উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, পুলিশ এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিম। সার্বক্ষণিক এই টিম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন করোনার বিরুদ্ধে। এরি মাঝে তার বড় ভাই মৃত্য শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। রাখতে হলো আইসিইউতে। পরিবারের সবাই ঢাকায়, কিন্তু তিনি জনগণের কথা ভেবে একদিনের জন্যও এলাকা ত্যাগ করলেন না। এমনকি ভাইয়ের মৃত্যু দিনও না! ভাইয়ের জানাযা শেষে আবার বেড়িয়ে পড়লেন তিতাসের অলিগলিতে। আমার ভুল ভাংতে শুরু করলো। এক সময় তিতাসে করোনা রোগী শনাক্ত হলো। একে একে বেশ কয়েক জন। তারা সবাই ঢাকা অথবা নারায়নগঞ্জ থেকে পালিয়ে আসা। এই নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তিতাসে এই ভাইরাস ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারেনি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন সবাই সুস্থ আছেন,ভালে আছেন।দেশে এখনো করোনার প্রদুর্ভাব কমেনী। তাই তিনিও থেমে যাননী। অবিরত চলেছেন জনগণের সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়ে। একজন নেতা এমনই হওয়ার কথা। সর্বশেষ ঈদকে সামনে রেখে তিতাস উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নে প্রায় নয় হাজার বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের জুন মাস পর্যন্ত অগ্রীম সরকারি ভাতা পেতে তিনি যেভাবে সাহায্য করলেন, এটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ভাতার টাকা বিতরণে কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান এভাবে সংশ্লিষ্ট হয় কিনা আমার জানা নেই। আমি সত্যিই মূগ্ধ। গত দুই মাসে এই নেতাকে বেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম, তিনি আসলে সাধারণ মানুষের অতি ক্ষুদ্র সমস্যাটি নিয়েও অসাধারণ চিন্তা করেন। অসাধরণ তার বোধশক্তি। কোমল একটি হৃদয় নিয়ে রাজনীতি করেন এই নেতা। জনগণের দুর্দিনে, দুর্দশায় সত্যিকার অর্থেই পাশে থাকার চেষ্টা করেন। করোনার দিনগুলোতে তিতাসের প্রায় প্রতিটি পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি। নিজের ভাইকে হারিয়ে তিতাসবাসীকে আগলে রেখেছেন ভাইয়ের মতো করে। সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসার নতুন এক বন্ধন। ফলে, তিনি নিজে হয়ে উঠেছেন তিতাসবাসীর ভাই।
এবিএন/কবির হোসেন/গালিব/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ