আজকের শিরোনাম :

বেড়ায় জনগণের বাধায় পিছু হটতে বাধ্য হলো বালুখেকোরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২০, ১৮:২৭

করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে অঘোষিত লকডাউনে জনগণ আতঙ্কে দিশেহারা, দেশ স্থবির হয়ে পড়লেও পাবনার বেড়ায় বালুখেকোরা থেমে নেই। তারা লোলুপ থাবা বসিয়েছে বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের হুড়াসাগর যমুনার মিলনস্থলে একমাত্র গ্রাম চরপেচাকোলার সংলগ্ন যমুনা নদীতে। 

শনিবার সকালে অবৈধ বালু উত্তোলন কারিদের প্রতিহত করতে গ্রামের কয়েকশ’ নারী-পুরুষ লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করলে অল্পের জন্য প্রাণ বাঁচিয়ে চলে যেতে সক্ষম হয় বালুখেকোরা। পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। 

আঞ্চলিক ক্ষমতার সুবিধা থাকায় বিগত ১০ বছর ধরে এই পেচাকোলা গ্রাম সংলগ্ন যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে বালুখেকোরা। আর ধীরে ধীরে গ্রামটি মুছে যাচ্ছে বেড়া উপজেলার মানচিত্র থেকে। যমুনার ভাঙনে গ্রামটির ৭৫ ভাগ ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষা মৌসমে জিওজুট বস্তা ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে কোনোভাবে গ্রামের শেষ অস্তিত্বটুকু বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 


গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে চলা যমুনা নদী বর্ষা মৌসুমে প্রমত্ত হয়ে উঠলেও শুষ্ক এ মৌসুমে শান্ত বয়ে চলা এক নদীর ধারা মাত্র। এলাকার জনগণের অনুরোধ ও বাঁধা দেওয়া সত্ত্বেও বালুখেকোরা স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার ও ভলগেটর দিয়ে এ নদী থেকে প্রায় সারা বছর  অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে। এভাবে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে গ্রামটিতে ভাঙন শুরু হয়। প্রতি বছর গ্রামটি একটু একটু করে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে একটি জনপদ। 

যমুনা নদীর এই এলাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে বালু উত্তোলনে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও কোনো কর্ণপাত নেই বালুখেকোদের। প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দ করে পুড়িয়ে দেওয়া, বালু শ্রমিক আটক করে অর্থ জরিমানা ও জেলহাজতে প্রেরণ করার মত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা তাদের বালু চুরি বন্ধ না করে বরং ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে যায়। কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা যমুনা ও যমুনা সংলগ্ন হুড়াসাগর থেকে বালু উত্তোলন। 

বালু উত্তোলন রোধে  স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও গ্রামের মানুষ একাধিকবার নিষেধ ও অনুরোধ করা সত্ত্বে¡ও গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এরা বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। বালু উত্তোলনকারীরা উপজেলা সদর এলাকায় হওয়ায় উক্ত চরপেচাকোলা গ্রাম বাসীকে ভয় ভীতি প্রর্দশন করে থাকে। গত কয়েক দিন ধরে চরপেচাকোলা গ্রামের মানুষের মধ্যে চাঁপা অসন্তোষ বাড়তে থাকে। শনিবার সকালে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে থাকা বালু শ্রমিকদের চরপেচাকোল সহ গ্রামের পার্শ্ববর্তী শাহজাদপুর উপজেলার ভেড়াকোলা, দেওয়ানতারটিয়া ও তারটিয়া গ্রামের কয়েকশ মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে বালু উত্তোলন কারিদের ধাওয়া করলে তারা দ্রুত বালুর নৌকা ও ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে আসে।

পেচাকোলা গ্রামের জনৈক বাসিন্দা বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কে এলাকার অবস্থার বিষয়ে অবগত করলে তিনি বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেন। পরে বেড়া মডেল থানার এসআই মাসুম বিল্লাহ্ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আস্বাস দেন এবং গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। যমুনা পাড়ের গ্রামের মানুষ যমুনা নদী এলাকা থেকে যাতে আর বালু উত্তোলন করতে না পারে সে জন্য সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বালু উত্তোলন প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। 

উল্লেখ, বালু ব্যবসায়ীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু বিক্রি করার জন্য বালুর ঢিবি করে রাখা বালু কয়েক মাস আগে প্রশাসন জব্দ করে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বালু ব্যবসায়ী বলেন, নিলামে বিক্রি হওয়া বালু আমরাই আবার আরেক জনের নামে কিনে নেই। এতে আমাদের কিছু বেশি টাকা খরচ হয়ে গেলেও বালু ব্যবসা আরও ভালোভাবে করে যাচ্ছি।

এবিএন/নির্মল সরকার/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ