আজকের শিরোনাম :

দলীয় কোন্দলে উলিপুরের সাবেক এমপির আত্মহত্যার হুমকি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৫

দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন উলিপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন তালুকদার। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে তাকে আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এ হুমকি দিয়েছেন। প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে আমজাদ হোসেন তালুকদার বলেছেন, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আমার বেঁচে থাকা এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় গ্রুপিং ও ‘স্বার্থপর’ রাজনীতির রোষানলে পড়ার বিষয় তুলে ধরে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে চরম হতাশার কথা বলে আত্মহত্যার হুমকি দেন।

লিখিত বক্তব্যে দল দেশ সেবায় নিজের ভূমিকা তুলে ধরে আমজাদ হোসেন তালুকদার বলেন, আমি আওয়ামী লীগ দলীয় একজন সাবেক সংসদ সদস্য। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন আমি এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং মুজিবনগর সরকারের পলিটিক্যাল সুপারভাইজার ছিলাম। এরপর হতাশা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও আমাকেসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিয়ত অবমূল্যয়ন করা হচ্ছে।দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সাবেক এই এমপি অভিযোগ করেন, বিগত জাতীয় সংসদ নিবার্চনের পর থেকে কিছু আওয়ামী লীগ নেতার কারণে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে বাদ দিয়ে, বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতার বিপক্ষের লোকজনকে সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

বর্ষীয়ান এ নেতা আরো বলেন, ২৭ বছর উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করেছি। সেই দুঃসময়ের নেতাদেরও আমার মতো কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। ১৯৯১ সালে রংপুর অঞ্চলের একমাত্র নৌকার প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র বসন্তের কোকিল হয়ে দলটাকে গ্রাস করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন আরো বলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে যিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হয়ে হেরে গিয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ছবি তোলেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আর এই সমস্ত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিরা বিভিন্ন জাতীয় ও দলীয় অনুষ্ঠানে এসে কৌশলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমজাদ হোসেন তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, ১৯৬৭ সালে আমরা কয়েকজন ছাত্র মিলে ছোট আকারে উলিপুরে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করি। এখন সে ইতিহাসও বিকৃত করা হচ্ছে। এটা জাতির জন্য লজ্জার।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই এমপি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সোলায়মান সরদার বাদশার চিঠি না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম। উপরের নির্দেশে চিঠি দেয়া হয় না বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলি, সিনিয়র সহ-সভাপতি সোলায়মান সরদার বাদশা, যুবলীগ নেতা প্রভাষক মিঠু দেব, উমর আলী মুন্সী প্রমুখ।

ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে যারা সংশ্লিষ্ট শুধু তাদেরই চিঠি দেয়া হয়। তবে এসব জাতীয় অনুষ্ঠানে সকলের আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু বললেন, সাবেক এমপি নিজেই আওয়ামী লীগ বিরোধী, বার বার উনার ছেলেকে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে এখানে নৌকার ভিত নড়বড়ে করেছেন।


এবিএন/আব্দুল মালেক/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ