আজকের শিরোনাম :

পেকুয়ায় বর নিহতের ঘটনায় গণপিটুনিতে দুই ডাকাত নিহত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:৫৪

বিয়ের ৪৮ ঘন্টার মাথায় বাসর রাতেই ডাকাতের গুলিতে বর নিহত হওয়ার পরদিন বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে খুনসহ ডাকাতিতে জড়িত দুই ডাকাত নিহত হয়। আহত হয় বরের মা- ভাই ও ডাকাত দলের আরেক সদস্য। কক্সবাজারের পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়নের সাপেরগারায় গতকাল মঙ্গলবার রাত ও আজ বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

ডাকাতের গুলিতে নিহত বর নুরুন্নবী ওই এলাকার হাসান শরীফের ছেলে। ডাকাতের গুলি ও কোপে আহত হয় নিহত বরের মা হাজেরা খাতুন (৮০) ও তার ভাই মোজাম্মেল (২২)।

গণপিটুনিতে গুরুতর আহত তিন ডাকাতের মধ্যে পেকুয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় শিলখালী ইউনিয়নের উত্তর জোম এলাকার মো.আলমগীর প্রকাশ নাগু মিয়ার ছেলে ডাকাত জামাল উদ্দিন (৩৫) এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় সাপেরগারা এলাকার নাজিম উদ্দীনের ছেলে ডাকাত মো.কায়সার (২৫)। পিটুনিতে গুরুতর আহত নুরুল ইসলামের ছেলে নাসির হোসেন (২৮)কে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান।  

জানা যায়, মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে নুরুন্নবী (৩০)। বিয়ে করতে মাসখানেক আগে ফেরার পর পারিবারিকভাবে কনে দেখে ৯ ফেব্রুয়ারী বিয়ে করেন তিনি। ১১ ফেব্রুয়ারী ছিলো বাসর রাত। সাজানো হচ্ছিল পালংক। কিন্তু তার কয়েক ঘন্টা আগেই সশস্ত্র ডাকাতের গুলিতে নিহত হন প্রবাসী বর নুরুন নবী। গুলি ও কোপে আহত হয় নিহতের মা হাজেরা খাতুন (৮০) ও ছোট ভাই মোজাম্মেল (২২)।

এই হত্যার পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারী বুধবার সকালে এলাকার লোকজন ধাওয়া করে গণপিটুনি দিলে দুই সন্ধিগ্ধ ডাকাত নিহত ও আরো একজন গুরুতর আহত হয়।

নিহত বর নুরুন্নবীর ভাতিজা দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাস খানেক আগে তাঁর চাচা নুরুন্নবী মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন বিয়ে করার লক্ষ্যে। গত ৯ ফেব্রুয়ারী রবিবার তাঁর বিয়ে হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর শশুরবাড়ি থেকে পাঁচজন অতিথি বেড়াতে আসেন। ওই রাতেই ছিলো বর-বধুর বাসর রাত।

নিহতের বড়ভাই ফরিদুল আলম বলেন, সন্ধ্যায় মেহমানদের বিদায় জানিয়ে আমি ঘরে ফিরছিলাম। সে সময় মুখোশ পরিহিত বেশ কয়েকজন যুবক আমাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে। হাত-পা বেঁধে তারা আমাকে উপর্যুপরি মারধর করে মাটিতে ফেলে রাখে। ৮-১০ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল বসতঘরে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়। পরে ডাকাত দলটি বাড়ির পিছনে রান্নাঘরের দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এসময় তাদের প্রতিহত করতে চাইলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ডাকাতরা । এতে আমার ভাই নুরুন্নবী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। গুলি এবং ধারালো অস্ত্রের কোপে মা হাজেরা খাতুন (৮০) ও ছোটভাই মোজাম্মেল (২২) গুরুতর আহত হয়েছেন।

অপরদিকে, বিয়ে বাড়িতে খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের ধরতে পুলিশ অভিযানে ছিলো ঘটনার পর থেকেই। কিন্তু পুলিশের আগেই বুধবার সকালে ডাকাতি ও খুনে জড়িত অভিযোগে এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন তিনজনকে গণপিটুনি দিলে দুইজন নিহত ও একজন আহত হয়।

পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে শিলখালী ইউনিয়নের সাপেরগাড়া এলাকায় প্রবাসী নুরুন্নবীর বাড়িতে হানা দেয় একদল সশস্ত্র লোক। তাঁদের ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারায় মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক নুরুন্নবী। ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত হয় তাঁর ভাই মোজাম্মেল ও মা হাজেরা খাতুন।

আহতরা বেশ কয়েকজন হামলাকারীকে চেনে ফেলেন। তাঁদের কাছ থেকে নাম-পরিচয় জেনে বুধবার সকালে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সাপেরগারা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার পাঁচটি ঘর ঘেরাও করে। সেখান থেকে ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জামাল উদ্দিন, মো.কায়সার ও নাসির হোসেনকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দেয় তাঁরা। এতে পেকুয়া  ও চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় জামাল উদ্দিন ও মো.কায়সার।

পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল আজম বলেন, খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত করতে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।


এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ