আজকের শিরোনাম :

৩ বছরেও শেষ হয়নি আউলিয়াখানা ব্রীজের নির্মাণ কাজ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৫

জলঢাকা (নীলফামারী), ০৪ জুলাই, এবিনিউজ : ঠিকাদারের অবহেলা আর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ৩ বছরেও শেষ হয়নি একটি ব্রীজের নির্মাণের কাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এই নির্মাণ কাজে ধীরগতির ফলে যাত্রীবাহী ও পন্যবাহী গাড়িসহ জনদুর্ভোগের সীমা নেই। আবার যে টুকো কাজ হয়েছে সে কাজের মান নিয়েও দেখা দিয়েছে জনমনে নানান প্রশ্ন।

নীলফামারীর জলঢাকার জনগুরুত্বপূর্ণ আউলিয়া খানা ব্রীজ। যেখানে ১৯৯২ সালের ১লা মার্চে জলঢাকার মধ্যে সর্বকালের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ঘটনাস্থলেই সলিল সমাধি হয়েছিল ২৫ জন ঘরে ফেরা পথযাত্রীর। যারা নিহত হয়েছেন, তারা হলেন, রুহুল আমীন, শরিফুল ইসলাম, মহিউদ্দিন, কাশেম, মোসলেম, শাহাজাহান, মোজাম্মেল, মান্নান মাষ্টার, গোলাপ, আজিজুল, অন্নদা, জবান উদ্দিন, রিপন, মফিজার, মোকছেদ আলী, অখিল, রবিন্দ্র, বেলায়েদ হোসেন, বিরেন্দ্র, ভূপেন, মোফাজ্জল, আনোয়ার হোসেন, শাহিনুর রহমান, আবু বক্কর ও আতাউর রহমান। জানা যায়, ঘটনার দিন রংপুর থেকে ছেড়ে আসা জলঢাকা হয়ে ডিমলাগামী যাত্রীবাহী বাসে দিনের কাজকর্ম শেষে বাস ভর্তি যাত্রীরা ঘরে ফিরছিলেন তাদের আপনজনের কাছে।

কিন্ত, নিয়তির নিষ্ঠুর আঘাতে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ঝড়ে যায় ওই ২৫টি প্রাণ। ব্রীজটি ঝুকিপূর্ন থাকায় বাইপাস সড়ক বেয়ে ভাগ্যাহত যাত্রীবাহী বাসটি যখন রাস্তায় উঠতে ছিল, তখন গাড়িটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় গাড়িটি পাল্টি খেয়ে ব্রীজের নিচে আউলিয়াখানা লোহার কুড়ায় ৪০ ফুট গভীরে পানিতে ডুবে যায়। তবে ভাগ্যাক্রমে ডুবে যাওয়া বাসটি থেকে অনেক যাত্রী কোনভাবে বের হয়ে সাতার দিয়ে রক্ষা পেলেও বের হতে পারেনি প্রাণহারা ওই ২৫ জন। রাতভর ডুবুরী তাদের লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনার পরদিন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একটি ক্রেন নিয়ে এলে বাসটি ওই কুড়া থেকে উঠানো হয়। সেদিন এক হৃদয় বিদারক মমস্পর্শী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ঘটনাস্থলের চারপাশে সমবেত ছিল স্বজন হারানো হাজার হাজার মানুষ। বুকফাটা আর্তনাদ এবং আহাজারীতে জলঢাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল সেদিন। এ দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও বিবিসি সহ ভয়েস অব আমেরিকা থেকে প্রচারিত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের দুঃখ ছিল একটাই এতো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলেও সেই সময় সরকারের কোন এমপি বা মন্ত্রীরা কেউ আসেনি ঘটনা স্হল। দাঁড়ায়নি শোকাহত মানুষগুলোর পাশে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হয়নি কোন ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা। বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে শোকাহত সেদিনের কথা। জলঢাকাবাসি এখনও ভূলতে পারেনি সে ঘটনাকে। শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে ওইসব যাত্রীদের। যাদের যাত্রা শেষ হয়েছিল আউলিয়াখানা লোহার কুড়ায়। সমবেদনা জানায় শোকাহত পরিবারের সদস্যবর্গকে যারা এখনো নীরবে ফেলেন চোখের জ্বল। আর যাতে এমন দুর্ঘটনায় কোন মায়ের কোল খালি না হয়, সে জন্য জলঢাকাবাসির প্রানের দাবি পুরণে ঝুকিপূর্ন বেইলী ব্রীজটি ভেঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্রীজ নির্মাণ কাজের বরাদ্ধ করান নীলফামারী - ৩ আসনের এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। কিন্তু, ঠিকাদারের গাফিলতির করণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জনসাধারণ সহ জলঢাকা, ডোমার, ডিমলা ও দেবীগঞ্জ,পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওগামী শত-শত যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক এবং পথচারীরা।

গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ব্রীজটির নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পান মেসার্স শাহজাহান কনষ্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যবধি সম্পন্ন হয়নি ব্রীজটির নির্মাণ কাজ। ডোমার,ডিমলা,দেবীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও,পঞ্চগড় থেকে রংপুর ও ঢাকা যাতায়াতের একমাত্র এ রাস্তাটির উপর অস্থায়ী বেইলীব্রীজ নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বেইলীব্রীজটির উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার গাড়ী যাতায়াত করে আসছে এবং প্রতি বছর বর্ষার সময় এই বেইলীব্রীজটি ভেঙ্গে যায়।

ফলে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই বিকল্প রাস্তা হিসাবে তিস্তার মেইন ক্যানেল হয়ে হাসপাতাল ও উপজেলা পরিষদের সামন দিয়ে গাড়ীগুলো যাতায়াত করছে। ফলে নষ্ট হয়ে জ্বলাবদ্ধতা হচ্ছে ওই রাস্তাটি। শুধু তাই নয়, জলঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

ব্রীজের ওপারে বসবাসরত পশ্চিম বালাগ্রাম দোলঢিপি পাড়ার বিধূ চন্দ্র, ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক ও তহিদুল ইসলাম বলেন, কন্ট্রাকটার প্রতিবছর বর্ষার সময় কাজ শুরু করেন এবং খরার সময় কোন কাজ করেন না। হামার যাতায়াতের খুব সমস্যা হয়।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহরাব হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে লোকেশন খারাপ হওয়ার কারনে ব্রীজের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে তাই নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি বেলাল হোসেন।

জনগনের দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, অতিদ্রুত ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

নীলফামারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম হামিদুর রহমান জানান, কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছি। ৩০ জুনের মধ্যে তিনি ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করলেও তা সন্ভব হয়নি।

এবিএন/মোঃ হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ