আজকের শিরোনাম :

বোয়ালখালীতে খালে বাঁধ: কৃষকদের মাথায় হাত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:৫৪

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে কালভার্ট নির্মাণের জন্য একটি খালে বাঁধ দেওয়ায় প্রায় ৫শত কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ৬টি সেচ স্কীম। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে প্রায় উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের ৪শত একর জমি বোরো আবাদ। একই সাথে বোরোর বীজতলায় চারা উৎপাদন করে তা মাঠে মেরে ফেলতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে ওই এলাকায় বোরো চাষ না হলে প্রায় ২ কোটি ৮লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ধানের ন্যায মূল্য না পাওয়া, চাষের ব্যয় ও মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। এরমধ্যে শুধুমাত্র খালে বাঁধ দিয়ে সৃষ্ট সেচ সংকটে চাষ দিতে না পারায় চাষাবাদ থেকে চিরতরে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বোরো মৌসুমে অনাবাদি থাকা প্রায় ৪শত একর জমিতে ৮শত মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস। এতো বড় অংকের ধান উৎপাদনে চাষ না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিরাট প্রভাব ফেলবে এবার। এদিকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকার কেজি প্রতি ২৬টাকা ধরে ধান ক্রয় করছেন কৃষকদের কাছ থেকে। সে হিসেব মতে উৎপাদিত ৮শত মেট্রিক টন ধানের মূল্য প্রায় ২ কোটি ৮লাখ টাকা।

জানা গেছে, উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের হক খালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীনে নন্দী পাড়ায় যাতায়াতের জন্য কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। গত এক মাস আগে এই কালভার্ট নির্মাণ কাজের জন্য খালে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনো কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই বাঁধের ফলে ওই এলাকার নাগাডা বিল, আডর বিল ও পূর্বে বিলের ৬টি সেচ স্কীম বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে প্রায় ৫শত কৃষকের জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

কৃষকরা জানান, উপজেলার ভারাম্বা খাল থেকে হক খালটি বৈদানি খালে এসে মিশেছে। বাঁধের ফলে খালের দুই পাশের জমিতে চাষের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করলেও জমিতে এখনো চাষ দিতে পারেননি তারা। বোরো চাষের উপযুক্ত সময় পেড়িয়ে যেতে বসেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা।

এ ঘটনা জানতে পেরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি আসন্ন উপজেলার সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করার কথা জানিয়েছেন কৃষকদের।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীনে হক খালে কালভার্ট নির্মাণের কাজ পেয়েছেন এসকে ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী মো. জুয়েল বলেন, গত দুইমাস আগে ট্রেন্ডারের মাধ্যমে এই কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় এসকে ট্রেডার্স। কিন্তু কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয় গত দুই সপ্তাহ আগে। এরই মধ্যে খালে বাঁধ তৈরির কাজও শেষ করা হয়। তবে কালভার্ট নির্মাণ সামগ্রী আনা নেওয়ার জন্য পথ না থাকায় বিকল্প পথ তৈরি করতে সময় গেছে। এরপরও দ্রুত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা জানালেন তিনি।

আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল দে জানান, প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নন্দীপাড়ায় যাতায়াতের জন্য এ কালর্ভাটটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নন্দীপাড়ায় প্রায় ১৪ পরিবারের বসবাস।

এদিকে স্কীম ম্যানেজাররা সেচ মৌসুমে কৃষকদের চাষের জন্য পানি দিতে না পারায় তাদেরও লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। তারা জানান, শুধুমাত্র পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে এতগুলো কৃষি চাষে নির্ভরশীল পরিবার এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

স্কীম ম্যানেজার প্রদীপ চৌধুরী ৭২ একর , কৃষ্ণপদ দাশ ২৮ একর, শুভধন চৌধুরী ৪০ একর, এসএম বাবর ৬৮ একর, আবদুর রহীম ৪৮ একর ও দীপক দে ৬দশমিক ৮একর জমিতে বোরো মৌসুমে সেচ দিতেন বলে জানান। তবে খালের বাঁধের কারণে এবার তা বন্ধ রয়েছে।

সেচ স্কীম ম্যানেজার দীপক দে বলেন, প্রায় ৮০ কেজি ধানের বীজতলা তৈরি করেছি। সময় মতো পানির দিতে না পাড়ায় তা শুকিয়ে লাল হয়ে গেছে। চাষবাদ না হওয়ায় এসব চারা বীজতলাতে মেরে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ বলেন, কৃষকদের চাষবাদে ধরে রাখতে সরকার বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনাসহ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। কৃষিকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন চিন্তা করা যায় না। এ অবস্থায় যদি এমন ঘটনার সৃষ্টি হয় তা মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আশা করি সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে তারা দ্রুত কাজ করবেন।


এবিএন/রাজু দে/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ