আজকের শিরোনাম :

শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত জলঢাকার কৃষকেরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:০২

উত্তরের হীম শীতল হাওয়া সেই সঙ্গে হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেই বোরো ধান রোপণেব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নীলফামারীর জলঢাকা   উপজেলার কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে  জমিতে চলছে বোরো ধানের চারা রোপণের  কাজ।

প্রচণ্ড শীতে বীজতলা তৈরি করা থেকে শুরু করে চারা রোপণ করা পর্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটে কৃষকদের। তাদের নানান সমস্যা থাকার পরেও ধানের চারা রোপণের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন কৃষকেরা। এখন গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণের কাজ চলছে। কোনো জমিতে চলছে চাষ, বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে বীজ, চলছে রোপণ, সব মিলিয়ে জমিতে জোরেশোরে চলছে বোরো রোপনের আবাদ।

কৃষকেরা বলছেন, এক ফসল বিক্রি করে অন্য ফসল আবাদ করা হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বাজারে এখন ধানের দাম কম। অন্যদিকে আবাদের উপকরণের দাম বেশী। ফলে কৃষকেরা নিজেরাও আবাদের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। যেকারণে অনেকেই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করছেন না।

জলঢাকায় সবচেয়ে বিপাকে আছেন জমি বর্গা নেওয়া কৃষকেরা। আবাদ যাই হোক, আর ধান উৎপাদন যাই হোক নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান মালিককে দিতে হবে। নইলে জমি হাতছাড়া হবে বর্গাচাষিদের হাত থেকে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথা বলে এমন কথা জানা গেছে।

কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল  গ্রামের বর্গাচাষি ফুলচাদ জানান, গত বছর তিনি চার বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। এবার করছেন তিন বিঘা জমিতে। এর মধ্যে নিজের রয়েছে একবিঘা। আর বাকিটা জমি মালিকের। জমি তৈরি হয়ে গেছে। দু’এক দিনের মধ্যে বীজ রোপণ করবেন।

তিনি আরো জানান, মূলত বাজারে ধানের দাম না থাকার কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। যতদিন যাচ্ছে আবাদ খরচও বেড়ে যাচ্ছে। গত বছর বিঘা প্রতি আবাদে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এবার ৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ কারনে কারণে শ্রমিকের মজুরি ৩৫০ টাকার উপরে দিতে হচ্ছে। ড্যাপ বস্তা প্রতি ৮০০ টাকা। আমদানি কম হলে দাম বেড়ে যাবে। ইউরিয়া সার বস্তা প্রতি ৮০০, এমওপি ৭২০ টাকা, এর পরেও অন্যান্য খরচ আছে। এবছর শুধুমাত্র ডিএপি সারের দাম কমেছে। বাকি সারগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এই সারগুলোর দাম কমলে উৎপাদন খরচ কমতো।

ডাউয়াবারী ইউনিয়ের নেকবক্ত গ্রামের কৃষক সালাম জানান, এবছর তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। গত বছর করেছিলেন ছয় বিঘা। মূলত ধানের দাম না থাকার কারণে আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে ধানের দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা মণ বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের এমন দামে আবাদ করলে চাষাবাদের খরচও উঠবে না বরং ঋণের বোঝা বাড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ মোঃ মাহফুজুল হক জানান, চার-পাঁচ বছর থেকে বোরো ধানের আবাদ ক্রমশই কম হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ অন্যান্য মৌসুমের ফসলের তুলনায় এই ধানে অধিক পরিমাণে সেচ দিতে হয়। আর সেচ দেয়ার জন্য গভীর নলকূপের উপর ভরসা করতে হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি অধিক পরিমাণে উত্তোলনের কারণে পানির স্তরও নীচে নেমে যাচ্ছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বোরো আবাদ কমিয়ে দিতে হবে। আর বাড়াতে হবে আমন, আউশ, গম, আলুর আবাদ।এতে করে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। অন্যদিকে লোডশেডিংও কম হবে।

তিনি আরো জানান, এবছর বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৫০ জমিতে। চলতি সপ্তাহ থেকে ধানের বীজ রোপণের কাজ শুরু হয়েছে, চলবে ফেব্রুয়ারি শেষ সময় পর্যন্ত। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


এবিএন/হাসানুজ্জামানসিদ্দিকী/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ