স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবাদে ৯৯৯ নম্বরে কল, ভুক্তভোগী নারীই গ্রেপ্তার!
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:২৬
স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার এক নারী ৯৯৯ নম্বরে সহযোগিতার জন্য ফোন দেন। কিন্তু সহযোগিতা না করে উল্টো তাকেই গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে রেখেছেন ওসি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বেগুননগর গ্রামের আব্দুল করিম মাস্টারের ছেলে নাসিমুল হুদার বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে।
স্বামী নাসিমুল হুদা নাশকতা মামলায় অভিযুক্ত আসামি এবং শিবির নেতা। আর ওসি জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওই শিবির নেতারই বাড়ি পাহারা দিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিবির নেতা নাসিমুল হুদা শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শনিবার ছিল বৌভাতের অনুষ্ঠান। বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম স্ত্রী আফরোজা বেগম বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে স্বামী নাসিমের বাড়িতে আসেন। এই নিয়ে প্রতিবাদের এক পর্যায়ে নাসিমসহ তার বাড়ির লোকজন বেধড়ক পেটায় আফরোজাকে। জীবন বাঁচাতে এক পর্যায়ে সহযোগিতার আশায় ৯৯৯ নম্বরে কল দেন আফরোজা। পরে সেখানে অবস্থানরত ওসি জসিম উদ্দিন ৯৯৯ থেকে রিপ্লাই পেয়ে আফরোজাকে গ্রেপ্তার করে গোমস্তাপুর থানায় নিয়ে এসে থানা কারাগারে আটকে রাখেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বেলা সাড়ে ১০টা থেকে নারী পুলিশসহ ৪ থেকে ৫ জন পুলিশ সঙ্গে নিয়ে বিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন ওসি জসিম উদ্দিন।
জানা গেছে, নাসিম একজন সক্রিয় শিবির নেতা। তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ নাশকতার মামলা রয়েছে। স্থানীয় একটি বিলে মাছ চাষের ঘটনার বিবাদকে কেন্দ্র করে নাসিমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে ওসি জসিম উদ্দিনের। দ্বিতীয় বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে সেই আশঙ্কায় সকাল থেকে গোমস্তাপুর থানার ওসি জসিম উদ্দিন কয়েকজন পুলিশ নিয়ে বন্ধু নাসিমের বাড়িতে অবস্থান নেন।
আফরোজা বেগমের বড় বোন ও ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪ সালের ৩১ মে নাসিমের সঙ্গে বিয়ে হয় আমার ছোট বোন আফরোজার। এরপর থেকে তাকে নির্যাতন শুরু করে নাসিম। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের মে মাসে আমার বোনকে তালাক দেয় নাসিম। পরে নাসিমের বিরুদ্ধে মামলাও করে আমার বোন। মামলা থেকে বাঁচতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে আবার আমার ছোট বোন আফরোজাকে পুনরায় বিয়ে করে নাসিম। এরপর কোনো কিছু না জানিয়ে গোপনে শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় বিয়ে করে নাসিম। বিষয়টি জানতে পেরে আমার বোন ছুটে যায় তার শ্বশুর বাড়িতে। সেখানে তাকে একা পেয়ে পুলিশের সামনে বেধড়ক মারধর করে নাসিম ও তার পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে সে ৯৯৯ নম্বরে সহযোগিতা চেয়ে ফোন দিলে উল্টো ওসি জসিম উদ্দিন তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে থানায় আটকে রাখে। ভুক্তভোগী হয়ে পুলিশের সাহায্য চাইতে গিয়ে উল্টো আমার বোনকে থানা হাজতে আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ওসি সাহেব থানায় নিয়ে এসে আমার আহত বোনকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে উল্টো মানসিক নির্যাতন করে আটকে রেখেছেন। তার মোবাইলে থাকা প্রমাণগুলো মুছে ফেলতে তার মোবাইল ফোনের মাইক্রোচিপটিও নিয়ে নিয়েছেন।
আফরোজার স্বামী নাসিমুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আফরোজা নামে একজন নারী একাই আমার বাড়ির সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ কারণে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। আপনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। আমি ব্যস্ত আছি, আর কোনো কথা বলতে পারব না।
ওসি কেন আপনার বাড়িতে অবস্থান করছিল এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন নাসিম।
গোমস্তাপুর থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, নাসিম ভাই আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল তাই আমি দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। সেই মহিলা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করছিল তাই ৯৯৯ থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়ায় নারী পুলিশ দিয়ে তাকে থানায় নিয়ে এসেছি। বাদী অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একজন চিহ্নিত নাশকতা মামলায় অভিযুক্ত আসামি ও শিবিরকর্মীর বাড়িতে সকাল থেকে অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি আমার বন্ধু, থানার সামনে তার বাড়ি, মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি, আমাকে দাওয়াত দিয়েছে। আমি সেই দাওয়াত রক্ষা করেছি মাত্র, সেটি কি আমার অপরাধ বলেন?
যে নারী ৯৯৯ নম্বরে সহযোগিতার জন্য ফোন দিল তাকেই কেন উল্টো ধরে নিয়ে আসলেন- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওসি জসিম উদ্দিন।
এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি
এই বিভাগের আরো সংবাদ