আজকের শিরোনাম :

সাপাহারে জবই বিল এখন পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১১:১৮ | আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১১:১৯

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার জবই বিলের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন তরুণ-তরুণী। তাঁদের চোখের সামনে হাজারো বালিহাঁস ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে। তাঁদের চোখে-মুখে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে দেখা গেল। সাপাহার সদর থেকে থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে জবই বিল এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেল। 

জানা গেল, গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নানা জাতের পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর হতে থাকে বিলটি। সাইবেরিয়াসহ পৃথিবীর শীতপ্রধান এলাকা থেকে আসা বালিহাঁসের ঝাঁক উড়তে দেখা গেল আকাশজুড়ে। পাখির কলরবে মুখর চারপাশ। জলাশয়ে খাবারের খোঁজে বিচরণ করছে শত শত পাখি। জলাশয়ে তো রয়েছেই, আশপাশের কৃষিজমিতে বিভিন্ন ফসলের খেত, গাছের ডালপালা-শাখা-সর্বত্র এই পাখিদের বিচরণ।

স্থানীয়রা জানান, পাঁচ-ছয় বছর ধরে জায়গাটিতে পরিযায়ী পাখি আসছে। বেশ কয়েক প্রজাতির পাখির মধ্যে হাঁসজাতীয় পাখির সংখ্যাই বেশি। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও দেশি জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নিহাঁস, বক পাখি বিল এলাকা মুখর করে রেখেছে।

সাব্বির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী এসেছিলেন পাখি দেখতে সেই সাথে ছবি তুলতে। সাব্বির বলেন, ‘নিজের এলাকায় পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম দেখে অনেক গর্ব হয়। দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে আসে পাখি দেখতে। সময় পেলেই ছুটে আসি। এখানে এসে হাজারো পাখির বিচরণ দেখে মন উৎফুল্ল হয়ে যায়।’ 
সাপাহার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা শিরন্টি ইউনিয়নে অবস্থিত এই বিল। জবই বিলের জলমহালের আয়তন ৪০৩ হেক্টর। জবই বিলঘেঁষা গ্রাম কলমুডাঙ্গা সহ কয়েকটি গ্রাম। 

এই গ্রামের কয়েকজনেরর সাথে কথা হলে তারা জানান, পাখিরা জলাশয় ছাড়াও গ্রামের গাছের ডালপালা, বাড়ির ছাঁদসহ বিভিন্ন জায়গায় ওড়াউড়ি করে। গাছের ফল খেয়ে ফেলে। এরপরও গ্রামের মানুষ পাখিদের কোনো সমস্যা করে না।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোহানুর রহমান সবুজের নেতৃত্বে জবই বিল ঘিরে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের সচেতন কয়েকজন তরুণ-তরুণীসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গগণদের নিয়ে জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ নামের একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির সভাপতি করা হয় সোহানুর রহমান সবুজকে। শিকারিরা যেন পাখি শিকার করতে না পারেন, সেদিকে নজরদারি করেন ওই কমিটির সদস্যরা। পরবর্তীতে ওই কমিটির সদস্যরা কয়েকজন পাখি শিকারিকে হাতেনাতে ধরে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়। প্রশাসন ওই পাখি শিকারিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানাসহ সতর্ক করে দেয় যেন ভবিষ্যতে পাখি শিকার আর না করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কল্যাণ চৌধুরী।

জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ বলেন, শুরুতে এলাকার কিছু মানুষ জবই বিলে আসা পাখিদের অবাধে শিকার করতেন। কিন্তু সচেতন মানুষ একজোট হয়ে এর প্রতিবাদ করায় এবং উপজেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের ফলে এই বিলে পাখি শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পাখিরা বিলটিতে বেশ নিরাপদে আছে। প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে এই বিলে পরিযায়ী পাখি আসছে। শীতের শুরুতে এখানে পাখিরা আসতে শুরু করেছে।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, জলাশয়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের কেউ যাতে শিকার করতে না পারে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নজরে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও সচেতন করা হচ্ছে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে। পাখিদের বিচরণ যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন অত্যন্ত কঠোর। 

তিনি আরো বলেন, বিলপাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য বিলের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়কের দুপাশে বসার স্থান করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি জবই বিলকে একটি পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ভবিষ্যতে এই বিলকে আরও দৃষ্টিনন্দন করা হবে।

বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী পরিযায়ী পাখি হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে বলেও ইউএনও কল্যাণ চৌধুরী বলেন।

এবিএন/নয়ন বাবু/গালিব/জসিম 

এই বিভাগের আরো সংবাদ