আজকের শিরোনাম :

সুনামগঞ্জে জোরপূর্বক জমি দখল করে চলছে পুকুর খননের কাজ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:০৭

বাপ-দাদার আমল থেকে যে জমিতে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ৮ কৃষক পরিবার, সে জমিতে চোখ পড়েছে এক প্রভাবশালীর। জমির বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী ফরিদ পাঠানের দাপটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এমন অভিযোগের কথাই জানালেন, কৃষক পরিবারের সদস্যরা। 

অভিযোগ থেকে জানা যায়, জমির মালিকানা নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের গড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরিদ পাঠানের সাথে বাহাদুরপুর গ্রামের ৮ কৃষকের মামলা চলমান রয়েছে। বিরোধপূর্ণ জমির বিষয়ে উভয়পক্ষের প্রতি আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ থাকলেও জোরপূর্বক এস্কেভেটর দিয়ে জমি কেটে পুকুর তৈরি করছেন ফরিদ পাঠান। চোখের সামনে রাক্ষুসে দানবের মতো এস্কেভেটর জমির মাটি কেটে নিলেও প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না অসহায় কৃষক পরিবারের সদস্যরা। কৃষক পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি তাদের বিভিন্নভাবে হামলা-মামলার হুমকি দিয়ে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। 

গত বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এস্কেভেটর দিয়ে বোরো জমি কেটে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। জমির পাশেই নিরুপায় হয়ে বসে আছেন বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ূম, আবুল হোসেন, মাসুক মিয়া, আলমগীর, আকবর আলী, আমিন উদ্দিন ও কাচা মিয়া। এ সময় তাদের অনেকের চোখ বেয়ে জল পড়ছিল। 

জানা গেল, গত কয়েকদিন ধরেই জমির মাটি কাটছে ফরিদ পাঠানের এস্কেভেটর। আরো জানা যায়, সদর উপজেলার বারঘর মৌজার এস.এ, জে.এল নং ১৪৯, এসএ খতিয়ান নং ১৬৪, ৩২২, ৫৯৮, ৪৪৫ নং খতিয়ানে এস.এ. ১৮৫৬ দাগে ৭ কেদার জরিপ মতে ২.১০ একর জমির মালিকানা নিয়ে ফরিদ পাঠানসহ অন্যান্যদের সাথে ২০০৬ সালে স্বত্বমোকদ্দমা মামলাটি করেন জমির ভোগদখলকারী আবুল হোসেন গং। এই মামলায় ২০১০ সালে আদালত থেকে একতরফা রায় পান আবুল হোসেন গং। পরবর্তীতে জমির মালিকানা দাবি করে ২০১১ সালে আদালতে ছানি মামলা দায়ের করেন ফরিদ পাঠান। যা ২০১২ সালে মঞ্জুরিক্রমে ফরিদ পাঠানকে লিখিত জবাব দাখিলের সুযোগ প্রদান করেন আদালত। পরবর্তীতে ফরিদ পাঠান লিখিত জবাব আদালতে দাখিল করেন। অতঃপর উভয়পক্ষের শুনানী অন্তে ২০১৬ সালে নালিশাভূমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। 

২০১৮ সালে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে বাদীপক্ষের উত্থাপিত কবুলিয়ত মূল্যে নালিশাভূমি আকর্ষণ করে এই মর্মে আবুল হোসেন গংদের পক্ষে রিপোর্ট প্রদান করেন সিভিল কোর্ট কমিশনার। উক্ত কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে ফরিদ পাঠান আপত্তি দাখিল করলে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে রিপোর্টের শুনানী অন্তে কমিশন রিপোর্ট গৃহীত হয়। মামলা আদালতে চলমান থাকলেও আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ অবজ্ঞা করে সম্প্রতি ওই জমিতে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পুকুর করছেন ফরিদ পাঠান। 

এ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণে গত ৮ জানুয়ারি ফরিদ পাঠানসহ ৫ জনকে আসামি করে সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে জমির ভোগদখলকারী কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে জমিটি বৈধভাবে ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু প্রভাবশালী ফরিদ পাঠান ক্রয়সূত্রে ভুয়া মালিকানা দাবি করে আসছেন। 

এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। আদালতে স্থিতাবস্থার আদেশ অমান্য করে ফরিদ পাঠান এস্কেভেটর দিয়ে জমি কেটে পুকুর তৈরি করছেন। আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না। শহর থেকে তিনি লোকজন নিয়ে গ্রামে এসে আমাদের হুমকি দেন। আমরা প্রভাবশালী ফরিদ পাঠানের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতিনিয়ত আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। 

অভিযুক্ত ফরিদ পাঠান আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ অস্বীকার করে বলেন, আদালত স্থিতাবস্থার কোনো আদেশ দেননি। বরং ওরা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বাস্তবিক অর্থে আমি জায়গার প্রকৃত মালিক। মাঠ জরিপে জায়গা আমার নামে আসছে। 

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর থানার এসআই দেবপ্রিয় প-িত বলেন, আমাদের কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলছি।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ