আজকের শিরোনাম :

৭১’এর রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছিফত আলী স্বীকৃতি পেয়েও হারিয়েছেন স্বীকৃতি, বন্ধ সম্মানী ভাতাও

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৫০

৭১ এর রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছিফত আলী স্বীকৃতি পেয়েও হারিয়েছেন স্বীকৃতি, বন্ধ সম্মানী ভাতাও। ৫নং সেক্টরের অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ছিফত আলী যুদ্ধ করেও স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও পাননি স্বীকৃতি। 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাটে জন্মগ্রহণ করা ৭১ রণাঙ্গনের এই যোদ্ধা বয়সের ভারে এখন ন্যুজ¦। কথা বলতে গিয়েও জড়িয়ে যাচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে চলাফেরা করতেও। তবে এসব কষ্ট ছাপিয়ে রয়ে গেছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ার যন্ত্রণা। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ছিফত আলী। এরপর দেশ স্বাধীন হয়েছে, ট্রেনিং আর যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিভিন্ন সনদপত্র দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেয়ে এসেছিলেন। কিন্তু গত দশকে হঠাৎই বদলে যায় দৃশ্যপট। বাদ পড়ে যান মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে। এর পর থেকে যেমন হারিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি! তেমনি , বন্ধ হয়ে গেছে সম্মানী ভাতা টুকুও। এরপর থেকেই লড়াই করছেন যাচ্ছেন তার শেষ সম্ভল টুকু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য। এক অফিস থেকে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন অন্য অফিসে দারেদারে। তবুও মিলছে না সাফল্য, পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। অথচ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ছিফত আলী লাভা ইউথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষক সিক সেনার অধীনে ২২ দিন সফলভাবে ট্রেনিংয়ের পর ৫নং সেক্টরের অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এরপর প্রায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য স্বাধীনতার পরপরই জেনারেল এমএজি ওসমানীর স্বাক্ষর করা সনদপত্র পেয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে চলতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ হারিয়ে ফেলেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, এরপর সকল কাগজপত্র নিয়ে আবেদন করেন তালিকাভুক্তির। কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকার পরেও কাজ হয় না কোন এক অদৃশ্য কারণে, তবুও হাল ছাড়েন না ছিফাত আলী। চালিয়ে যান লড়াই, এখনও চলছে সেই লড়াই। এ লড়াই ছিফাত আলীর জন্য সম্মান আর গর্বের লড়াই। এ স্বীকৃতির লড়াই মৃত্যুর পর গার্ড অফ অনার আর দেশের পতাকা মুড়িয়ে কবরে যাবার নিশ্চয়তার লড়াই। 

ছিফত আলী বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশকে পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু বুক ফেটে এখন কান্না আসে যখন একই সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও আমার সাথের সহযোদ্ধারা আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান-স্বীকৃতি পাচ্ছে অথচ একই সাথে ট্রেনিং করেও আজ আমি এ সম্মান থেকে বঞ্চিত। তাহিরপুর উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাহিদ উদ্দিনকে সাথে নিয়ে অনেকবার সুনামগঞ্জ-ঢাকা দৌড়াদৌড়ি করেও কাঙ্খিত সেই স্বীকৃতি-সম্মান আজও পেলাম না। ২০১৪ সালে গেজেটেড হবার জন্য আবেদনও করেছিলাম। যার ডিজি নং- ডিজি ১২১৭৫১৬। কিন্তু সেই আবেদনের ফলাফল কোন এক অজ্ঞাত কারণে ফাইলেই আটকে রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর এমএজি ওসমানীর সনদপত্র দিয়ে সম্মানী ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। দীর্ঘ ১০/১৫ বছর ধরে ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ রয়েছে। আর এখন কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে হিমশিম খাচ্ছি। পরবর্তীতে ভাতা প্রাপ্তির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হলে আমি সংশ্লিষ্টদের ধারে ধারে ধর্ণা দিচ্ছি ন্যায্য সম্মানীর জন্য। ২০০২ সালের গেজেটের অনুসরণ করে মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি ও সম্মানী ভাতা পেয়ে মরতে চান বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ছিফত আলী। 

মুক্তিযোদ্ধার ছেলে এমরান হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা একজন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও সেই সম্মান-স্বীকৃতি কোনটাই উনার জুটেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিকট আমার ষাটোর্ধ বাবার একটাই নিবেদন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার স্বীকৃতি। যে দেশের মানচিত্রের জন্য আমার বাবা যুদ্ধ করেছেন সেই দেশের মানচিত্রে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আমার বাবার দাফন সম্পন্ন করতে চাই। 

তাহিরপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোজাহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ছিফত আলী একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, আমি সেই শুরু থেকেই বলে আসছি, আমার সহযোদ্ধারাও জানেন উনি যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আর আমি সবসময়ই বলব ছিফত আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি যেন জীবিতকালীন সময়ে পায়।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি এবং সম্মানী বা এ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে সর্বোপরি এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। তবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, প্রশিক্ষণ বা এ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই সাপেক্ষে উনি আবেদন করলে আমরা সেই আবেদনে সুপারিশ করতে পারি। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় এ আবেদন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত  নিবে।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ