আজকের শিরোনাম :

কলাপাড়ায় উন্নয়নে বাধার অপর নাম ‘হঠাৎ গ্রাম’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:২৯

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির মাইল ফলক হিসাবে ইতিমধ্যে স্বীকৃিত পেয়েছে। কতিপয় অসাধু ব্যক্তিরা বাড়তি সুবিধা ও অধিক অর্থ লাভের আশায় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করাতে অধিগ্রহনকৃত জমিতে রাতের আধাঁরে একাধিক ঘর তুলছে বলে জানা যায়।

অবৈধ উদ্দেশ্যে তৈরী ঘরের অধিগ্রহন ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রকল্প পরিচালকদের বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ ও উন্নয়নের কাজের সময় নষ্ট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে (রুরাল পাওয়ার কোম্পানী লি.) আরপিসিএল-এর অধিনে ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়।  

কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন যজ্ঞের মধ্যে রয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দর, ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প ও সাগর কন্যা কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র। এসব উন্নয়ন কাজগুলো করার জন্য জমি অধিগ্রহনের প্রয়োজনে সরকার বাজার মূল্যের চেয়ে দুই-তিনগুন পরিমান বেশি দাম দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করেছে। এরমধ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দর ও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের একটি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষের পথে।

 এসকল জমির মালিককে সরকার বর্তমান বাজার দরের চেয়ে দুই গুন আবার কোথাও কোথাও তিনগুন টাকা পরিশোধ করেছে। অধিকন্তু যাদের বসতবাড়ী অধিগ্রহণের মধ্যে পরেছে তাদের বাড়ী-ঘরের মূল্য পরিশোধসহ থাকার জন্য আবাসনের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের সর্বশেষ সম্বল থাকার বাড়ী-ঘরগুলোও উন্নয়নের স্বার্থে ছেড়ে দিচ্ছে তাই সরকার ফসলি জমির তুলনায় বসতবাড়ী ও ঘরের মূল্য বেশি দিয়েছে।

আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের উন্নয়নের জোয়ার যেখানে এগিয়ে চলছে সেখানে কিছু অতিউৎসাহী ও স্বার্থান্বেসী কিছু মানুষ অধিক লাভের আশায় একাধিক ঘর তুলেছে। যাকে স্থানীয়রা “হঠাৎ গ্রাম” নাম দিয়েছে। এমনকি তারা তাদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঘরের মূল্য পরিশোধ করার জন্য প্রকল্প পরিচালকদের বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ ও উন্নয়ন কাজের বাধার সৃষ্টি করছে বলেও জানা যায়। একারনে উন্নয়ন কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় অধিক সময় অপচয় হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে আরপিসিএল’র অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি প্রজেক্টের জন্য সম্প্রতি জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের খবর শুনে সেখানে একাধিক জায়গায় “হঠাৎ গ্রাম” নামে সহ¯্রাধিক সারিবদ্ধ নতুন ঘর চোখে পরে। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আরপিসিএল পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্থবায়ন করছে।

প্রকল্পটি চায়নার-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন সহিত ৫০:৫০ জয়েন্ট ভেঞ্চার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ধানখালী, লোন্দা ও নিশানবাড়ীয়া মৌজায় ইতোমধ্যে ৯১৫.৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসাবে সরকার দেবে দেড় গুন ও আরপিসিএল কর্তৃপক্ষ সরকারের পক্ষ হতে প্রণোদনা হিসাবে দেড়গুন করে মোট তিনগুন টাকা বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় বেশি প্রদান করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এতে লোন্দা মৌজায় অতিরিক্ত ক্ষতিপূরন পাওয়ার আশায় নিয়ম বর্হিভূত ভাবে ফাকা মাঠে প্রায় ১ হাজার ২শত নতুন ঘর রাতারাতি নির্মান করা হয়েছে। যা একান্তই উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তুলেছে বলে একাধিকসূত্রে জানা যায়। এমনকি অন্য ইউনিয়নের কিছু অসাধু ব্যক্তিরা জমির মালিকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একাধিক ঘড় তুলেছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ফসলি জমির তুলনায় ঘড় ও বাড়ীর মূল্য বেশি পাওয়া যায়। তাই যার যার জমিতে ঘড় তুলে রেখেছি। সরকারের প্রয়োজন হলে আমাদের ঘরের ক্ষতিপূরণ দিয়েই জমি নিতে হবে।

ধানখালী ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আমার এক আত্মীয় আমার জায়গায় ঘর প্রতি ১ লক্ষ টাকা করে মোট ৫ লক্ষ টাকা দেয়ার চুক্তিতে ৫টি ঘড় তুলেছে। সরকারের নিকট হতে ঘর বাবদ যে টাকা পাবে তাতে আমার কোন ভাগ থাকবে না এ চুক্তিতেই ঘরগুলো তোলা হয় বলে তিনি জানান।

এবিষয়ে আরপিসিএল’র নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশলী) মো: সেলিম ভ্্ূঁইয়া জানান, সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আরপিসিএল’র অধিনে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ধানখালী, লোন্দা ও নিশানবাড়ীয়া মৌজায় ইতোমধ্যে ৯১৫.৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। লোন্দা মৌজায় অতিরিক্ত ক্ষতিপূরন পাওয়ার আশায় নিয়ম বহিভূত ভাবে ফাঁকা মাঠে প্রায় ১হাজার ২শত নতুন ঘর রাতারাতি নির্মাণ করা হয়েছে। যা ভূমি অধিগ্রহণ অইনের পরিপন্থী বিধায় ক্ষতিপূরন প্রদানের কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি কতিপয় ব্যক্তি নতুন ঘরের মূল্য পরিশোধের দাবীতে চলমান ভূমি উন্নয়ন কাজ জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কাজ বন্ধ করার ফলশ্রুতিতে প্রকল্পটি সময়মত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় ভূমি মালিক, প্রশাসন ও গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।


এবিএন/তুষার হালদার/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ