দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় : চসিক মেয়র
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:৩৯ | আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:৫০
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার এক ব্যতিক্রমধর্মী সমাবেশের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর হতে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পক্ষকাল ব্যাপি বিশ্বে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কর্মসুচি পালিত হয়ে আসছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের সহয়োগিতায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে সংগঠিত কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (সিডিসি)র নারী নেত্রীগণ সুবিধাভোগী জুমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে সমবেত হতে শুরু করে। এখানে তিল ধরণের ঠাঁই না থাকলেও আয়োজকদের সুশৃংখল ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো।
বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গনে পৌঁছলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাউন ম্যানেজার মো. সারওয়ার হোসেন খান ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর বের হয় বর্ণাঢ্য র্যালি।“নারী পুরুষ সমতা, রুখতে পারে সহিংসতা ” প্লে-কার্ড, ফ্লেষ্টুন, ব্যানারে সজ্জিত র্যলির অগ্রভাগে ছিলেন সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন সহ অন্যান্যরা। সুশৃংখলিত র্যলিটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে জি.ই. সি কনভেনশন সেন্টারে পৌঁছে। এসময় দুর্ঘটনা এড়াতে সিটি মেয়র নিজেই র্যালির শেষ প্রান্তে এসে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহার্য্য করতে দেখা যায়। ‘নারী পুরুষ সমতা রুখতে পারে সহিংসতা’ এ শ্লোগানকে ধারণ করে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন।
তিনি বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। নারীকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা মূলত পুরুষতান্ত্রিক। এ সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষ নারীকে তার সমকক্ষ নয় বরং প্রতিযোগী হিসেবে ভাবে। অন্যদিকে নারীদেরও মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো ঠিকভাবে গড়ে না উঠায় সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে। তিনি এ ধরনের সহিংসতা বন্ধে সকলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। মেয়র বলেন, এ ক্ষেত্রে পুরুষকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। নারীকে নারী কিংবা প্রতিযোগী হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। তাদেরকে নারীর মর্যাদা দিতে হবে। সমাজে পুরুষ তান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক অস্থিরতা, অশিক্ষা কুশিক্ষার বলি হচ্ছে নারী। এ বিষয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। এতে বক্তব্য রাখেন চসিক কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, এলআইইউপিসি’র টাউন ম্যানেজার সরওয়ার হোসেন খান, নারী নেত্রী কৌহিনুর আক্তার, আনোয়ারা আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিক কাউন্সিলর মোরশেদ আলম, সাহেদ ইকবাল বাবু, মোবারক আলী, মো. আবুল হাসেম, মো. শফিউল আলম, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসী, মোছাম্মৎ ফারজানা পারভীন, মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাসেমসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ।
সিটি মেয়র আরো বলেন, ভাগ্যের পরিবর্তন নির্ভর করে নিজের উপর। নিজে পরিকল্পনা গ্রহণ করে সুন্দর ভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সুশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হলে তারা অন্যের প্রতি কুদৃষ্টি বা কুব্যবহার হতে বিরত থাকবে। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, সেখানে সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু নির্যাতন বন্ধ করা শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
মেয়র নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সচেতন হোন, ঐক্যবদ্ধ হোন তাহলে সমাজের আমুল পরিবর্তন হবে। আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ৫ হাজার ৮ শত জন সদস্যদের মাঝে প্রায় ৬ কোটি টাকার অনুদান এবং ১লা জানুয়ারি ২০২০ থেকে ৪১টি ওয়ার্ডে চসিকের পক্ষ থেকে ৪১ হাজার মেয়র হেলথ কার্ড বিতরণ করা হবে বলে ঘোষণা করেন সিটি মেয়র। নগর দারিদ্র বিমোচনে অসামান্য অবদানের জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা ও দারিদ্র বিমোচনে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সিটি কর্র্পোরেশনের পক্ষ থেকে এলআইইউপিসি প্রকল্পকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
এবিএন/জসিম/তোহা
এবিএন/জসিম/তোহা
এই বিভাগের আরো সংবাদ